নোয়াখালীর সুবর্ণচরে দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনার মূলহোতা রুহুল আমিনকে এক বছরের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এমন খবরে হতবাক হয়েছে নির্যাতনের শিকার পরিবার। একই সঙ্গে রুহুল আমিনকে যেন জামিন দেয়া না হয় সেজন্য আদালতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ ও তার স্বামী।
গৃহবধূর মামলা পরিচালনাকারী নোয়াখালী জজ কোর্টের আইনজীবী রবিউল হাসান পলাশ বলেন, ১৮ মার্চ গোপনে হাইকোর্ট থেকে এক বছরের জামিন নেন রুহুল আমিন। বিষয়টি আমরা আজকে জানতে পারলাম। এ বিষয়ে লিভ টু আপিল করব আমরা। আগামী রবিবার এ নিয়ে লিভ টু আপিল করা হবে।
তিনি আরও বলেন, শুনেছি ইতোমধ্যে রুহুল আমিনের জামিনের অর্ডারের কাগজপত্র নোয়াখালীতে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু জেলা কারাগারে যাওয়ার আগ মুহূর্তে সেসব কাগজপত্র কোনো এক কারণে স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে কি জন্য জামিনের অর্ডারের কাগজপত্র স্থগিত রাখা হয়েছে সে বিষয়টি আমার জানা নেই। বলা যায় কোনো এক কারণে এটি আটকে দেয়া হয়েছে। রোববার লিভ টু আপিলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা কারাগারের জেল সুপার মনির হোসেন বলেন, হাইকোর্ট থেকে রুহুল আমিনের জামিন অর্ডার সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র রাত ৯টা পর্যন্ত আমাদের কাছে এসে পৌঁছেনি। হাইকোর্ট থেকে রুহুল আমিন জামিন পেয়েছে বিষয়টি আমরা আজই শুনলাম। তবে এখনো কোনো কাগজপত্র হাতে পাইনি আমরা।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নোয়াখালী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন বলেন, হাইকোর্ট থেকে রুহুল আমিন জামিন পেয়েছে বিষয়টি কেবল শুনলাম। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে পরে জানাতে পারব।
এদিকে গত ১৮ মার্চ (সোমবার) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুহুলকে জামিনের আদেশ দেন। রুহুলকে জামিন দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়। আগামী ২৫ মার্চ চেম্বার আদালেত তার শুনানি হতে পারে।
কোন যুক্তিতে আসামিকে জামিন দেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে বিশ্বজিৎ বলেন, আবেদনকারীর আইনজীবী আদালতে বলেছেন যে, মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) রুহুল আমিনের নাম নাই। তাছাড়া মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। এসব বিষয় তুলে ধরে জামিন চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আসলে আসামির আইনজীবী রাষ্ট্রপক্ষকে বিভ্রান্ত করেছেন। জামিন আবেদনে উল্লেখ আছে এনএক্স-১৭ নম্বর কোর্টের কথা। অর্থাৎ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে আবেদনটি শুনানির জন্য ফাইল হয়েছে। ফলে আবেদনটির অনুলিপি গেছে ওই কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে।
তিনি বলেন, যেদিন জামিন হয় সেদিন আসলে আমরা বুঝতেই পারিনি, কার জামিন হয়েছে।
আদালতে রুহুল আমিনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. আশেক-ই-রসুল।
ধর্ষণের ঘটনার মূলহোতা রুহুল আমিনকে হাইকোর্ট এক বছরের জামিন দেয়ায় আমরা হতবাক হয়েছি উল্লেখ করে মামলার বাদী গৃহবধূর স্বামী সিরাজ মিয়া বলেন, আমরা হতবাক। কিভাবে তাকে হাইকোর্ট জামিন দিলেন আমরা জানি না। এর চেয়ে বড় কষ্টের আর কি আছে। এত বড় অপরাধী কিভাবে জামিন পেল?
সিরাজ মিয়া বলেন, রুহুল আমিন জেলে থাকা অবস্থায় তার সাঙ্গপাঙ্গরা নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আসছে আমাদের। এখন শুনছি জামিন পেল রুহুল আমিন। কারাগার থেকে রুহুল আমিন বের হয়ে আসলে তো আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। আমরা শেষ। কোথায় যাব, কার কাছে যাব আমরা?
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ বলেন, এত কিছু করে কি হলো, ধর্ষক রুহুল আমিন তো জামিন পেয়েই গেলো। এতদিন তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমাদের হুমকি দিয়ে আসছিল। এখন রুহুল আমিনও জামিন পেয়ে গেল। এখন আমি কোথায় যাব, কে দেবে আমার নিরাপত্তা, কোথায় যাব আমি, কি হবে আমার?
প্রসঙ্গত, গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে চার সন্তানের জননীর সঙ্গে কয়েক জনের কথাকাটাকাটি হয়। এর জেরে রুহুল আমিনের নির্দেশে ১০-১২ জন তাদের বাড়িতে গিয়ে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে ওই নারীকে গণর্ধষণ ও মারধর করে।
এ ঘটনায় নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে উপজেলার ৫ নম্বর চরজুবলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে ৯ জনের নামে মামলা করেন। মামলার পর গত ২ জানুয়ারি গভীর রাতে রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় আটজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারের পর তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়। তারা এখন নোয়াখালী কারাগারে। রুহুল আমিন ছাড়া কারাগারে থাকা অন্য আসামিরা হলেন সোহেল, বাদশা আলম, জসিম, বেচু, স্বপন, হাসান আলী বুলু ও ছালাউদ্দিন।
ওই নারীর স্বামী অভিযোগ করেন, গত ৩০ ডিসেম্বর পাংখারবাজার ১৪ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধানের শীষে ভোট দিতে দেখে ওই নারীকে হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। ওইদিন রাত ১২টায় কয়েকজন লোক পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলে।
পরে ১৫-১৬ জন সন্ত্রাসী ধানের শীষে ভোট দেয়ায় ওই নারী ও তার স্বামীকে গালাগালি করে। এরপর অস্ত্র দেখিয়ে ওই নারীকে ঘরের বাইরে নিয়ে সবাই মিলে ধর্ষণ ও বেদম মারধর করে। ওই নারীকে গলা কেটে হত্যারও চেষ্টা করা হয়। পরদিন প্রতিবেশীদের সহায়তায় ওই নারীকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।