বাংলাদেশের রাজনৈতিক গোষ্ঠী ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয়কে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন।
সোমবার (২৫ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সম্প্রতি নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় আহত ও নিহতদের প্রতি শোক ও সংহতি প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ধর্মকে ব্যবহার করা নয়। কিন্তু রাজনৈতিক গোষ্ঠী তাদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করছে। বর্তমানে ধর্মের অপব্যবহার করে মানুষের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার অর্জনগুলো ধরে রাখতে সম্প্রীতির মূল্যবোধকে ছড়িয়ে দিতে হবে। ধর্মের ভিত্তিতে ঐক্যকে বিনষ্ট করা সংবিধান সম্মত না। অনেকক্ষেত্রে মানুষের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করতে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে।’
ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক বলেন, ‘সংবিধানেও আছে ধর্মকে অপব্যবহার করা যাবে না। আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক, নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সব ধর্মের সঙ্গে সম্প্রীতি গড়ে তোলা। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই মানুষের সবার অধিকারকে রক্ষা করতে হবে। ধর্মের নামে বৈষম্য আমাদের দেশে নাই।’
অনুষ্ঠানে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার শাহদীন মালিক বলেন, ‘একটা জাতি কিভাবে এগুবে? বিদ্বেষ, ঘৃণা, বিভাজন করে কোনও জাতি আগায় না। আমাদের দেশে যেটা দেখছি, যখনই কোনও ঘটনা ঘটছে, আমরা একে অপরের প্রতি ঘৃণা ছড়াচ্ছি, বিদ্বেষ ছড়াচ্ছি, বিভাজন ছড়াচ্ছি। আমরা একে অপরকে খুনি, সন্ত্রাসী, এর দালাল ওর দালাল আখ্যা দিচ্ছি। আমাদের যে ঘৃণা, বিদ্বেষ, বিভাজনের বক্তব্য, এটা থেকে নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী দেখিয়ে দিয়েছেন যে রাজনীতিটা কি হওয়া উচিত। বিভিন্ন দেশে নানা ধর্মের, নানা মতাদর্শের লোক আছে। এই যে বিভাজনের রাজনীতিকে উসকে না দিয়ে আমাদের জেসিন্ডার কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। মতবিরোধ থাকবে, সমালোচনা থাকবে কিন্তু সবাইকে এক করে, বিদ্বেষ ঘৃণা না ছড়িয়ে, রাজনীতিবিদদের কাছে আহ্বান থাকবে যে - যেন আমরা ভালো জিনিসটা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই যে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নির্ভরশীলতা, প্রতিনিয়ত কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়, বইমেলায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ছিল, উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নাকি ৫০ হাজার নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য কাজ করেছে, এইগুলো হলো আমাদের রাজনীতির অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। আস্তে আস্তে এই ঘৃণা, বিদ্বেষ, সহিংসতা আমাদের জন্য মুখ্য হয়ে যাবে। এরকম পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নিউ জিল্যান্ডের কাছ থেকে যেটা আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত, যে বিভাজন করে দেশ আগায় না।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. সুকোমল বড়ুয়া, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রমুখ।