Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জন্মদিনে কেকেআরের বিরুদ্ধে জয়ের প্রত্যাশায় সাকিব

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০১৯, ০৯:৩৩ AM
আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯, ০৯:৩৭ AM

bdmorning Image Preview


আজ ২৪ মার্চ। বাংলাদেশের অল টাইম সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। দেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র ও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ৩২ তম জন্মদিন। ১৯৮৭ সালের এই দিনে তিনি খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক। তিনি বামহাতি মিডল অর্ডারব্যাটসম্যান এবং বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনার।

বর্তমানে তিনি ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক লিগ আইপিএল খেলতে ভারতে রয়েছেন। আজ আইপিএলে তার দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ মুখোমুখি হবে সাবেক দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের। যে দলটা দুই বছর আগে ছেড়ে ভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলছেন। কলকাতা ছেড়ে গেলেও কিন্তু স্মৃতিগুলো এখনও ভিড় করে মনের মধ্যে। সেই কেকেআরের বিরুদ্ধে আজ, রবিবার ইডেনে লড়াই তাঁর দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের।

ইডেন ম্যাচের আগে কী মনে হচ্ছে শাকিব আল হাসান-এর? শনিবার কলকাতায় টিম হোটেলে বসে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বাংলাদেশের অলরাউন্ডার কখনও আবেগপ্রবণ, কখনও পেশাদার।

প্রশ্ন: কলকাতা নাইট রাইডার্স আর ইডেনের সঙ্গে আপনি অনেক দিন জড়িয়ে ছিলেন। কী রকম ছিল সেই সম্পর্কটা? 

সাকিব: কেকেআর, ইডেন! এই দুটো নাম বললে অনেক স্মৃতি ভিড় করে আসে। প্রথম মরসুম থেকে যত দিন ছিলাম, সব ক’টাই আমার কাছে স্মরণীয়। চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, মানুষের মন জয় করেছি। আরও একটা ব্যাপার ছিল। ঢাকা আর কলকাতা— খুব কাছাকাছি বলে আমার বন্ধুবান্ধব, পরিবার, সবাই ম্যাচ দেখতে আসত। কলকাতার মানুষ, ইডেনের দর্শকদের কাছ থেকে প্রচুর ভালবাসা পেয়েছি। যা কোনও দিন ভুলব না।

প্র: কেকেআর ছাড়ার পরে শাহরুখ খানের ফোন কি কখনও পেয়েছেন?


সাকিব (হাসি): না, আর পাইনি।

প্র: এখন আপনি হায়দরাবাদের। আপনাদের দল গত বার ফাইনাল খেলেছে। দলটার প্রধান শক্তি কী?

শাকিব: এই দলটার আসল শক্তি হল, যে কোনও পরিবেশ, যে কোনও পরিস্থিতিতে খেলতে পারে। অলরাউন্ড শক্তি এতটাই ভাল যে, কোনও প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলার জন্য আমরা তৈরি। এ বার কোচ এবং টিম ম্যানেজমেন্টকে ঠিক করতে হবে, পরিস্থিতি অনুযায়ী সেরা দল কোনটা হবে।       

প্র: এ বার তো ডেভিড ওয়ার্নারকেও দলে পাচ্ছেন আপনারা।

সাকিব: অবশ্যই এটা দারুণ ব্যাপার। ওয়ার্নারকে পাওয়াটা গোটা দলকে তাতিয়ে দেবে। গত বছর আমরা ওর অভাবটা টের পেয়েছিলাম। ওয়ার্নার দলের এক জন নেতা। হায়দরাবাদের জন্য ও যা করেছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। ওয়ার্নারের ফিরে আসাটা দলের কাছে বড় প্রাপ্তি।

প্র: হায়দরাবাদকে তো ‘খুদে কেকেআর’ও বলা চলে। আপনি আছেন, ইউসুফ পাঠান আছেন, মণীশ পাণ্ডে আছেন। নাইটদের সঙ্গে খেলতে নামলে এই ব্যাপারটা কি আপনাদের সামান্য সুবিধে দেবে?

সাকিব: এক দিক দিয়ে সুবিধে তো বটেই। আমরা এত দিন কেকেআরে খেলেছি। ওদের ভিতরের অবস্থাটা ভাল বুঝতে পারি। প্রতিপক্ষ দল নিয়ে আমাদের টিম ম্যানেজমেন্টকে পরামর্শ দিতে পারি। এক দিক দিয়ে এটা আমাদের শক্তি, বলতেই পারেন।

প্র: আগের বার কেকেআরের বিরুদ্ধে ইডেনে দুটো ম্যাচই জিতেছিলেন। ইডেনে খেলার সুবিধেটা কী?

সাকিব: ইডেনে খেলার সুবিধে নয়। জিতেছিলাম, কারণ ওদের বিরুদ্ধে আমরা ভাল খেলেছিলাম। আমরা একটা পরিকল্পনা করে কেকেআরের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলাম। এবং সেই পরিকল্পনাটা কাজে লাগাতে পেরেছিলাম। যার জন্য গত বছর প্লে-অফেও জিতে যাই। 

প্র: ইডেনের পিচ কি আপনাদের দলকে কোনও সুবিধে দিয়েছিল?

সাকিব: সেটা বলতে পারেন। আমাদের যে ধরনের ব্যাটসম্যান আছে, যে ধরনের বোলার আছে, তারা পিচ থেকে সাহায্য পেয়েছিল। গত বছরের পিচটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছিল ভাল মতো। তার মানে এই নয় যে, এ বারও মানিয়ে নিতে পারবে। প্রথম ম্যাচটা সব সময়ই কঠিন হয়। আশা করব, একটা ভাল ম্যাচ দিয়ে এ বারের আইপিএল অভিযান শুরু করতে পারব।

প্র: কেকেআরে সুনীল নারাইন, কুলদীপ যাদব আছেন। হায়দরাবাদে আপনি, রশিদ খান। এই দুই স্পিন শক্তির তুলনা করলে, কাকে এগিয়ে রাখবেন?

সাকিব: রশিদ খান এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার। অন্য দিকে সুনীল নারাইন কেকেআরের জন্য যা করেছে, তা এক কথায় অসাধারণ। আবার কুলদীপও ভারতের হয়ে, কেকেআরের হয়ে ভাল খেলছে। তাই এই ভাবে তুলনা করা ঠিক হবে না। ম্যাচের দিন কে কেমন খেলে, সেটাই সব চেয়ে বড় কথা।

প্র: স্পিনারদের লড়াই কি ইডেনে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারে? 

সাকিব: অবশ্যই করে দিতে পারে। এই সব বোলার মাঝের ওভারগুলোয় বল করে। এই মাঝের ওভারগুলোতে যে দল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, ম্যাচও তাদের। যদিও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে কোনও একটা ওভারই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে, কিন্তু মাঝের ওভারগুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি।

প্র: কেকেআর বনাম সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ম্যাচ নিয়ে আপনার কী ভবিষ্যদ্বাণী?

সাকিব: ফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা ঠিক হবে না। এটুকু বলছি, গত বারের দুই এবং তিন নম্বর দলের মধ্যে খেলা। ইডেনের দর্শকদের জন্য চাইব, ম্যাচটা যেন উত্তেজক হয়।

প্র: কাল (রবিবার) তো আপনার জন্মদিন। কী ভাবে উৎসব করবেন ঠিক করেছেন?

সাকিব: আমি খেলি বা না খেলি, সেরা উৎসবটা হবে দল জিততে পারলে। 

প্র: এশিয়া কাপের কথায় আসি। বাঁ হাতের কড়ে আঙুলে ও রকম মারাত্মক চোট নিয়ে কী ভাবে খেলেছিলেন চারটে ম্যাচ? 

সাকিব: সত্যি কথা বলতে কী, আমি জানতাম না আঙুলটার অত খারাপ অবস্থা হয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, বেশি চাপ পড়ছে বলে আঙুলটা ফুলে যাচ্ছে। পেনকিলার ইঞ্জেকশন নিয়ে খেলে যাই। তার পরে যখন একেবারে অসম্ভব হয়ে ওঠে, দেশে ফিরে যাই।

প্র: এশিয়া কাপ ফাইনাল চলার সময় আপনি টুইট করেছিলেন, অস্ত্রোপচারের আর কয়েক ঘণ্টা দেরি হলেই মারাত্মক ঘটনা ঘটে যেতে পারত। কী অবস্থা হয়েছিল? 

সাকিব (একটু থেমে): প্রচণ্ড সংক্রমণ হয়ে গিয়েছিল আঙুলে। একটু দেরি হলে পুরো হাতের ভিতরে ছড়িয়ে যেতে পারত। সেটা মারাত্মক হত। ভাগ্য ভাল, সেটা থেকে রক্ষা পাওয়া গিয়েছে...। 

প্র: ক্রিকেটে ফিরি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রিস্ট স্পিনার বনাম ফিঙ্গার স্পিনারদের এই লড়াইয়ে কি ফিঙ্গার স্পিনাররা চাপে পড়ে যাচ্ছেন?

সাকিব: অবশ্যই। ক্রিকেট এখন প্রত্যেক দিন বদলে যাচ্ছে। এখন যে ধরনের পিচে সীমিত ওভারের ক্রিকেট হয়, সেখানে রিস্ট স্পিনাররাই বেশি সাহায্য পায়। তাই দেখবেন, প্রতিটা দলই অন্তত এক জন রিস্ট স্পিনার রাখার চেষ্টা করে। 

প্র: আপনি নিজে বাঁ-হাতি স্পিনার, ফিঙ্গার স্পিনার। এই পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার জন্য কী করছেন?

সাকিব: বিশেষ কিছু তো করতেই হবে। না হলে টিকে থাকা যাবে না। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে ট্রেনিং করছি। বোলিংয়ে বৈচিত্র আনার চেষ্টা করছি। নতুন, নতুন জিনিস পরীক্ষা করছি। ওই যে বললাম, ক্রিকেট এখন প্রত্যেক দিন বদলে যাচ্ছে। যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আপনাকেও নতুন কিছু আমদানি করতে হবে।

প্র: চোটের জন্য আপনি নিউজ়িল্যান্ড সফরে যাননি। ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে গুলি চালানোর ওই হিংসাত্মক ঘটনার পরে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে আপনার কথা হয়েছিল? 

সাকিব: হ্যাঁ, হয়েছে। ওই ঘটনার পরেই আমি কয়েক জন ক্রিকেটারকে ফোন করেছিলাম। ওরা প্রথমে বুঝতে পারেনি, পরিস্থিতি কতটা খারাপ ছিল। পরে গুলিচালনার ভিডিয়ো দেখে বুঝতে পারে, কত অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে। তিন-চার মিনিট আগে যদি মসজিদে পৌঁছত, তা হলে হয়তো ভয়ঙ্কর একটা অবস্থার মধ্যে পড়তে হত আমাদের ক্রিকেটারদের।  

Bootstrap Image Preview