Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলজুড়ে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব

হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০১৯, ১০:২০ AM
আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৯, ১০:২০ AM

bdmorning Image Preview


মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বিভিন্ন পাহাড়িছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকিতে পড়েছে পাকা সড়ক, সেতু, কালভার্ট, আবাদি জমিসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরদারির অভাবে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে।

সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানা গেছে, উপজেলার লাংলিয়া ছড়া, উধনা ছড়া, ডিংডিংগা ছড়া, পুটিয়া ছড়া, ফুলছড়া থেকে ইউসুফ আলী গংরা অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলন করছে।

অন্যদিকে রাধানগর ছড়া, নারায়ণ ছড়া, আলিয়াছড়া, কালাছড়া থেকে বালু উত্তোলন করছেন কমিশনার আলকাস মিয়া গং, সোনাই ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করছেন জমসেদ মিয়া গং। বৌলাছড়া, কালিছড়া, জলমছড়া থেকে বালু তুলছেন জুয়েল মিয়া গং। মোড়াছড়া থেকে বালু তুলছেন জব্বার মিয়া গং বিলাসছড়া থেকে বালু তুলছেন মোশাহিদ মিয়া গং।

এদিকে কেউ কেউ ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলনের শর্ত না মেনে বালু তুলছেন। কেউ বা আবার ইজারা ছাড়াই অবৈধ প্রক্রিয়ায় ম্যানেজ করে মাসের পর মাস প্রতিদিন দৈনিক শ্রমিকদের দিয়ে লাখ লাখ বালু তুলে বিক্রি করছেন।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় একটি সাধারণ বালু ও ২৮টি সিলিকা বালুসহ মোট ২৯টি বালুর মহাল রয়েছে। এর মধ্যে বড়ছড়া, ঝলমছড়া, ভুরভুরিয়াছড়া, জৈনকাছড়া, খাইছড়া, শাওনছড়া, নুলুয়াছড়া, পুটিয়াছড়া, হুগলিছড়া, গান্ধিছড়া ও আমরাইলছড়া বালু মহাল ইজারা দেওয়া হয়নি।

এসব বালু মহাল থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকার বালু দীর্ঘদিন ধরে বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, গান্ধিছড়া, আমরাইলছড়া ও হুগলিয়াছড়াসহ বেশ কয়েকটি ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এর মহোৎসব চলছে।

ফুলছড়াসহ বেশিরভাগ ছড়াতেই মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী এই মহলটি।

লাংলিয়াছড়ায় উজানের দিকে ক্রমাগত বালু উত্তোলনের ফলে এ ছড়ার দুই পাড় ভেঙে ভেঙে পড়ছে। ব্যাপক এলাকাজুড়ে কৃষকের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি লাংলিয়াছড়ার ভাঙনের কবলে পড়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, একটি প্রভাবশালী মহল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব ইজারাবিহীন ছড়া থেকে এ অবৈধ বালু উত্তোলনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করে যাচ্ছেন।

অথচ মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ধারা অনুসারে কোনো চা বাগান অথবা অন্য কোনো স্থাপনার ভেতরে কোনো বালুমহল থাকারই কথা নয়। যেগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছে সেগুলোতেও শর্ত উল্লেখ করা রয়েছে যে, পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে কোনো বালু উত্তোলন করা যাবে না।

স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, বালুর গাড়িগুলো ঘন ঘন যাতায়াতের কারণে সাতগাঁও বাজার- সিন্দুরখান এবং আশিদ্রোন ইউনিয়নের রঘুনাথপুর-বনগাঁওয়ের সদ্য নির্মিত পাকা রাস্তাটি একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে। রাস্তাটির বয়স ৬ মাসও হয়নি। পাঁচ বছরের আগে এ পাকা সড়কটি মেরামতের আর কোনো সুযোগ নেই।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল শাখার প্রকৌশলী সঞ্জয় মোহন সরকার বলেন, বেশ কয়েকটি ব্রিজ আছে বালু তোলার কারেণে নষ্ট হয়ে ধ্বংসের পথে। সিন্দুরখান বাজারে পাঁচ ব্যান্ডের কালভার্ট শুধু মাত্র বালু তোলার কারণে নষ্ট হয়েছে। এ রকমভাবে সিন্দুরখান সড়কের আরেকটি ব্রিজেরও একই অবস্থা। তাছাড়া বিজিবি ক্যাম্পের ভেতরে ব্রিজটিরও বালু তোলার কারণে ধ্বংসের পথে।

বিশেষ করে মতিগঞ্জ এলাকার ব্রাক ফিশারীর রাস্তাটি এবার করা হয়েছে। লাংলিয়া ছড়া নদীর দুপাশে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে রাস্তার দু'পাশ ভেঙে পড়ছে। গোপেন্দ্রগঞ্জ বাজারে ব্রিজটির এপ্রোচে বিশাল গর্ত হয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক চীফ হুইপ জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সম্মানিত সভাপতি উপাধ্যক্ষ মো.আব্দুস শহীদ এমপি মহোদয়ের নামফলকটিও ভেঙে পড়েছে।

প্রকৌশলী সঞ্জয় মোহন সরকার আরো বলেন, বালু তোলার কারণে এধরণের অনেক রাস্তা কালভার্ট ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা চাইব ব্রিজ কালভার্টের এক কিলোমিটার দূরত্বে যাতে বালু তোলা না হয় কিংবা আমাদের যে সব সাব প্রজেক্টগুলো আছে। যেমন সেচ প্রকল্প, রেগুলেটর, লাংলিয়াছড়া রাবারড্যাম, লাংলিয়াছড়া স্লুইস গেইট আশপাশের প্রজেক্ট এলাকায় বালু তোলা উচিত হবে না।

এ প্রসঙ্গে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো.তোফায়েল ইসলাম বলেন, এ বিষয়টি এই মাত্র জানলাম। খোঁজ নিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক্ষেত্রে তাদেরকে কোন ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া ব্রিজের পাশ থেকে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণভাবে বেআইনি।

 

Bootstrap Image Preview