Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

কপোতাক্ষ খনন প্রকল্পে গাফিলতির কারণে অর্ধকোটি টাকা ভেস্তে যাওয়ার পথে

এসএম বাচ্চু, তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৩:৩৪ PM
আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৩:৩৪ PM

bdmorning Image Preview


তালায় কপোতাক্ষ উপকূলীয় জনপদের স্থায়ী জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কপোতাক্ষ খনন ও এর সফল বাস্তবায়নে পাখিমারা টিআরএম বিল ব্যবস্থপনা এলাকায় নদের উপর ক্রসড্যাম কর্তনের সময় চলে আসলেও এখন পর্যন্ত স্থাপনই করা হয়নি ক্রসড্যাম। এতে করে শুষ্ক মওসুমের জোয়ার বাহিত পলিতে ভরাট হয়ে কপোতাক্ষে তৈরি হয়েছে পূর্বের অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন বর্ষা মওসুমে পানি নিষ্কাশনে ক্রসড্যাম উঠিয়ে দিলে সরকারের প্রায় অর্ধকোটি টাকা ভেস্তে যাওয়ার পাশাপাশি মূল লক্ষ্য হারাবে খনন কার্যক্রম।

ধারণা করা হচ্ছে, প্রকল্পভূক্ত টিআরএম প্রযুক্তিকে ব্যর্থ প্রমাণে পরিকল্পিতভাবে ক্রসড্যাম স্থাপনে কাল ক্ষেপন হচ্ছে।

জানা যায়, কপোতাক্ষ নদের নাব্যতা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানকল্পে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিগত ২০১১ সালে ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পে (১ম পর্যায়)’ মূলতঃ দুটি কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। যার একটি পাখিমারা বিলে টিআরএম স্থাপন এবং অন্যটি ৯০ কিমি. নদী খনন। পলি ব্যবস্থাপনার আওতায় খননকৃত নদী রক্ষার কৌশল হিসেবে টিআরএম চলাকালে মূল নদের উপর ক্রসড্যাম দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে জোয়ারবাহিত পলি উপরাংশে না ঢুকিয়ে টিআরএম বিলে প্রবেশ করানো হয় এবং বর্ষা মৌসুমের শুরুতে পুনরায় ক্রসড্যাম তুলে দেয়া হয়।

প্রকল্পে ২০১৬-২০১৭ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত কপোতাক্ষ অববাহিকায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পায়। নদী রক্ষায় পলি ব্যবস্থাপনার আওতায় ক্রসড্যাম স্থাপন একটি নিয়মিত কার্যক্রম হলেও চলতি বছর পলি মওসুমের অনেক আগেই নদীতে পলির আগমন ঘটেছে এবং প্রচুর পরিমাণে পলি টিআরএম এর উজান অংশে প্রবেশ করে নদীর তলদেশ ভরাট করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এলাকাবাসীর অভিযোগ, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে অর্থাৎ শুষ্ক মওসুমের শুরুর এই সময়ে নদীতে ক্রসড্যাম না দিলে নদীকে রক্ষা করা যাবে না।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে পলিযুক্ত জোয়ারবাহিত প্রতি লিটার পানিতে প্রায় ৬০-৭০ গ্রাম পলি নদীতে অনুপ্রবেশ করছে। ভয়াবহ এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতি দ্রুত ক্রসড্যাম সম্পন্ন করার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে গত ৫ জানুয়ারি ও ১০ মার্চ ২০১৯ তারিখ সংবাদ সম্মেলন এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। তখন পাউবো’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল এ কাজটি খুব দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় যে, এখনও পর্যন্ত তা সম্পন্ন করা হয়নি। ইতোমধ্যে জোয়ারবাহিত আগত প্রচুর পলি নদী বক্ষে পতিত হয়ে নদীর তলদেশ অনেকাংশ ভরাট করে ফেলেছে। অন্যদিকে পানিতে পলির আধিক্যতায় এলাকাবাসীর আশঙ্কা যে, এভাবে পলির অবক্ষেপন ঘটলে নদী এ বছরই মারা যাবে।

উল্লেখ্য যে, গত বছরও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল। জনগণের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত কিছুটা হলেও স্বল্প সময়ের মধ্যে বাঁধ স্থাপন করতে পেরেছিল। নদী রক্ষায় যেহেতু এটা একটা নিয়মিত কার্যক্রম সেহেতু সময়মতো তার বাস্তবায়ন না ঘটলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রায় ২৬২ কোটি টাকার কপোতাক্ষ প্রকল্পের সুফল জনগণ বেশি দিন ভোগ করতে পারবে না বলে এলাকাবাসীর আশংকা। সেজন্য ক্রসড্যাম স্থাপন নিয়ে কোন রকম অবহেলা করা যাবে না। ফলে এ বিষয়টি যাতে নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রমের আওতায় রাখা যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ অতি জরুরী।

ইতোমধ্যে সরকার ২০২১ সাল পর্যন্ত টিআরএম চালু রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অতি দ্রুত কপোতাক্ষ নদের ২য় পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু করা এবং গুরুত্ব প্রদান করে ভবিষ্যতে নদী রক্ষার নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে অর্থাৎ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতি বছর নদীতে ক্রসড্যাম স্থাপনের কাজ সমাপ্ত করা এবং যথাসময়ে তা অপসারণ করার দাবি জানান।

এদিকে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত টিআরএম প্রযুক্তিকে ব্যর্থ প্রমাণিত করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্রসড্যাম দেয়ায় বিলম্ব করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসী মনে করছে। ক্রসড্যাম স্থাপনের ক্ষেত্রে ধীরগতি ও সময়ক্ষেপনে দ্রুত নদী ভরাট ও টিআরএম বিলে পলি ভরাট উভয় ক্ষেত্রে চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।

জানা যায়, ক্লোজার নির্মাণ কাজটি “অনুন্নয় রাজস্ব খাতের আওতায় পাখিমারা টিআরএম বিলের লিংক ক্যানেলের উজানে কপোতাক্ষ নদীতে অস্থায়ীভাবে ক্লোজার নির্মাণ ও অপসারণ কাজ” নামে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্যাকেজ নং ই-টেন্ডার জেএনডিআর ও ওয়ার্ক অর্ডার হয়। মেসার্স মাইশা ট্রেডার্স ৬৪ লাখ ২৬ হাজার ৬২ টাকার কাজটি প্রাপ্ত হন। ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে ২ সপ্তাহ ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ক্লোজার সমাপ্ত করা এবং ২৫ জুন ১৩৫ দিনের মধ্যে অপসারণসহ কাজ সমাপ্তির নির্দেশনা রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ক্লোজার নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও তা তিন মাস পরও নির্মাণ না হওয়ায় এলাকার জনগণ এর কারণ তদন্ত করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান।

এব্যাপারে সাব ঠিকাদার তোজাম আলী জানান, ক্রসড্যাম স্থাপনার কাজ দ্রুত গতিতে চলছিলো। কিন্তু হঠাৎ ঝড় এবং বৃষ্টির ফলে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলাতিতে এমন ঘটনা ঘটেছে। ঠিকাদারা প্রতিষ্ঠানকে ডেকেছি এবং তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হবে। আগামী গোন শেষ হলেই ক্লোজারের কাজ শেষ করতে হবে।

Bootstrap Image Preview