বাঙ্গালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ আসতে আর বাকি মাত্র ৪৮ ঘন্টা। নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য নানা আয়োজন চলছে ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশে। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ ফানুস। কর্তৃপক্ষের দাবি প্রকাশে নয় গোপনে বিক্রি হচ্ছে। তাই তাদের ধরা যাচ্ছে না।
মূলত ফানুসে বাতিটি প্রজ্বলিত হয় কেরোসিন (জ্বালানি তেল) দ্বারা। আর বেশির ভাগ সময় অনির্বাপিত অবস্থায় জনবহুল মহানগরীর বিভিন্ন জায়গায় পতিত হয়ে থাকে। যা বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড সৃষ্টি করতে সক্ষম।
এই বিষয় বিবেচনা করে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে ডিএমপি কমিশনার মো.আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম এর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, ‘মহানগরীতে ফানুস ওড়ানো অব্যাহত রাখলে যে কোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। এমতাবস্থায় ঢাকা মহানগর এলাকায় যে কোনো ধরনের ফানুস ওড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হলো। আর এর ব্যত্যয় হলে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।
কিন্তু বছর না ঘুরতে না ঘুরতেই ডিএমপির কমিশনারের ঘোষণার কোনো তোয়াক্কা না করেই ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ফানুস। ঢাকার ফার্মাগেট, ধানমন্ডি, গুলশান, পুরান ঢাকার এলাকার বেশ কিছু দোকানে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ ফানুস।
নাম ও পরিচয় না প্রকাশের শর্তে ধানমন্ডির এক দোকান মালিক বলেন, ভাই ক্রেতার চাহিদা যায় তাই আমাদের বিক্রি করতে হবে। আর আমি না বিক্রি করলে অন্য কেউ বিক্রি করবে। আবার দোকানে বিক্রি না হলে অনলাইন শপে কেউ না কেউ বিক্রি করে মুনাফা নিয়ে যাবে। ভাই আমি তো লাভ করতে বসেছি তাই না। তাই বিক্রি করি।
তাঁর কথার সূত্র ধরে বাংলাদেশের ক্রেতাদের জন্য তৈরি একাধিক অনলাইন শপগুলোর ওয়েব পেজে গেলে দেখা যায় আসলেই বিক্রি হচ্ছে ফানুস।
গুলশান-১ নম্বরে ডিএনসিসি মার্কেটে গিয়েও একই চিত্র দেখা যায়। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিক্রি হচ্ছে ফানুস। এসময় ফানুস কিনতে আশা প্রায় ৩৫ ঊর্ধ্বো নারী তরু মাহাবুবের সাথে কথা হয়।
তিনি বলেন, নানা ব্যস্ততার কারণে সেভাবে কোথাও যাওয়া হয় না এখন। তাই পহেলা বৈশাখের দিনটিকে একটু স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই আয়োজন। সেদিন সন্ধ্যায় সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে উড়াব ফানুস।
আপনি কি জানেন ঢাকায় ফানুস উড়ানো নিষিদ্ধ ? এ প্রশ্ন করলে তিনি পাল্টা বিডিমর্নিং এর সাংবাদিকে প্রশ্ন করেন, ‘এই আইন হলো’ ? আমরা তো কিছুদিন আগেও আমার বোনের বিয়েতেও উড়ালাম। কেউ কিছুই বলেনি।
নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব জানান, পুরো শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। যেখানে কেউ নিয়ম নীতি মানছে না। তা ছাড়া বিদ্যুতের খুঁটিগুলোতে ইন্টারনেট ও ক্যাবল অপারেটরদের তার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে । যা কোনোভাবে আগুনের সংস্পর্শে এলে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। তাই ঢাকার আকাশে ফানুস না উড়ানো ভালো।
এ বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো.মাসুদুর রহমান পিপিএম বলেন, প্রকাশ্যে নয় গোপনে বিক্রি হচ্ছে ফানুস। তাই আমাদের একটু বেগ পেতে হচ্ছে। কিন্তু খুব দ্রুততার সাথে আমরা নিশ্চিত করবো যাতে ঢাকায় ফানুস বিক্রি বন্ধ হয়।