Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চেয়ারম্যানের জড়িয়ে ধরা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মুখ খুলল সেই মেয়েটি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০১৯, ০৭:৫৯ PM
আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯, ০৭:৫৯ PM

bdmorning Image Preview


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বান্দরবানের আলী কদম উপজেলায় ম্রো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির এক বিধবা নারীকে সেখানকার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের জড়িয়ে ধরার ছবি ভাইরাল হয়ে পড়েছে।

রবিবার বিকেলে ছবিটি শেয়ার দিয়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা চেয়ারম্যানের আচরণ নিয়ে বিরূপ সব মন্তব্য করেছেন। যদিও চেয়ারম্যানের দাবি তিনি ওই নারীকে সান্তনা দিচ্ছিলেন।

বহু মানুষ এসব ছবি শেয়ার করে 'নারীকে যৌন হয়রানি' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু আলোচিত সেই ম্রো তরুণী রুমপাও মুরং বলছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। সংবাদ সম্মেলনে সেই তরুণী জানিয়েছেন, আবেগে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার সময় নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান তাকে জড়িয়ে ধরেন।

রুমপাও মুরং বলেন, 'জনাব আবুল কালাম এর সাথে আমাদের পরিবারের দীর্ঘদিনের একটি সম্পর্ক আছে। আমরা তাকে অসাম্প্রদায়িক ও সৎ চরিত্রবান ব্যক্তি হিসেবে জানি। তার পিতা ও তার মত সকল সম্প্রদায়ের প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। বিজয়ী হওয়ার পর আমরা পাড়াবাসী তাকে আমাদের পাড়ায় সংবর্ধনা প্রদান করি। সংবর্ধনা চলাকালে আমি অন্যান্যদের ন্যায় চেয়ারম্যানকে মাল্যদান করার পর আবেগপ্রবণ হয়ে খুশিতে কান্না করে ফেলি এবং এক পর্যায়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার সময় চেয়ারম্যান মহোদয় আমাকে ধরে ফেলেন। তিনি এমনটা না করলে আমি গুরুতর আহত হতাম।'

'চেয়ারম্যান মহোদয় আমার কান্না থামানোর জন্য আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় আমার পরিবারের সদস্য মা-বাবা ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা দুই শতাধিক লোকজন সংবর্ধনা স্থলে উপস্থিত ছিলেন। চেয়ারম্যান মহোদয়কে আমি ও আমার ভাইয়েরা আপন বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করি এবং তিনি আমাদেরকে ছোট বোনের মত জানেন। তাহার মধ্যে আমি বা আমরা কখনো খারাপ প্রবৃত্তি দেখিনি। তিনি এই ধরনের লোক নন।'

'আমি জানতে পেরেছি উক্ত অনুষ্ঠানে আমার ও চেয়ারম্যান জনাব আবুল কালামের ছবিসহ উক্ত অনুষ্ঠানের কিছু ছবি চেয়ারম্যান মহোদয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের আইডি থেকে পোস্ট করেন। উক্ত ছবিকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের কিছু লোকজন ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্র আমার ছবিগুলো কে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিকৃতভাবে মন্তব্য করেন যা আমার আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। আমি ও আমার পরিবার চেয়ারম্যান মহোদয়কে আমাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে জানি। আমি তার একজন ভক্ত ও বটে।'

'আমার ছবিগুলো ভাইরাল করার পূর্বে অথবা মিডিয়াতে প্রকাশ এর পূর্বে আমার ও আমাদের পরিবারের বক্তব্য নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে একটি সুন্দর ভাতৃত্ববোধকে পুরো পার্বত্য এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে উক্ত ছবিগুলি ভাইরাল করা হয়। সাধারণত ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী এ ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানি সৃষ্টি করে তৃপ্তি পায়। আমি ও আমার পরিবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি এ ধরনের অপপ্রচার যারা করে তারা এলাকার শান্তি চায় না, সহাবস্থান চায় না। আমাকে নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে আমি জানিনা, এটা দুঃখজনক ও মানহানিকর।'

সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে সাংবাদিকরা রুমপাও মুরংকে প্রশ্ন করেন, উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবুল কালামের বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ আছে কিনা। জবাবে রুমপাও মুরং নিশ্চিত করেন যে, তার কোনো অভিযোগ নেই।

গত সপ্তাহে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মো. আবুল কালাম। এরপর ২২ মার্চ স্থানীয় নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মেরিনচর পাড়ায় সংবর্ধনা নিতে যান তিনি। ওই পাড়ায় মূলত ম্রো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের বসবাস।

সংবর্ধনা নিতে গিয়ে জনসম্মুখে আপত্তিকর এক ঘটনা ঘটান আবুল কালাম। আবুল কালাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই ঘটনার কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছে।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ম্রো নৃগোষ্ঠীর এক বিধবা নারীকে জনসম্মুখে জড়িয়ে ধরে ধরেছেন আবুল কালাম। ওই নারীর অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট হয়, এতে খুবই অস্বস্তি বোধ করছেন এবং জোর করে চেয়ারম্যানের হাত থেকে ছুটে যেতে চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে চেয়ারম্যান তাকে জোরপূর্বক ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান আবুল কালাম দাবি করেছেন, সে একজন বিধবা নারী। তাই ওই নারীকে তিনি সান্তনা দিচ্ছিলেন।

এদিকে ফেসবুকে ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই চেয়ারম্যানের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একজন বিধবা নারীকে এভাবে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হেনস্তা করার দায়ে চেয়ারম্যানের বিচার চেয়েছেন অনেকে। ওই নারীর ভাই স্থানীয় এমএনপি কমান্ডারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে চেয়ারম্যান আবুল কালাম ওই পাড়ায় সংবর্ধনা নিতে যান বলে জানা যায়।

ছবিগুলো শেয়ার করে মোহাম্মদ রকি নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মো. আবুল কালাম, একজন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান। বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় সম্প্রতি তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ম্রো আদিবাসীদের পাড়ায় যান সংবর্ধনা নেয়ার জন্য। বান্দরবানের ম্রো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর লোকজন সচরাচর একটু সরল প্রকৃতির। সাদামনের মানুষও বটে, সরল মনে ম্রো আদিবাসীরা খুব সহজে বিশ্বাস করেন। তারা হয়তো এটা জানেন না যে, আবুল কালাম (নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান) ম্রো-দের মতো একজন সরল প্রকৃতির মানুষ নন।

তিনি আরও লিখেছেন, ‘একজন জনপ্রতিনিধি কখনো এভাবে একজন নারীকে জড়িয়ে ধরতে পারেন না ওই নারীর অনুমতি ছাড়া। কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যক্তি ছাড়া কখনো একজন নারীকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ শ্লীলতাহানি ও নারী সমাজকে অবমূল্যায়ন করা।’

আব্দুল্লাহ আল মনছুর নামে একজন ছবিগুলো শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আবুল কালাম, বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও বিএনপির সভাপতি। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ম্রো আদিবাসীদের পাড়ায় যান সংবর্ধনা নেয়ার জন্য। বান্দরবানের ম্রো আদিবাসীর লোকজন একটু সরল প্রকৃতির। সে সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন আবুল কালাম। একজন জনপ্রতিনিধি কখনো এভাবে একজন নারীকে জড়িয়ে ধরতে পারেন না। এটি শ্লীলতাহানি।’

নিপুন ত্রিপুরা নামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একজন ছবিগুলো শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ভোট কারচুপি করে বিজয়ী হওয়া আলীকদমের এই চেয়ারম্যানের নাম আবদুল কালাম। সংবর্ধনা নিতে গিয়ে সহজ সরল ম্রো মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছেন, তার আশপাশের লোকজন হাততালি দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, ‘ওই নারীর ভাই স্থানীয় এমএনপি কমান্ডার। তার সঙ্গে আমার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বন্ধুর মতো। সেই সুবাদে আমি ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। সংবর্ধনা নেয়ার সময় ওই নারী কান্নায় ভেঙে পড়লে আমি তাকে সান্তনা দিচ্ছিলাম, সেখানে আপত্তিকর আচরণের কিছু ছিল না।’

আর ঘটনার স্থানে ওই নারীর বাবা, মা, ভাইসহ পরিবারের সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তেমন কিছু হলে তো সেখানে তারা প্রতিবাদ করতেন।’ এ ব্যাপারে তার পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই বলেও দাবি করেন চেয়ারম্যান।

ওই নারীর অভিব্যক্তিতে অস্বস্তি বোধের বিষয়টি জানালে নবনির্বাচিত এ চেয়ারম্যান বলেন, ‘তিনি কান্নাকাটি করছিলেন, আমি শুধু তাকে সান্তনা দিচ্ছিলাম। আর সেই ছবি আমি নিজেই আমার ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করেছি। তেমন কিছু হলে তো আমি ছবিগুলো শেয়ার দিতাম না।’

Bootstrap Image Preview