মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো ২৫ মার্চ রাতে শহীদদের স্মরণে পালিত হলো ‘ব্ল্যাক আউট’। রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশের সব আলো নিভিয়ে রেখে শহীদদের স্মরণ করা হয়। সারাদেশের মত সেই ‘ব্ল্যাক আউট’ এ সামিল হলো বিডিমর্নিং নিউজ পোর্টাল।
এক মিনিট অন্ধকারে থেকে অবশেষে আলোকিত হলো বাংলাদেশ। এই ১ মিনিট স্মরণ করা হয়েছে কালরাতে শহীদদের। অন্ধকারেই প্রত্যেকের উপলব্ধি আলাদা। যেন নতুন আলোর সন্ধানে অপেক্ষারত স্বজন হারানো বাংলাদেশ। অপেক্ষা আলোতে মুক্তির। স্বাধীনতাই মেললো মুক্তি।
গত ১১ মার্চ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গণহত্যা দিবসে ১ মিনিট বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখাসহ দুটি দিবস পালনে নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ওই সভার কার্যপত্র পাঠানো হয়েছে।
এক মিনিট ব্ল্যাক আউটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, গণযোগাযোগ অধিদফতর, জেলা প্রশাসক (সকল) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।
এ আয়োজনে কেবল বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ সবরাহ বন্ধ করা হয়নি। এছাড়াও জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ও কেপিআই এই আয়োজনের বাইরে ছিল।
কেন এই আয়োজন?
১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাত আনুমানিক সাড়ে ১১ টা থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যা, যার মধ্যমে তারা ১৯৭১ এর মার্চ ও এর পূর্ববর্তী সময়ে সংঘটিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল। এই গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের আদেশে পরিচালিত, যা ১৯৭০ এর নভেম্বরে সংঘটিত অপারেশন ব্লিটজ এর পরবর্তি অণুষঙ্গ। অপারেশনটির আসল উদ্দেশ্য ছিল ২৬ মার্চ এর মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এর (বর্তমান বাংলাদেশ) সব বড় বড় শহর দখল করে নেয়া এবং রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের ভেতর নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। বাঙালিরা তখন পাল্টা প্রতিরোধ সৃষ্টি করে, যা পাকিস্তানী পরিকল্পনাকারীদের ধারণার বাইরে ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙালির ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞকে স্মরণ করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই কালরাতের সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসকদের আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে আলো নিভিয়ে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উদ্বুদ্ধ করছে মন্ত্রণালয়।
বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কালরাতকে স্মরণ করতে এই কর্মসুচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।একমিনিট আলো বন্ধ রাখার মধ্য দিয়ে এই কালরাতকে স্মরণ করবে মানুষ।যে রাতে অনেক মেধাবি মানুষ হারিয়ে গেছে বাঙালির জীবন থেকে।’ তিনি বলেন, ‘মানুষকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি, তারা নিজস্ব উদ্যোগে সব শহীদের স্মরণে আলো বন্ধ রাখবে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে কোথাও এই কর্মসূচি পালন করা হবে না।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘অন্য যেকোনও দিনের চেয়ে এই দিন শুধু আমাদের কাছেই নয়, বিশ্বের গণহত্যার ইতিহাসে এক অনন্য উদাহরণ ও স্মরণযোগ্য দিন।এক দিনে এত মানুষ হত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালনে সবার সহযোগিতা চান তিনি।’