বন্যা কিংবা বৃষ্টি ছাড়াই ঢাকা সাভারের আশুলিয়া থানার গণকবাড়ী ধামসোনা ইউনিয়নের ভাদাইল-ইপিজেড সড়কের কিছু অংশে হাঁটুপানি জমে থাকতে দেখা গেছে। আর বর্ষাকালে এটি আরও ভয়াভহ রূপ ধারণ করে থাকে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সড়কের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা আর আশপাশের নবনির্মিত ছাদের অতিরিক্ত পানি অপসারণ ব্যবস্থা না থাকাকেই দায়ি করছেন তারা। পরিশেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকার প্রধানের কাছে সমস্যাটির দ্রুত সমাধান চেয়েছেন পোশাক শিল্পের শ্রমিকসহ সাধারণ পথচারিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাভারের আশুলিয়া গণকবাড়ী এলাকায় ঢাকা পুরাতন ও নতুন ইপিজেড নামের দুইটি ফ্যাক্টরী নির্মাণ করা হয়। আর এটি স্থাপিত হবার পরপরই বিভিন্ন বিদেশি দেশগুলো নামি-বেনামি বিভিন্ন কোম্পানী গড়ে তুলেন। আর সেই থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার চাকরি পিপাসুরা ভীড় জমাতে থাকে সাভারের ভাদাইল এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, এখানে দুই ইপিজেডের প্রায় এক তৃতীয়াংশ শ্রমিক এ ভাদাইল, পাবনার টেকসহ আশপাশের এলাকায় বসবাস করে আসছে। কিন্তু এসব লোকের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা সাভার পারমানবিক কেন্দ্র (আনবিক) সীমানা ঘেঁষে ভাদাইল সড়কটি। অথচ এ সড়কটি স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণে সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটারের এক তৃতীয়াংশ সড়ক সামান্য বৃষ্টিতেই পানির নিচে নিমজ্জিত হয়ে থাকে।
স্থানীয়রা আরও জানান, প্রায়ই রাস্তার দক্ষিণ পাশ্বের বাড়ির মালিকরা ময়লা আর্বজনাযুক্তু (টয়লেটের) পানি রাস্তায় ফেলে পথচারীদের চলাচলে অসুবিধা তৈরি করছে। এটি বর্ষাকালে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে যেন পুরো রাস্তাটি হাঁটুপানিতে ডুবে যায়। যার ফলে প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ইপিজেডেসহ বিভিন্ন পোশাক উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ পথচারিদের। বিশেষ করে যমুনা ইলেকট্রনিক্স থেকে হাজী আলাউদ্দীন রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ হয়ে তোমাল কুঞ্জ সংলগ্ন সড়কটি প্রায়ই পানির নিচে ডুবে থাকে।
তারা আরও জানায়, ভোর হলেই চোখে পড়ে একে অপরেরর সাথে ধাক্কাধাক্কি ও পাল্লা দিয়ে কিংবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পোশাক শ্রমিকসহ সাধারণ পথচারিদের ছুটে চলার এক করুন দৃশ্য। মৌমাছির বাসায় ঢিল ছুড়লে যেমনটা দেখা যায়। স্থানীয় ও পথচারিরা দাবি করছেন সড়কটি প্রশস্থ কম হওয়ায় দশ মিনিটের পথ অতিক্রম করতে তাদের সময় লাগছে বিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট।
এর থেকে বাদ পরেনি স্কুল পড়ুয়া কোমলমতি শিশুরা। ঢাকা ইপিজেডের প্যাডাক্স জ্যাকেট লিমিটেড ও রেড পয়েন্ট জ্যাকেট লিঃ এর সাবেক পোশাক শ্রমিক তাজুল ইসলাম সহ, ভাদাইল এলাকায় বসবাসরত ইপিক গার্মেন্টস, তালিসমান, ওয়াই কে কে, ঢাকা রিয়া, হুপলোন, গোলটাক্স, ইয়ং ওয়ান, এ ওয়ান, লেনি এ্যাপারেল লিঃ, বেক্সিমকো, প্যাক্সজার বাংলাদেশ লিঃ, মেইনিটি, হেলিকন, শান্তা, এল এস আই, রিং শাহীন, কুইন সাউথ, শাহীন ফ্যাশন লিঃ, জে এন্ড জে মেডিকেল বিডি এবং কেবিসি কেমিক্যাল লিঃ সহ বিভিন্ন পোশাক ও বহুমুখী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা বলেন, আমরা যাতে অল্প সময়ের মধ্যে অফিসের কাজে যোগ দিতে পারি এজন্য ভাদাইল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকি। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় আমাদের অফিসে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া ছেলে-মেয়েদের ঠিকমতো সেবা যত্ন করতে পারছি না। এছাড়া সঠিক সময়ে যেতে না পাড়ায় আমাদের হাজিরা ভাতা কেটে নেওয়াসহ বসেরা অকট্ট ভাষায় গালিগালাজ করেন।
শ্যামল ইসলাম নামে এক স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ তার বন্ধুরা বলে, রাস্তাটি সরু হওয়ায় ও রাস্তা এবং ছাদের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বিনা বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটু পানিসহ কাঁদা পানি জমে থাকে। এছাড়া ভীরের রাস্তায় চলতে গিয়ে ঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছতে পারি না। এমনকি পিছলে পড়ে কাঁদা মাখা মাটি-পানি পোশাকে লেগে যায়। ফলে ওদিন আর নোংরা পোশাকে পড়তে যাওয়া হয় না।
রাস্তাটির প্রশস্থ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ ছাদের অতিরিক্ত পানি অপসারণে বাড়ির মালিকদের পাইপযোগে নির্দিষ্ট যায়গায় পানি ফেলতে আইন তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। সমস্যাটি দ্রুত সমাধান করা হলে আর পোশাক শ্রমিকরা বিনা ভোগান্তিতে কর্মস্থলে পৌঁছতে পারলে তাদের কাজের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে। ফলে পোশাক শিল্প থেকে সরকারের আয় বহুগুণে বৃদ্ধিপাবে বলে দাবি করছেন শিল্প বিশেষজ্ঞরা।