Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ঋণের নামে অর্থ আত্মসাৎ, দুই বছরেই ১৭শ’ কোটি টাকা দিতে চায় কাদের

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০১৯, ১০:১১ AM
আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯, ১০:১৫ AM

bdmorning Image Preview


জনতা ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাতের কথা স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ কাদের।

তিনি বলেছেন, ‘আমাকে জামিন দেয়া হলে প্রথম তিন মাসে ৪৫ কোটি টাকা ঋণ শোধ করব। পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে ১৭০০ কোটি টাকা পরিশোধ করব।এমএ কাদের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে কার্যবিধির ১৬১ ধারায় জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন। বুধবার জবানবন্দিটি আদালতে উপস্থাপন করেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়াম্যান এমএ কাদের পণ্য রফতানি না করেও ভুয়া রফতানি বিলের মাধ্যমে জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা থেকে ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা ঋণের নামে হাতিয়ে নেন।

এ অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তিনি ঋণ জালিয়াতির অনেক তথ্য দেন।

সূত্র জানায়, দুদকের পক্ষ থেকে আদালতে এমএ কাদেরের জবানবন্দির বিষয়ে বলা হয়েছে, তিনি (কাদের) সামগ্রিকভাবে সব ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। তাকে সুযোগ দেয়া হলে জামিনে মুক্ত হয়েই তিন মাসের মধ্যে এফডিবিপি এবং প্যাকিং ক্রেডিট বাবদ ব্যাংকের পাওনা ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার মধ্যে ৪৫ কোটি টাকা পরিশোধ করবেন।

পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে জনতা ব্যাংকের সমুদয় বকেয়া (মামলা সংশ্লিষ্ট আরও ১৭০০ কোটি টাকা) পরিশোধ করবেন। কার্যবিধির ১৬১ ধারায় নেয়া জবানবন্দি আদালতের কাছে দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এতে এমএ কাদেরের জামিন যাতে মঞ্জুর না হয়, সে কথাও বলা হয়। বলা হয়, তাকে আবারও রিমান্ডে আনার আবেদন করা হবে। তার দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে হবে। তিনি ১০ দিনের রিমান্ডে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সেগুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।

সূত্র জানায়, এমএ কাদের রিমান্ডে দুদকের কর্মকর্তার কাছে স্বীকার করেন, জনতা ব্যাংকের ১৫ থেকে ২০ জন কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের কমিশন নিয়ে ঋণ জালিয়াতির কাজে তাকে নানাভাবে সহায়তা করেছেন।

তবে তিনি এই ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের কারও নাম বা যেসব রাঘববোয়াল এই ঋণ পাইয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন, তাদের নাম এখনও প্রকাশ করেননি।

দুদকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, পুনরায় রিমান্ডে এনে তার কাছ থেকে এ ব্যাপারে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করা হবে। এছাড়া তিনি রিমান্ডে যাদের নাম বলেছেন, সেই তথ্য যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার কাছ থেকে বাকি তথ্য চাওয়া হবে।

এমএ কাদের রিমান্ডে দুদকের কর্মকর্তার কাছে জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা থেকে ভুয়া রেকর্ডপত্রের মাধ্যমে এফডিবিপি এবং প্যাকিং ক্রেডিট বাবদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন।

তিনি দোষ স্বীকার করে জবানবন্দিতে বলেন, ২০১৭ সালের মার্চের পর জনতা ব্যাংক ইমামগঞ্জ শাখায় ‘রফতানি করেছেন মর্মে যেসব রেকর্ডপত্র’ দাখিল করেছেন তার বিপরীতে দেশে কোনো প্রসিড (সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র) আসেনি। তার পাঠানো পণ্য বিদেশি বায়ার গ্রহণ করেননি এবং বায়ার পণ্য গ্রহণ না করায় ওই পণ্য কোথায় কোন অবস্থায় আছে, তা তিনি জানেন না।

অপরদিকে বিদেশি বায়ার জনতা ব্যাংক ইমামগঞ্জ শাখা থেকে পাঠানো ওই রেকর্ডপত্রও গ্রহণ করেননি। জনতা ব্যাংক থেকে পাঠানো রেকর্ডপত্রে অসংগতি, অনিয়ম এবং এলসির শর্তমোতাবেক রেকর্ডপত্র তৈরি না হওয়ায় বিদেশি বায়ারের ব্যাংক ওই রেকর্ডপত্রের অনুকূলে অ্যাকসেপটেন্স দেননি।

তিনি বলেন, বায়ার আদৌ রেকর্ডপত্র গ্রহণের জন্য ওই ব্যাংকে আসেননি। ফলে ডিসক্রিবেন্সি ডকুমেন্ট হিসেবে বিদেশি বায়ারের ব্যাংক ওই রেকর্ডপত্র জনতা ব্যাংকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। তাই এলসির অনুকূলে বিদেশি বায়ারের ব্যাংক জনতা ব্যাংকে ওই রফতানি রেকর্ডপত্রের অনুকূলে অর্থ পরিশোধে বাধ্য নয়। তাদের কোনো দায়বদ্ধতাও নেই। যেহেতু বায়ার মালামাল গ্রহণ করেননি বা বিদেশি ব্যাংক কোনো অ্যাকসেপটেন্স দেয়নি, তাই ওই পণ্যের বিপরীতে দেশে প্রসিড আসার আদৌ কোনো সম্ভাবনা নেই।

জবানবন্দিতে তিনি আরও জানান, রফতানি করার কথা বলে কথিত রেকর্ডপত্রের আলোকে প্যাকিং ক্রেডিট বাবদ তিনি জনতা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন। পরবর্তী সময়ে যা ভুয়া ডকুমেন্ট হিসেবে প্রমাণিত হয়। তিনি রফতানির কথা বলে সারেন্ডার বিএল সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখায় জমা দিলে শাখার তৎকালীন কর্মকর্তারা ওই রেকর্ডপত্র যাচাই-বাছাই ছাড়াই পার্চেজ করে নেন। এর বিপরীতে ব্যাংক কর্মকর্তারা তাকে (এমএ কাদের) জনতা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সুযোগ করে দেন। এ ব্যাপারে জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার কর্মকর্তারা তাকে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেন।

জবানবন্দিতে কাদের আরও জানান, তিনি জনতা ব্যাংক ইমামগঞ্জ শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করে তা দিয়ে একটি মার্কেটে শোরুম এবং মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানাধীন চারীগ্রামে ১২০০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। এছাড়া হাজারীবাগের মনেশ্বর রোডে সমতা লেদার কমপ্লেক্স ইউনিট-২ ক্রয়সহ বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করেন। তবে এজন্য তিনি টাকা নেননি। ভুয়া ডকুমেন্টর বিপরীতে ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা বের করে তার মধ্যে একট বড় অংশ দেশের বাইরে পাচার করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কাদের জানান, কিছু টাকা দিয়ে তিনি সাভারে ২/৩টা ফ্যাক্টরি করেছেন। নতুন কয়েকটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। ক্রিসেন্ট লেদার ফ্যাক্টরি করেছেন।

তিনি জানান, তাকে এই কাজে সহায়তা করেন জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার তৎকালীন জিএম, ডিজিএমসহ ১৫ থেকে ২০ কর্মকর্তা। ক্রিসেন্ট গ্রুপের ‘ঋণ ডাকাতির ঘটনায় চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ২২ জনের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা করে দুদক। এর আগে ৩০ জানুয়ারি এ ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনে তিনটি মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। মামলার পরপরই ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ কাদেরকে গ্রেফতার করে সংস্থাটি। তিনটি মামলায় তার বিরুদ্ধে ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়। আসামি করা হয় ১৭ জনকে।

এছাড়া দুদকের ৫ মামলায় কাদেরসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা, জাল কাগজপত্র তৈরি করে জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় ক্রিসেন্ট গ্রুপের মালিকদের মধ্যে সাতজনকে আসামি করা হয়।

তারা হলেন- গ্রুপটির চেয়ারম্যান এমএ কাদের, পরিচালক সুলতানা বেগম ও রেজিয়া বেগম, রূপালী কম্পোজিট লেদারের পরিচালক সামিয়া কাদের নদী, রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটুন জাহান মীরা এবং লেসকো লিমিটেডের পরিচালক হারুণ– অর রশীদ। এছাড়া ব্যাংকের ১৫ জন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়।

Bootstrap Image Preview