Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মুক্তিযোদ্ধার নাতনিকে ধর্ষণ-হত্যা, এক বছরেও আসামিরা আটক হয়নি

আমানুল্লাহ আমান, রাজশাহী থেকে
প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:২৬ PM
আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:২৬ PM

bdmorning Image Preview


'রাজশাহীর বাগমারায় এক মুক্তিযোদ্ধার নাতনি মাবিয়া সুলতানাকে (১৪) ধর্ষণ করে হত্যার এক বছর পরও ধরাছোয়ার বাইরে চার আসামি। পাল্টা হুমকি দিচ্ছে তারা। তিনজন জামিনে বেরিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। অপরএকজন জামিন ছাড়াই ঘুরছেন। ধর্ষণ-হত্যা মামলা দায়ের করা হলেও নেই কোনো অগ্রগতি।

তাদের অভিযোগ, একবছর হয়ে গেলেও এখনো চার্জশিট দাখিল করা হয়নি। গড়িমসি করছে পুলিশ। তাদেরকে (পুলিশ) জানালে বলেন- তারা নাকি আসামিকে খুঁজে পাচ্ছে না। অথচ আসামিরা এলাকাতেই আছেন।

রাজশাহী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন জেলার বাগমারা উপজেলার পানিয়া নরদাশ ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মোঃ সাইফুল ইসলাম।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। কিন্তু উল্টো বিষপানের নাম করে নাটক সাজিয়ে আলামত গোপনের চেষ্টা করে। তবে ফরেনসিক রিপোর্টে চিকিৎসক ভিকটিমের বিষপানের কোনো আলামত পাননি। ধর্ষণ করেই হত্যা করা হয়েছে বলে ফরেনসিক রিপোর্টে বলা হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারি মাসের ঘটনা এটি। মামলা করা হয়েছিল ন্যায়বিচারের আশায়। একবছর পেরিয়ে গেলেও তাদের কোনো আমরা বিচার পাইনি। আসামিরা এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরছে।

এ সময় তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার। ভিকটিম মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য। রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত। তবুও আমরা বিচার পাচ্ছি না। মুক্তিযোদ্ধার নাতনিকে অমানবিকভাবে ধর্ষণ করে শ্বাসরোধে হত্যার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে আমরা তাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানাচ্ছি এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করছি। যাতে এভাবে আর কোনো মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের ওপর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা না ঘটে।

এ পর্যন্ত মামলার কাজে সম্পৃক্ত থাকা ভিকটিমের চাচা কলেজের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ন্যায়বিচারের আশায় আমি একমাত্র মামলা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছি। আমাকেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মামলার বাদি ভিকটিমের মা শিউলি বেগম, ভিকটিমের ভাই নাইম হোসেন, শামিম হোসেন প্রমুখ।

এ সময় তারা অভিযোগ করে বলেন, আমরা ছয়মাস থেকে এলাকা ছাড়া। একটা মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যরা লম্পটদের হুমকিতে ছয়মাস থেকে বাড়িঘর ছেড়ে কষ্টে দিন পার করছে। আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এসে নানারকম হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমরা জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত।

ভিকটিমের ভাই স্কুলছাত্র নাইম হোসেন বলেলে, স্কুল থেকে যাওয়া করার সময় আমাকে ওরা হুমকি দিত। ওরা বলত- 'মামলা করেছিস কিচ্ছু করতে পারবি না। দেখছিস না আমরা বাইরে তোর বোনের খুনি বাইরে ঘুরছি। মামলা তুলে নে।'

মামলার বাদি শিউলি বেগম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমার স্বামী (ভিকটিমের বাবা) একটা নন এমপিও মাদরাসার শিক্ষক। বেতন নাই, আয়-ইনকাম নাই। অভাবে অনাহারে চিন্তা আর পেরেশানিতে দিন কাটছে। আমরা ছয়মাস থেকে এলাকাছাড়া। আমাদের দিকে কি কারো সুনজর আসবে না? কবে ন্যায়বিচার পাব? একটা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ধুকে ধুকে মরছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের জানুয়ারির ২৩ তারিখে বাগমারার সৈয়দা ময়েজ উদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী মাবিয়া সুলতানাকে (১৪) ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। তখনই নিহতের মা শিউলি বেগম চারজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। তিনজনকে আটক করা হলে তারা জামিনে বেরিয়ে যায়। একজন এখনো আটকই হয়নি। হত্যার প্রায় ১৫ মাস হলেও চার্জশিটও দাখিল করেনি পুলিশ।

Bootstrap Image Preview