Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

পা হারানো নিপা পেল ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি

শহিদুল ইসলাম, বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০১৯, ১২:০১ PM
আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯, ১২:০৩ PM

bdmorning Image Preview


হাসপাতালের কষ্টের বিছানায় মেয়ের পাশে নিরবে বসেছিলেন বাকরূদ্ধ বাবা-মা। এর মধ্যে বেজে উঠলো বাবা রফিকুল ইসলামের নিজের ব্যবহৃত মুঠোফোনের রিংটোনের শব্দ। কলটি রিসিভ করার পর ওপার থেকে কি বললো সেটা আশেপাশের লোকজন বুঝতে না পারলেও উচ্চস্বরে কেঁদে উঠলেন বাবা। ফোনের লাইন কেটেই খবরটি মেয়েকে জানাতেই ডুকরে কাঁদলো সেও, কাঁদতে শুরু করলেন মেয়েটির মা মুসলিমা বেগমও। না, নতুন কোন দু:সংবাদ আসেনি এবার। রবিবার বিকেলে প্রকাশিত প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় নিপা ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে।

শার্শা বুরুজবাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম ওই সুসংবাদটিই মোবাইল ফোনে জানান নিপার বাবাকে। কিন্তু এই খুশির খবরটি যেন তাদের পরিবারের বিষাদকে আরও একধাপ উস্কে দিয়েছে। হতাশার মাঝে খুশির খবরে আটকে রাখতে পারেননি চোখের পানি।

শার্শা উপজেলার বুরুজবাগান পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির মেধাবি শিক্ষার্থী মেফতাহুল জান্নাত নিপা (১১) গত বুধবার সকালে স্কুলে যাবার পথে বিদ্যুৎ কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ ভ্যান তাদের বহনকারি স্কুলভ্যানকে চাপা দেয়। এতে গুরুতর আহত হয় নিপাসহ আরও তিন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে নিপাকে হাসপাতালে ভর্তির পর তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়। জ্ঞান ফেরার পর থেকে গত পাঁচদিন ধরে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে নিপা নিজের কেটে ফেলা পায়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছে। আর দু’চোখ থেকে অঝোরে ঝরছে অশ্রু।

মাঝে মাঝেই বাবা-মায়ের কাছে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছিলো। বাকরূদ্ধ বাবা-মা নিরবে চোখের পানি ফেলা ছাড়া প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারছিলেন না নিপাকে।

মেধাবী নিপা গতবছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বুরুজবাগান পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রথম হয়েছিল সে। আর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল শার্শা বুরুজবাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে।

এদিকে বুধবারের দুর্ঘটনার পর পাঁচদিন পার হলেও ধরা পড়েনি পল্লী বিদ্যুতের সেই ঘাতক গাড়িচালক।

স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে অভিযুক্ত পিকআপ চালককে আটকের আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি এ আশ্বাসের বার্তা। ফলে এতে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। হতাশা কাজ করছে অভিভাবক সহ সচেতন মহলের।

Bootstrap Image Preview