Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রতি ১০ জন নারী অভিবাসীর মধ্যে নির্যাতনের শিকার ৭ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০১৯, ০৫:২৭ PM
আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯, ০৫:২৮ PM

bdmorning Image Preview


নিজেদের ভাগ্য বদলাতে বিদেশ যান বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা। দেশের জন্য বয়ে আনেন বৈদেশিক মুদ্রা। আর অনেকে দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে পাড়ি দিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব। অভিবাসী নারী শ্রমকিদের শুরু থেকে থেকে শেষ পর্যন্ত কর্মস্থলে নানারকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কাজ করতে হয়।

গৃহশ্রমিক, নার্স, পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজের জন্য আকর্ষণীয় বেতন দেয়ার লোভ দেখিয়ে নারীদের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়া হলেও তাদের মূলত দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি সেসব দেশের গৃহকর্তারাও বাংলাদেশি নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলেই নারী শ্রমিকদের ওপর নেমে আসছে অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এমন তথ্যই দিলেন পুরান ঢাকার ওয়ারীর গৃহকর্মী নাসরীন বেগম।

তিনি জানান, এক বছর হলো তিনি দুবাই থেকে এসেছেন। সেখানে বেতন না দিয়েই দিনের পর দিন তাকে অভুক্ত পর্যন্ত রাখা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীরা প্রবাসে কেমন আছেন তা তদারকির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থাই নেই। এমনকি সেই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতাও নারীরা পাচ্ছেন না।

সূত্রমতে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশের নারীদের যৌনদাসী হিসেবে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। বিশেষ করে সিরিয়া, লেবানন, সৌদি আরব, জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরো কিছু দেশে নারী পাচারের ঘটনা ঘটছে। পাচার হওয়া নারীদের অনেকেই বিভিন্ন দেশে বর্তমানে নরক যন্ত্রণা ভোগ করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদেশ ফেরত দু’নারী জানান, তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করে দিনের পর দিন স্বল্প আহারে অভুক্ত রাখা হতো। সেখানে বন্দি অবস্থায় দিন কেটেছে অনেকের। অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না দেশে থাকা তার আত্মীয়স্বজন। কেউ কেউ দীর্ঘদিন নিখোঁজ রয়েছেন। আবার প্রাণ হাতে নিয়ে যারা দেশে এসেছেন তাদের অনেকেই গুরুতর অসুস্থ। অনেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছেন।

ময়মনসিংহরে ফুলপুরে থাকেন রহিমা বেগম। তিনি পাঁচ মাস হলো সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছেন। তিনি জানান, কাজ করতে গিয়ে তারা কম বেতন বা না দেয়া, অতিরিক্ত কাজের চাপ, ভাষাগত সমস্যা, মালিক কর্তৃক শারীরিক নির্যাতন ইত্যাদি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় প্রায় নিম্ন মধ্যবিত্ত বাঙালি নারীদের। এমনকি দেশে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও দেয়া হতো না।

বিএমইটির পরিসংখ্যান ২০১৮ অনুসারে প্রায় ১০১,৬৯৫ জন মহিলা কর্মী বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন করছে। জাতিসংঘের অভিভাসী বিষয়ক বিভাগের মতে, ১০ জন নারী অভিবাসন শ্রমিকদের মধ্যে ৭ জন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি তারা শ্রমের মূল্য অনুযায়ী মজুরি পান না।

এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী এনডিডব্লিউ ডব্লিউ ইউয়ের সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদা আক্তার নাহার বলেন, অভিবাসী নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে সম-অধিকার ও সমমর্যাদায় সিডিও সনদ একটি অগ্রগণ্য দলিল হিসেবে কাজ করতে পারে। ১১.৫ ধারায় সনদে স্বাক্ষরকারী সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নারী কর্মীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু অনেক অভিবাসী নারী কর্মী বিদেশে চাকরিকালে এবং চাকরি শেষে দেশে ফিরে আসার পর শারীরিক, মানসিক এবং যৌন হয়রানির শিকার হন।

বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, যে দেশে অভিবাসী নারী শ্রমিকরা গৃহকর্মী হিসেবে যাচ্ছেন তাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ধারণা না থাকায় তারা এসব সমস্যায় পড়ছেন। এভাবে তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আইন সালিশ কেন্দ্রের অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম বলেন, গত বছর ১১ নারী শ্রমিককে মধ্যপ্রাচ্য থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশি অভিবাসী নারী শ্রমিক বিনাখরচে যাওয়া-আসা ও সম্মানজনকভাবে কর্মক্ষেত্রে কাজ করবে এমনটাই হওয়ার কথা।

এরপরও কেন তারা নির্যাতনের শিকার হন এবং বিনা বেতনে ফিরে আসেন এ প্রসঙ্গে রিক্রুটিং এজেন্সি আল ফালাহ ইন্টারন্যাশনালের তোফায়েল আহমেদ বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশি অভিবাসী নারী শ্রমকিকে গৃহপরিচারিকার কাজে পাঠানো হয়। ওখানকার মালিকের ওপর তাদের বেতন ওঠানামা করে। সৌদি আরবে বাংলাদেশি অভিবাসী নারী শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা জানার পর সেখানে নারী শ্রমিক পাঠানো কমে যাচ্ছে।

মানবাধিকার কর্মী নাদিয়া নূর বলেন, বাংলাদেশের নারী কর্মীরা কাজ নিয়ে যেসব দেশে যাচ্ছেন সেখানে তারা নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তারা সেখানে শিকার হচ্ছেন শারীরিক, যৌন এবং মৌখিক নির্যাতনের। অনেকে কাজের বিনিময়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন না, যা পাচ্ছেন তা খুবই কম। আবার অনেকে বিনা বেতনেই কাজ করে যাচ্ছেন মাসের পর মাস। নির্যাতিত নারী শ্রমিকদের একটি বড় অংশ স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভুগছেন।

Bootstrap Image Preview