Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালালেন ঢাকা ব্যাংক কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০১৯, ০৬:০৩ PM
আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯, ০৬:০৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ঢাকা ব্যাংকের ফেনী শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার (ক্রেডিট) গোলাম সাঈদ রাশেব (৩৫) গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। টানা ৩ দিন ব্যাংক বন্ধ থাকার পর বিষয়টি জানাজানি হয়।

সোমবার (১৮ মার্চ) ব্যাংকে ভিড় করেন গ্রাহকরা। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা লাখ লাখ টাকা খুইয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সাঈদ রাশেব ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের বড় বাড়ির মৃত আজিজুল হক ভূঁইয়ার ছেলে।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক ও ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানায়, ফেনীতে ঢাকা ব্যাংকের শাখা চালু হওয়ার পর রাজধানী ঢাকা থেকে পড়ালেখা শেষ করে এখানে যোগদান করেন রাশেব। এ শাখায় দুই মেয়াদে প্রায় ৯ বছর চাকরি করেন তিনি। পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ফেনী শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার (ক্রেডিট) পদে দায়িত্ব পালন করেন।

'দীর্ঘ সময় চাকরির সুবাদে এখানকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। গ্রাহকরা নির্দ্বিধায় তার কাছে চেক, নগদ অর্থ ও ঋণের কিস্তির টাকা দিয়ে যেতেন।'

বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম সাঈদ রাশেব অনেক গ্রাহকের কাছ থেকে ঋণ সমন্বয়ের কথা বলে নিজে ও ব্যাংকের অন্য অফিসারদের দিয়ে ফাঁকা চেক সংগ্রহ করেন। তার গতিবিধি সন্দেহজন হলে ১২ মার্চ মঙ্গলবার ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার ঊর্ধ্বতনদের লিখিতভাবে বিষয়টি অবগত করেন। পরদিন যথারীতি অফিসে এসে সকাল সাড়ে ১০টার পর বাইরে গিয়ে উধাও হয়ে যান ওই কর্মকর্তা। চেক উত্তোলনের ম্যাসেজ পেয়ে বৃহস্পতিবার দু-একজন গ্রাহক ব্যাংকে অভিযোগ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর গ্রামের মাহবুবুল হক রিপনের অ্যাকাউন্ট থেকে হাওয়া হয়ে গেছে ৩৪ লাখ টাকা।

তিনি অভিযোগ করেন, তার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজের অধীনে ব্যাংকের এ শাখায় ৫ কোটি টাকার ঋণ চলমান রয়েছে। ঋণ সমন্বয়ের কথা বলে দুটি ফাঁকা চেক নেন চতুর গোলাম সাঈদ রাশেব। পরে অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখা যায় এ দুটো চেক ব্যবহার করে টাকাগুলো উত্তোলন করা হয়েছে।

তার ছোট ভাই ফজলুল হক পলাশের মুনতাসির এন্টারপ্রাইজ নামীয় অ্যাকাউন্ট থেকেও ৪২ লাখ টাকা একই কায়দায় তুলে নেয়া হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

এ ছাড়াও গোলাম সাঈদ রাশেব ফেনী শহরের ভিতরের বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী অজয় কুমার বণিকের লোক সসমন্বয় থেকে ৭০ লাখ টাকা, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাচ্চুটি গ্রামের মোশাররফ হোসেন মজুমদারের ৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক মাহবুবুল হক রিপন বলেন, সরলতার সুযোগ নিয়ে অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম সাঈদ রাশেব। তিনি কতজন গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন তা বলা মুশকিল। তবে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ হতে পারে।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, এ পর্যন্ত টাকা খোয়া গেছে মর্মে প্রায় ১৫ জন গ্রাহক লিখিত অভিযোগ করেছেন। সে হিসেবে ব্যাংকিং লেনদের মাধ্যমে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। তবে গোলাম সাঈদ রাশেবের সঙ্গে অনেক গ্রাহকের ব্যক্তিগত লেনদেন রয়েছে বলে অনেক গ্রহক মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা ব্যাংকের ফেনী শাখার ম্যানেজার আখতার হোসেইন সরকার জানান, ঠিক কতটি অ্যাকাউন্ট থেকে কত টাকা উত্তোলন হয়েছে এটি বলা মুশকিল। গ্রাহকরা মৌখিক ও লিখিতভাবে জানাচ্ছেন। ঢাকা থেকে আইটি এক্সপার্ট আসছে। তাদের মাধ্যমে বিষয়টি চিহ্নিত করা যাবে। প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক কথা বলে বিষয়টি দ্রুত নিস্পত্তি করার চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান।

Bootstrap Image Preview