Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৩৩ AM
আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৩৩ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রীর হত্যার চেষ্ঠার ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ নুসরাত গত রাতে না ফেরার দেশে চলে গেছে। চিকিৎসকদের প্রাণপণ চেষ্টার পরও লড়াই থেমে গেল নুসরাত জাহান রাফির (১৮)। 

মেয়ের মৃত্যুর পর থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউর বাইরে বসে কাঁদছেন নুসরাতের বাবা মাওলানা এ কে এম মুসা।

কাঁদছেন নুসরাতের বড় ভাই নোমানও। কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। জ্ঞান ফেরার পর আবার কাঁদছেন।

বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সোয়া ১১টার দিকে কান্না ভেজা চোখে নুসরাতের বাবা বলেন, আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন, আপনারা আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন। যেন আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করেন।

এর আগে, বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)।

বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসক অধ্যাপক রায়হানা আউয়াল তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

লাইফ সাপোর্টে যাওয়ার আগেও রাফি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দগ্ধ হওয়ার আগে দুই বান্ধবীর কাছে লেখা চিঠিতে তিনি ঘটনার শেষ দেখার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন।

কিন্তু তার শেষ দেখা হল না। এর আগেই নিভে গেল জীবন প্রদীপ। রাতে তার মরদেহ হিমঘরে রাখা হয়। আজ সকালে ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করবে।

এরপর তাকে নেয়া হবে ফেনীর সোনাগাজীতে। নুসরাতের চাচা নুরুল হুদা শামীম জানান, পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ তাকে দাফন করা হবে। বাদ আসর সোনাগাজী সাবের পাইলট হাইস্কুল মাঠে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব ইমরুল কায়েস গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদও।

মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর ঢামেক বার্ন অ্যান্ড পাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সামনে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন নুসরাত জাহান রাফির স্বজনরা। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তারা। মেয়ের মৃত্যুর খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন রাফির মা শিরিন আক্তার।

জ্ঞান ফেরার পর ‘রাফিরে, আমার মা..রে বলে’ বিলাপ করতে করতে আবারও জ্ঞান হারান। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়।

এদিকে রাত সাড়ে ১১টায় রাফির বাবা একেএম মুসা মানিক ও ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানসহ অন্য স্বজনদের গাড়িতে করে একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

গাড়িতে ওঠার আগে দেশবাসীর কাছে তার মেয়ের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া চান রাফির বাবা।

মেয়ে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। রাতেই খবর পৌঁছায় সোনাগাজীতে। সেখানেও শোকের ছায়া নেমে আসে। গ্রামের বাড়িতে তার কাছের আত্মীয়রা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভিড় বাড়তে থাকে নিকট আত্মীয়দের। সবাই জানতে চান কখন মরদেহ পৌঁছাবে, দাফন হবে কখন ইত্যাদি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি নুসরাতকে আমরা বাঁচাতে পারলাম না। রাফিকে রাতে মর্গে রাখা হবে।

বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর তার মরদেহ ফেনীতে নিয়ে যাওয়া হবে। ডিপ বার্ন হওয়ায় প্রথম থেকেই রাফির বাঁচার সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ। তিনি বলেন, আগুনে তার শরীর পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছিল।

বুধবার সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সামন্ত লাল সেন জানান, রক্ত ও ফুসফুসের মারাত্মক সংক্রমণ থেকে কার্ডিও রেসপিরেটরি ফেইলিয়র (হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ) হয়। এতেই তার মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, ৮০-৮৫ ভাগ বার্ন হওয়া রোগীর বডিতে অনেক রকম সমস্যা হয়। এই রোগীকে বাঁচানো খুব মুশকিল। বুধবার তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। এ ধরনের পেশেন্টের হঠাৎ মৃত্যু হয়। আমরা সিঙ্গাপুরে কথা বলেছিলাম, তারাও বলেছিল চান্স অব সারভাইবেল কম।

নুসরাত জাহান রাফির চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বলেন, রাফিকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আমরা।

বুধবার সকাল থেকে তার অবস্থা অবনতি হতে থাকে। একাধিকবার তার হার্ট অ্যাটাক হয়, তারপরও সে সার্ভাইভ করেছিল। কিন্তু রাত সাড়ে ৯টার দিকে সব শেষ হয়ে যায়। মারা যায় রাফি।

ঢামেক হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, ‘নুসরাতের শরীরের ৮৫ ভাগ মেজর বার্ন। এর মধ্যে ৬০ ভাগ গভীর পোড়া। তার শ্বাসতন্ত্র পোড়া ছিল। কেরোসিন নিজেই টক্সিক। এটা ফুসফুস এবং ব্রেনের কার্যক্ষমতাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। এসব কারণই তার মৃত্যু হয়েছে বলা যায়।’

প্রসঙ্গত, ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওইদিনই অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

Bootstrap Image Preview