Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মীরসরাইয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে প্রাণ গেল চিত্রা হরিণটির

ইমাম হোসেন, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০১৯, ০২:০৮ PM
আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯, ০২:০৮ PM

bdmorning Image Preview


মীরসরাইয়ের উপকূলীয় বনাঞ্চলে একটি চিত্রা হরিণের উপর অজ্ঞাত কারো দ্বারা হামলা হয়। হরিনটিকে স্থানীয় বন বিভাগ গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা সদরস্থ পশু হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসাধিন অবস্থায় হরিণটি মৃত্যুবরণ করে। এদিকে প্রাপ্ত তথ্যে আরো জানা গেছে এই উপকূলীয় বনে সহস্রাধিক মায়া হরিণ রয়েছে। কিন্তু হরিণগুলো স্থানান্তর বা সংরক্ষণের বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই অর্থনৈতিক জোনের উন্নয়ন কাজে টেন্ডারের মাধ্যমে বনের সকল গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে।

উদ্ধারকারী বনকর্মী ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, গতকাল রবিবার মীরসরাই উপজেলার উপকূলে অর্থনৈতিক জোন ‘ বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরী’  নিকটস্থ উপকূলীয় বনে অজ্ঞাত কারো দ্বারা জখম হয়ে সকাল ১০টার দিকে একটি বড় চিত্রা হরিণ ইছাখালী ইউনিয়নের জিরো পয়েন্ট এলাকায় চলে আসে। এসময় অর্থনৈতিক এলাকায় দায়িত্বরত আনসার কর্মীরা ও কর্মরত মিলেনিয়াম বিল্ডার্স এর শ্রমিক আশরাফ আলী, অভি সহ কয়েকজন মিলে হরিনটিকে আটকে উপকূলীয় বনকর্মীদের খবর দিলে উপকূলীয় বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা এরফানুল হক উদ্ধারকারীদের সহায়তায় উক্ত চিত্রা হরিণটি সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ মীরসরাই সদরস্থ উপজেলা পশু সম্পদ কার্যালয়ে নিয়ে আসে। সেখানে দায়িত্বরত ভেটেরেনারি সার্জন ডাঃ নাবিল ফারাবি উক্ত হরিণটিকে চিকিৎসা দিতে থাকে। প্রায় ২৫ মিনিট নাগাদ কয়েকটি কাটা জখমের স্থানে সেলাইকরা কালে হরিণটি এক পর্যায়ে মৃত্যুবরণ করে।

এই বিষয়ে চিকিৎসা প্রদানকারী ডাঃ নাবিল ফারাবি বলেন, হরিণটি ধারালো অস্ত্র দ্বারা অনেকগুলো গভীর কোপ খেয়েছে। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণসহ আতঙ্কিত হয়ে এক পর্যায়ে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, উক্ত পুরুষ চিত্রা হরিণটি ৫০ থেকে ৬০ কেজি ওজনের হতে পারে। তিনি আরো জানান, কয়েক মাস পূর্বেও প্রায় ৩০ কেজি ওজনের একটি মাদি হরিণ আহত হবার পর নিয়ে আসা হয়েছিল। গভীর রাতে বালু উত্তোলনকারী ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়েছিল সেই হরিণটি। সেটি ও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। কারণ এইসব বন্যপ্রাণীগুলো এমনিতেই লোকালয়ে এলেই ভীত হয়ে পড়ে। তাই অধিকাংশই হৃদক্রিয়া ও দ্রুত আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

এই বিষয়ে বন বিভাগের চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম রহমান বলেন, হরিণটি আমাদের বনকর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও প্রাণে বাঁচাতে পারেনি। তবে হরিণটির মৃত্যুর পর পোস্টমর্টেমসহ আইনগত সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

ইছাখালী ইউনিয়নের চরশরৎ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুদর্শন রায় জানান, ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বনমন্ত্রী আকবর হোসেন এই উপকূলীয় বনে ১২ টি চিত্রা হরিন অবমুক্ত করেছিলেন। সেসময় উক্ত অনুষ্ঠানে আমি ও উপস্থিত ছিলাম। সেই ১২ টি হরিণ প্রজনন করে এখন সহস্রাধিক হরিণে রুপ লাভ করেছে। শুস্ক মৌসুম এলে সেখানে মিঠা পানির অভাব দেখা দেয়, তখন মিঠা পানির জন্য হরিণরা দল বেঁধে লোকালয়ের পুকুর খালে আসে। আর তখন হামলার স্বীকার হয়।

তবে এই মুহুর্তে উক্ত উপকূলীয় বনাঞ্চল এর গাছগুলো অর্থনৈতিক জোনের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে কাটা হচ্ছে। তাই হয়তো শ্রমিকদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এমনটি হতে পারে। তবে বন কেটে ফেলার আগে সহস্রাধিক বড় জাতের দৃষ্টি নন্দন মায়া হরিণগুলো স্থানান্তর ও নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা ও প্রয়োজন ছিল। আবার সচেতন মহল মনে করে অর্থনৈতিক জোনের স্বার্থে সবুজ বেষ্টনী ও অবশিষ্ট এই বনাঞ্চল রক্ষা করা প্রয়োজন ছিল।

Bootstrap Image Preview