Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দখলবাজদের দখলে শেরপুরের করতোয়া নদী

সৌরভ অধিকারী শুভ, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ১২:৪৮ PM
আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ১২:৪৮ PM

bdmorning Image Preview


এ যেন দখলের মহোৎসব। যে যেভাবে পারছে দখল করে নিচ্ছে প্রমত্তা করতোয়া নদীকে। গ্রাম আর শহর সবখানেই পাল্লা দিয়ে চলছে দখল। দখল করে কোথাও করা হচ্ছে স্থাপনা, আবার কোথাও করা হচ্ছে আবাদী জমি। 'আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে' কবিগুরুর কবিতার এই কথাগুলোর সাথে বাস্তবতার কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা আর। কারণ নদীগুলো এখন আর নদী নেই। নদীগুলো এখন ছোট খালে পরিনত হয়েছে।   

দখলবাজরা নদী দখল করে কেউবা স্থায়ী স্থাপনা আবার কেউ বা দখল করে মাটি দিয়ে ভরাট করে পুরো আবাদী জমিতে রুপান্তরিত করায় তা নদীর বাকী অংশটুকু খালে পরিনত হয়েছে।

বগুড়ার শেরপুরের এক সময়কার প্রমত্তা করতোয়া আর বাঙ্গালী নদী এখন আর দেখলে নদী মনে হয়না। মনে হয় যেন এটি একটি মরা খাল। চারিদিকে তাকালে মনে হয় এ যেন এক চিরচেনা ফসলের মাঠ। কৃষকরা শুকিয়ে যাওয়া নদীর তলদেশে ধান, ভুট্টা, গম, তিলসহ নানা ধরনের ফসলের চাষ করছে।

বিভিন্ন ইতিহাস থেকে জানা গেছে, স্মরণাতীতকালে খরস্রোতা করতোয়া নদীতে জাহাজ চলাচল করতো। এ কারণে শেরপুরের বারোদুয়ারি হাটের সাথে বিরাট নৌবন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে আজকের এই শেরপুর শহর। তখন নদীটি ছিল প্রশস্ত এবং প্রমত্তা। সময়ের সাথে সাথে কালের গর্ভে বিলীন হয়ে করতোয়া আজ হতে যাচ্ছে ইতিহাস।

১৯৮২ সালে করতোয়া নদীকে খননের মাধ্যমে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহকে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ১৯৯০ পুনরায় নদীটি খনন করা হলেও পরবর্তিতে এই কার্য্যক্রম অব্যাহত না থাকায় বর্তমানে নদীটি মরে ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। করতোয়া নদীটি কল্যাণীতে বাঙ্গালী নদীর সাথে মেশার আগ পর্যন্ত করতোয়া নদীটি এখন নিঃপ্রাণ রেখা। দখলবাজরা একের পর এক এলাকা দখল করে মাটি কেটে ভরাট করায় নদীর অধিকাংশ এলাকা মনে হয় এটি একটি খাল। এই করতোয়া নদী দখল শুধু শহরেই নয়, গ্রামের প্রভাবশালীরাও দখল অব্যাহত রেখেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শেরপুর শহরের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি গ্রামের বিভিন্ন এলাকায়ও এ দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় প্রভাবশালীরা মাটি কেটে জমি আর নদী এক করে ফেলার পাশাপাশি কোথাও কোথাও নদী ভরাট করে ফেলায় তা খালের মত সরু হয়ে গেছে। এভাবে দখল অব্যাহত থাকলে এক সময় করতোয়া নদী চিরতরে হারিয়ে যাবে। তাই এলাকাবাসী দাবি জানিয়েছে দ্রুত দখলবাজদের হাত থেকে নদীটি উদ্ধার করে তার স্বাভাবিক গতিপথ ফিরিয়ে দেয়া হোক।

কুর্নিঘাট এলাকার নজরুল ইসলামসহ একাধিক ব্যাক্তি জানান, করতোয়া নদী যেভাবে দখল হচ্ছে তাতে আর কিছুদিন পরে বর্ষাকাল এলেই সামান্য বৃষ্টিতেই বন্যা দেখা দেবে। কেননা নদীটি ভরাট করে ফেলার কারণে অল্প পানিতেই পাড় উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করবে পানি। 

শেরুয়া গ্রামের কৃষক হবিবর রহমান (৩০) জানান, করতোয় নদীর বুক চিরে জেগে উঠেছে ফসলি জমির মাঠ, কৃষকেরা রাতদিন পরিশ্রম করে সেখানে ফলাচ্ছে সোনালি ফসল। ফলে বর্ষা মৌসুমেও মাত্র কয়েক সপ্তাহ ব্যতীত আর নৌকা চলাচল করতে পারেনা।

এছাড়াও করতোয়া নদীটির বিভিন্ন এলাকা অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে যাওয়ায় নদীটি আরো ক্ষীণ হয়ে গেছে। তাছাড়া করতোয়া নদীর বিভিন্ন এলাকায় হোটেলের বর্জ্য ও ক্ষতিকর পদার্থ ফেললেও সেদিকে কারও নজর নেই। শেরপুরবাসী নদীটি খননের দাবি জানালেও আজও সেই দাবি কার্যকর হয়নি।

অপরদিকে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় তার শ্রেণী পরিবর্তন করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে লীজ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যা নদী দখলের মহোৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। 


 

Bootstrap Image Preview