Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

৫০০ বছরের পুরনো ঘোড়ার হাটে লাখো মানুষের ঢল

নিশাত আনজুমান, আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০১৯, ০৮:২২ PM
আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯, ০৮:২২ PM

bdmorning Image Preview


জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ঐতিহ্যবাহী গোপিনাথপুর মেলায় ঘোড়ার হাট জমে উঠেছে। বিজলি, কিরণ মালা, রানী, সুইটি আরো কত যে বাহারি নাম। ওদের ক্ষিপ্রতা আর বুদ্ধিমত্তায়ও মেলে নামের সার্থকতা। ঘোড়াগুলোর দুলকি চলনে বিদুৎ গতি, চোখের পলকে যেন মাইল পার। এমন নানামুখী গুণের কারণে দেশি-বিদেশি ঘোড়াগুলোর কদরও যথেষ্ট। পছন্দের প্রাণিটিকে পেতে ক্রেতাদের মধ্যে রীতিমতো কাড়াকাড়ি।

আয়োজকরা বলছেন, দেশের একমাত্র ঘোড়া বেচাকেনার হাট এটি। এ কারণে সারাদেশ থেকে আনা কয়েক হাজার ঘোড়া জড়ো করা হয় এখানে। এটিকে ঘোড়ার মিলনমেলা বললেও অত্যুক্তি হবে না।

প্রতিবছর দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে শুরু হয় মাসব্যাপী মেলা। মূল মেলা এক মাস হলেও পশুর মেলা হয় ১০ দিন। ঘোড়া ছাড়াও মহিষ, গরু, ভেড়া ও ছাগল কেনা বেচা হয় এ মেলায়।

ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনাথীদের পদচারণায় এখন মুখর ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথ মেলার ঘোড়ার হাট। দরদাম ঠিকঠাকের পর একটি খেলার মাঠে ঘোড়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ক্রেতাকে দেখানো হয় ঘোড়ার দৌড়।

দোলপূর্ণিমা মেলা কমিটি আয়োজকরা জানান, ৫০০ বছরের পুরনো এ মেলা শুরু থেকেই ঘোড়ার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। স্বাধীনতার পরও মেলায় নেপাল, ভূটান, ভারত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে উন্নত জাতের ঘোড়া আসত। বর্তমানে সেসব এখন স্মৃতির পাতায় হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঘোড় সওয়ারি ও ঘোড়া মালিকরা এ মেলায় ঘোড়া নিয়ে আসেন।

স্থানীয়রা জানায়, এ মেলায় ময়মনসিংহ, জামালপুর টাঙ্গাইল, বগুড়া, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘোড়ার আমদানি হয় এ মেলায়।

সিরাজগঞ্জ সদর থেকে আসা বাসেদ আলী একটি ঘোড়ার দাম হেঁকেছেন ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পরে তা দুই লাখ টাকা বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার চকমরিয়ম গ্রামের আব্দুল খালেক বলেন, তিনি ২৫ বছর ধরে মেলায় ঘোড়া নিয়ে আসতেন এই মেলায়। এবার তিনি চারটি ঘোড়া এনেছিলেন। সবকটি লাখ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।

এবার হাটে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকায় যে ঘোড়াটি বিক্রি হয়েছে তার মালিক হোসেন আলী জানান, ঘোড়াটির বয়স সাড়ে চার বছর। এটি রেসিং ঘোড়া। দ্রুত দৌড়াতে পারে সাদা-কালো ডোরাকাটা ঘোড়াটির যত্ন নিতেন তিনি নিজেই।

বাহারি ঘোড়াটি কিনেছেন রাজশাহীর সেকেন্দার বাদশা নামে এক সৌখিন ঘোর সওয়ারি। নাটোরের কুতুব আলী প্রায় সাড়ে আট ফুট উচ্চতার বড় কালো রঙের এক তাজি ঘোড়া ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করলেন বলে জানান তিনি।

ঘোড় সওয়ারি ও ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, আগেও তাদের বাপ-দাদারা এ মেলায় ঘোড়া কেনা-বেচা করতেন। পূর্বপুরুষের সূত্র ধরে তারাও আগলে রেখেছেন সেই পারিবারিক ঐতিহ্য। আগে ঘোড়ার হাট ও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ঘোর দৌড়ের বিস্তীর্ণ মাঠ থাকলেও বর্তমানে সেই স্থানটি সংকুচিত করা হয়েছে বলে ঘোড়া বেচা-কেনায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

গোপীনাথপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও মেলা কমিটির প্রধান কর্তা আবু সাইদ জোয়ার্দ্দার বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি মেলা কমিটিও সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। এতো বড় পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ মেলা উত্তরবঙ্গের কোথাও নেই বলেও জানান তিনি।

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কিরণ কুমার রায় জানান, মেলা উপলক্ষে বিপুল মানুষের সমাগম হয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি আনসার মোতায়েন রয়েছে।

Bootstrap Image Preview