সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও সংবাদ মাধ্যমে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাগর পাড়ের ঝিনুককন্যা রাফিয়াকে নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। রাফিয়াকে নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই ফেসুবক ব্যবহারকারী ও সংবাদ মাধ্যমের। প্রতিদিন যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ঝিনুককন্যা সংগ্রামী রাফিয়ার ভক্ত ও সমর্থক।
রাফিয়া অতিদরিদ্র পরিবারের জন্ম নেয়ায় অভাবের তাড়নায় পর্যটন নগরী সৈকতে ঝিনুক বিক্রি করে তার পরিবারের ভার নিজ কাঁধে নিতে বাধ্য হয়েছিল। পাশাপাশি চালিয়ে গেছেন তার পড়াশোনা। বর্তমানে সে কলাতলি সৈকত প্রথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী।
মাত্র দশ বছর বয়সে এই ঝিনুককন্যা রাফিয়াতে মুগ্ধ দেশ ও বিদেশের লাখ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী। সবাই তার প্রশংসায় মুখর। সবার একই কথা 'রাফিয়ার কাছে শেখার আছে আমাদের'।
এবার সে আলোচিত রাফিয়ার পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন কাজী রাসেল আহমেদ নোবেল। তিনি এবার কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। এ ছাড়াও কাজী রাসেল একে ধারে পর্যটন নগরীর স্টুডিও মালিক সমিতির সভাপতি ও কটেস শ্রমিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
বিষয়টি এ প্রতিবেদকের কাছে নিশ্চিত করে কাজী রাসেল আহমদ নোবেল বলেন, তিনি রাফিয়া ও তার ভাই আরফাতকে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা করাতে আগ্রহী।
রাফিয়াদের পরিবার স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত প্রতিমাসে এক বস্তা করে চাল দেয়ার কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনে অন্যান্য বিষয়গুলো তিনি রাফিয়াদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এসব খরচের ব্যয় তার বাবা মরহুম তোফায়েল আহমদের নামে পারিবারিক যাকাত ফাউন্ড থেকে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে রাফিয়ার বাবা আবদু করিম বলেন, শনিবার ২৩ মার্চ সন্ধ্যার দিকে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী রাসেল তার বাড়িতে তার পুরো পরিবারকে ডেকে পাঠান। পরিবারসহ তার অফিসে দেখা করতে গেলে তিনি আমার ছেলে মেয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। এ রাফিয়ার জন্য তাৎক্ষণিক স্কুলব্যাগ, ড্রেসসহ কিছু নগদ অর্থ প্রদান করেন।
রাফিয়া শনিবার (২৩ মার্চ) থেকে স্কুলে ফিরেছে জানিয়ে বাবা আবদু করিম আরো বলেন, সবার সহযোগিতায় রাফিয়াসহ তার সকল ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করিয়ে মানুষের মত মানুষ করতে চান।
তিনি বলেন, আজকে অপরজন যেভাবে আমার পরিবারকে সাহায্য করছে, আমার বড় ইচ্ছে, আমার ছেলেমেয়ে যেন ঠিক একইভাবে অন্যের বিপদে দাঁড়ায়।
রাফিয়া আপাতত সব ভুলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে চান বলে জানিয়েছে। রাফিয়া জানায়, কলাতলি সৈকত প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্লাস ফোরে তার রোল নাম্বার ছিল ৩। তবে ঠিকমত পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে না পারায় পঞ্চম শ্রেণিতে তার বর্তমান অবস্থান ২৭ নাম্বারে।
উল্লেখ্য, ইফতেখার নুর তিশন নামের কক্সবাজার সিটি কলেজের এক ছাত্র রাফিয়ার একটি মায়াবী চেহারার মিষ্টি হাসির ছবি আপলোড করলে তা সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায়। পরবর্তী রাফিয়ার ঝিনুক বিক্রির কারণ তুলে ধরে নিউজ প্রকাশিত হলে রাফিয়ার কঠিন বাস্তবাতা ও সংগ্রামের গল্প জেনে যায় দেশ-বিদেশে বসবাসরত লাখ লাখ বাঙালি।