Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিশ্ব বন দিবস আজ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০১৯, ০১:৩৪ PM
আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯, ০১:৩৪ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বিশ্ব বন দিবস আজ। বিশ্বের অন্য অন্য দেশের মত বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাংলাদেশসহ পৃথিবীব্যাপী বনভূমির পরিমাণ কমে আসছে।

পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে হলে পৃথিবীর বনভূমি রক্ষা করা ছাড়া কোনো গতি নেই। এ সত্যকে সামনে রেখে প্রতি বছর ২১ মার্চ সারা পৃথিবীতে পালিত হয় ‘বিশ্ব বন দিবস।’

একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য সঠিক ভাবে বজায় রাখতে হলে ৩০ শতাংশ বনভূমি থাকা আবশ্যক। অথচ সারা পৃথিবীর মানুষ আজ বিভিন্ন ভাবে বনভূমি ধ্বংসের যজ্ঞে মেতেছে।

পথিবীতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় এক শতাংশ ক্রান্তীয় বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে মানুষের হাতে। বিগত ৭০ বছরে পৃথিবীর মোট ক্রান্তীয় বনভূমির প্রায় ৫০ শতাংশ উজাড় হয়ে গেছে। স্যাটেলাইট চিত্রে অপসৃত বনভূমির যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে তা বিশ্লেষণ করে বলা হচ্ছে যে, প্রতি বছর পৃথিবী থেকে পৌনে দুই কোটি থেকে দুই কোটি হেক্টর বনভূমি মানুষের ‘লোভ নামের’ প্রয়োজনের বলী হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে চিরতরে। এর ফলে শুধু বনভূমিই নয়, এর সাথে বনে বসবাসকারী হাজার হাজার প্রজাতীর কোটি কোটি জীব-জন্তুর জীবন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। আবাসস্থল হারিয়ে এদের অনেকেই ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

পৃথিবী ব্যাপী এই সর্বগ্রাসী বনভূমী ধ্বংসের প্রক্রিয়া প্রতিরোধে বিশ্ববাসিকে এক চেতনায় আনতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টন ১৯৭১ সালে তার ২৩তম সাধারণ সভায় ২১ মার্চ কে বিশ্ব বন দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তখন থেকে প্রতি বছর ২১ মার্চ সারা পৃথিবীতে বিশ্ব বন দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

বন দিবসের উদ্দেশ্য দেশের প্রতিটি নাগরীক কে উদ্বুদ্ধ করা, যেন প্রত্যেকে নিজ দায়িত্ব হিসেবে বনভূমি ধ্বংসে প্রতিবাদি হয়, এবং প্রত্যেকে সাধ্যামত বৃক্ষ রোপণে সক্রিয় হয়।

একই ভাবে বন আইনানুযায়ী একটি গাছ কাটতে হলে তার বিপরীতে ১০টি গাছ লাগাতে হবে এবং প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেওয়া গাছের পরিচর্যা করতে হবে, এই আইন যথাযথ ভাবে পালিত হচ্ছে কি-না তা দায়িত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করা, এবং আইনের ব্যত্যয় ঘটলে তার প্রতিকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

তবে বাস্তব অবস্থা অত্যন্ত হতাসা ব্যাঞ্জক, যা শুধু প্রতিনিয়ত আমাদের ধ্বংসের কিনারায় ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত চিত্র হ’ল গত দুই যুগে সারা পৃথিবীতে যে পরিমাণ বৃক্ষ নিধন করা হয়েছে রোপণ করা হয়েছে তার মাত্র এক শতাংশ!

বর্তমান বিশ্বে বিপুল শিল্পায়নের ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন নিঃসরণের পরিমান ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রয়োজন পৃথিবী ব্যাপী ব্যাপক বনায়ন। অথচ তা না হয়ে বরং ব্যাপক ভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে বনভূমি। ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃদ্ধি পাচ্ছে আবহাওয়ার তাপমাত্রা। এর ফলে একদিকে যেমন সৃষ্টি হচ্ছে ঝড়-জলোচ্ছাস, অন্যদিকে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে বাড়ছে সমুদ্রের পানির উচ্চতা, যার ফলে উপকূলীয় অঞ্চল পানিতে ডুবে গিয়ে সৃষ্ট করছে জলবায়ু বিপর্যয়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে জলবায়ু বিপর্যয়ে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। তো বাংলাদেশের বনভূমির বাস্তব চিত্র কি ?
প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকতে প্রয়োজন বাংলাদেশের মোট আয়োতনের ৩০ শতাংশ বনভূমি, কিন্তু বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৭ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রধান বনভূমি সুন্দরবন দেশের মোট বনভূমির ৪৪ শতাংশ। এ ছাড়া আছে চট্টগ্রামের পাহাড়ী বনাঞ্চল এবং মধুপুর ও দিনাজপুরের শাল বন সহ কিছু বনাঞ্চল, যা সবই সরকারী বন বিভাগের নিয়ন্ত্রনাধীন।

দেশের মানুষের বেতন ভুক্ত বন বিভাগের এ সকল কর্মচারী, যাদের এই বনভূমি পাহারা দেওয়ার জন্য রাখা হয়েছে, তারাই আজ দেশের বনভূমির প্রধান শত্রু। তাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে উজাড় হচ্ছে পাহাড়ের বনভূমি, মধুপুর-দিনাজপুরের শালবন এবং ভুবন বিখ্যাত সুন্দরবন! সুন্দরবন বিভাগের একমাত্র কাজ হ’ল বনভূমি পাহারা দেওয়া। তারা কোনো প্রকার গবেষণা, এমনকি উদ্ভিদ ও জীব-জন্তুর রোগ-বালাই’র চিকিৎসাও করে না। এ সকল কাজের জন্য তাদের কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। একমাত্র বৃক্ষ ও বন্যপ্রাণী পাহারা দেওয়াই তাদের চাকুরী। অথচ পাহারার নামে হাজার হাজার গাছ কেটে বন বিভাগের গনি মিয়ারা বেচে দিচ্ছে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে, যা এখনও চলছে। অন্যদিকে, এর ফলে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বনের প্রাণীরাও, যাদেরকে হত্যা করে বিক্রি করা হচ্ছে। যার প্রমাণ, গত কয়েক মাসে বিপুল পরিমাণ বাঘের চামড়া ধরা পড়েছে, সাথে হরিনের চামড়াও! বনভুমি উজাড় করার ফলে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতীর বিপুল সংখ্যক প্রাণী আজ বিলুপ্তির হুমকির মুখে, যার মধ্যে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘ, ইলশা হাঙ্গর, ইরাবতি ডলফিন, লবন পানির কুমি, মায়া হরিণ, সজারু, মেছো বাঘ, বন বিড়াল, বাঘডাস, ভোদড়, লাল মাছরাঙ্গা, মাস্কড্ ফিনফুটার, কালো গুই সাপ, জলপাই কচ্ছোপ, পিট ভাইপার, অজগর, সঙ্খচূড় সাপ, কালনাগিনী, মদনটাক, শুশুক, ধুষর মাথা মেছোচিল, নোনা বন সুমচা, খয়রি মাছরাঙা অন্যতম।

এ অবস্থায় বিশ্ব বন দিবসে আমাদের সিদ্ধান্ত হোক – বাংলাদেশের বনভূমি এবং বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করতে হলে এখনই প্রয়োজন তথাকথিত বন বিভাগের খোল-নলচে পরিবর্তন করে একটি পরিশুদ্ধ বন বিভাগ গড়ে তোলা। এবং বৃক্ষ ও বন্যপ্রাণী হত্যা এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, অন্যথায় বাংলাদেশের বনভূমি তথা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা আদৌ সম্ভব হবে না।

Bootstrap Image Preview