Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ মঙ্গলবার, মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ফাঁকা বাড়িতে শিক্ষিকাকে জাপটে ধরলেন অধ্যক্ষ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০১৯, ০৫:৪৩ PM
আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯, ০৫:৪৩ PM

bdmorning Image Preview


রাজশাহীর মহানগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ জহুরুল আলম রিপনের বিরুদ্ধে এবার ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ এনেছেন প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষিকা। ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিলের এ ঘটনায় ওই শিক্ষিকাকে চাকরিচ্যুত করেন অধ্যক্ষ।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে রবিবার (২৪ মার্চ) কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন শিক্ষিকা। একই সঙ্গে চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

ভুক্তভোগী শিক্ষিকা কম্পিউটার প্রদর্শক কাম মেকানিক পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি অধ্যক্ষ জহুরুল আলম রিপনের খালাতো ভাবি। এ কারণে এতদিন মুখ খোলেননি বলে জানান তিনি।

শিক্ষিকার অভিযোগ, অধ্যক্ষ কেবল আমারই নয়, অনেক কোমলমতি ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেছেন। আমি অধ্যক্ষ রিপনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

লিখিত অভিযোগে শিক্ষিকা উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল অধ্যক্ষ তার বাড়িতে আমাকে ল্যাপটপ আনতে পাঠান। সরল বিশ্বাসে গিয়ে দেখি, বাড়ির দরজায় তালা দেয়া। ওই সময় অধ্যক্ষ আমার পেছনে দাঁড়ানো ছিলেন। এ সময় কৌশলে অধ্যক্ষ আমাকে বেডরুমে নিয়ে যান। পরে কুপ্রস্তাব দেন, নানা প্রলোভন দেখান। কিন্তু তাতে রাজি হইনি আমি। ওই সময় ফাঁকা বাড়িতে জাপটে ধরে আমার শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ। ওই সময় কোনোরকমে সেখান থেকে পালিয়ে আসি আমি।

ওই শিক্ষিকার ভাষ্য, অধ্যক্ষের বাড়ি থেকে ফিরেই তৎকালীন প্রভাষক মোকসেদ আলীকে বিষয়টি জানাই। লোকলজ্জায় বিষয়টি অন্য সহকর্মীদের না জানিয়ে বাড়ি ফিরে যাই। ঘটনার পর অধ্যক্ষ আমাকে কলেজে ডেকে উল্টা প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলেন। একই সঙ্গে কলেজে একটি কম্পিউটার প্রদানের শর্ত দেন। কিন্তু কোনো শর্তই আমি মানতে রাজি হইনি। শেষ পর্যন্ত জোর করে আমার পদত্যাগপত্রে সই করিয়ে নেন অধ্যক্ষ।

এর আগে ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নিজ অফিস কক্ষে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ রিপন। বিষয়টি জানাজানি হলে পরদিন থেকেই শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভে নামেন এলাকাবাসী।

এরপর একে একে অধ্যক্ষের কুকর্ম ফাঁস হতে শুরু করে। ঘটনার চারদিনের মাথায় ওই ছাত্রীসহ আরও দুই ছাত্রী এবং এক শিক্ষিকা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ দেন।

এছাড়া আর্থিক অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরাও। অভিযোগ তদন্ত হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। পরে অপহরণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে এক মাস পর ৮ মার্চ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করে ওই প্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রী। ওইদিনই জেলার পবা উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এর পাঁচদিনের মাথায় ১৩ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ছাত্রী অপহরণ ও ধর্ষণচেষ্টায় তাকে অভিযুক্ত করে গত বছরের ৪ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। যদিও বর্তমানে জামিনে রয়েছেন অধ্যক্ষ।

এদিকে, অধ্যক্ষকে স্বপদে ফেরাতে তৎপরতা শুরু করেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। ২১ মার্চ বিকেলে এই ইস্যুতে নিজ দফতরে পরিচালনা কমিটির সভাও করেছেন ইউএনও। ইউএনওর বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের পক্ষ নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

অধ্যক্ষ কলেজে ফিরছেন- এমন খবরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে। ন্যায়বিচার নিয়েও শঙ্কিত নিপীড়নের শিকার ছাত্রী ও তার পরিবার। এছাড়া তার অপকর্মের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ায় চাকরি নিয়ে শঙ্কায় শিক্ষক-কর্মচারীরা।

নিপীড়নের শিকার ওই ছাত্রীর বাবা জানিয়েছেন, জামিনে বেরিয়ে আসার পর থেকে অধ্যক্ষ মামলা তুলে নিতে তাদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর পুলিশকে ম্যানেজ করে ভাইসহ তাকে নাশকতার দুটি মামলা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। অধ্যক্ষ আবারও স্বপদে ফিরলে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।

তবে শিক্ষিকার এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন অধ্যক্ষ জহুরুল আলম রিপন। তার দাবি, আমাকে ফাঁসাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই শিক্ষিকা ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

এ বিষয়ে ইউএনও জাহিদ নেওয়াজের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

Bootstrap Image Preview