নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে জঘন্যতম হামলায় ঝরে গেছে ৪৯ মুসলমানের প্রাণ। এই ঘটনায় আহত আরো অনেক ব্যক্তি এখন হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। অনেকে এই হামলায় ভূক্তভোগী হয়েছেন। এখনও সবার চোখে মুখে রাজ্যের শঙ্কা-আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এই হামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা শুনলে গা শিউরে ওঠে। এক প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় ক্রাইস্টচার্চ হামলা বিষয় জানান, আমি নদিয়ার বীরনগরের মেয়ে। শ্বশুরবাড়ি কলকাতায়। ভোটের সময়ে গণ্ডগোল দেখেছি। কিন্তু এমন ঘটনা কখনও দেখিনি। আমার স্বামী কৌশিক বসু এই শহরেরই একটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক। ছেলে ক্রাইস্টচার্চ ইস্ট স্কুলে পড়ে। স্কুল ছুটির সময় হয়েছে। ওর বাবা গেছে তাকে নিয়ে আসতে। বাড়ি থেকে বেরোনোর পর ফোনে কথা হয়েছিল। তার পর আর যোগাযোগ করতে পারছিলাম না।
শুক্রবার বলে শহরে সব কিছু বন্ধ। সাইরেন বাজিয়ে পুলিশের গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। গুলির শব্দও চলছে। খবর পেলাম, আমরা যেখানে থাকি, সেই লিনউডে হামলা হয়েছে। ছেলের স্কুলের সামনেও হামলা হয়েছে। ভয়ে বুক কাঁপছে! এক একটা মূহূর্ত যেন এক-এক ঘণ্টা। খালি ভাবছি, আমার যদি কিছু হয়ে যায় ছেলেটাকে আর দেখতে পাব না। ওকেই বা কে দেখবে?
জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখি, রাস্তায় লোকে ভয়ে ছোটাছুটি করছে। গুলির শব্দটা যেন এই দিকেই এগিয়ে আসছে! তখনই সরকারের থেকে জানানো হলো, কেউ যেন রাস্তায় না বেরোয়। আমাদের চুপ করে বসে থাকতে বলা হল।
ভয়ে দেশে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ফোন বা মেসেঞ্জারে যোগাযোগ শুরু করলাম। কী জানি, ওদের সঙ্গে যদি আর কখনও কথা না হয়? তার আগেই আমায় যদি... মৃত্যুকে এতো কাছ থেকে দেখিনি কোনো দিন!
কতক্ষণ এভাবে কেটে গেছে আমার খেয়াল নেই। হঠাৎ দেখি ফোনটা বাজছে— কৌশিক! স্ক্রিনে ওর নামটা দেখে প্রাণ ফিরে এল। ফোন ধরছি, তখনও হাত কাঁপছে।
কৌশিক জানাল, ওরা নিরাপদেই আছে। স্কুলের সামনে এক জায়গায় পুলিশ অভিভাবকদের ঘিরে রেখেছে। শিশুরাও নিরাপদে আছে। স্কুল থেকেই ওদের খাবার দেয়া হয়েছে। অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই।
সন্ধ্যা ৬টা টার দিকে কৌশিক ফের ফোন করে জানাল, ছেলেকে স্কুল থেকে ছাড়ছে। তাকে বাড়িতে রেখে ও আসবে আমাকে নিতে। যাক, তা-ও ভালো আছে। আর ভয় নেই।
সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে। কৌশিকের সঙ্গে বাড়ি ফিরছি। তখনও দু'পাশে থমথম করছে ক্রাইস্টচার্চের রাস্তা।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৫ মার্চ) ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় বন্দুকধারীদের এলোপাতারি গুলিতে ৪৯ জন নিহত হয়। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। নিহতদের মধ্যে ৩ বাংলাদেশিও রয়েছেন।