Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সিজারের ৬ মাস পর পেটে মিলল গজ-ব্যান্ডেজ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০১৯, ০৯:২৮ PM
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯, ০৯:২৮ PM

bdmorning Image Preview


সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়ার ৬ মাস পর গৃহবধূর পেট থেকে বের হলো গজ-ব্যান্ডেজ। ছয় মাস আগে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় পেটে গজ-ব্যান্ডেজ রেখেই সেলাই করে দিয়েছিল ডাক্তার। এতে পেটের ব্যাথা নিয়ে ছয় মাস যাবত বিভিন্ন হাসপাতাল আর ডাক্তারের কাছে ঘুরে অবশেষে ফরিদপুরে এসে ধরা পরে বিষয়টি।

ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর নাম সোফিয়া বেগম (৪০)। তিনি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার শিকার মঙ্গল ইউনিয়নের চরফতেবাহাদুর গ্রামের তোতা হাওলাদারের স্ত্রী। তিনি এর আগের দুটি সন্তান স্বাভাবিকভাবে প্রসব (নরমাল ডেলিভারি) করেছিলেন। তৃতীয় সন্তান প্রসবের সময় তার সিজার করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ফরিদপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পুনরায় অপারেশন করে তার পেটের গজ-ব্যান্ডেজ বের করা হয়েছে। ভিতরে পচন ধরায় চিকিৎসকরা তার সুস্থতার বিষয়ে কিছুই বলতে পারছেন না। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন সোফিয়া। তার অবস্থা খুবই গুরুতর।

সোফিয়া বেগমের স্বামী তোতা হাওলাদার জানান, ৬ মাস আগে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে মাদারীপুরের নিরাময় ক্লিনিকে ভর্তি করান স্ত্রীকে। সেখানকার ডাক্তার রুনিয়া স্ত্রীকে দেখে বলেন জরুরি সিজার করতে হবে। ডাক্তারের কথা শুনে সিজারে রাজি হলে সেদিনই সিজার করে মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয় সোফিয়া। কিন্তু তার পেট ব্যাথা কোনোভাবেই কমে না। প্রায় ১৫ দিন হাসপাতালে থেকে বাড়ি নিয়ে আসি স্ত্রীকে। এরপর অপারেশনের ক্ষত থেকে পুঁজ বের হতে থাকলে আবারও নিয়ে আসি ওই ডাক্তারের কাছে। তখন ডাক্তার পেটে প্রথমে ইনফেকশন পরে টিউমারের কথা বলে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করান।

তিনি বলেন, সেখানে সোফিয়া সুস্থ না হওয়ায় মাদারীপুরেই অপর এক গাইনি চিকিৎসককে দেখায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এরপরও সুস্থ না হওয়াতে তাকে নিয়ে যাই ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতালে। এরপরে বরিশাল হাসপাতালে। কিন্তু কোথাও স্ত্রীর রোগ ধরতে পারেনি, সুস্থও হয়নি।

তোতা হাওলাদার বলেন, গত ৬ মাস স্ত্রীকে চিকিৎসা করিয়ে একদম নিঃস্ব হয়ে যাই আমি। অবৈধভাবে থাকার কারণে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়ার পরে যা কিছু অবশিষ্ট ছিল সবই স্ত্রীর চিকিৎসার পেছনে খরচ হয়ে গেছে। সর্বশেষ, স্ত্রীকে নিয়ে আসি ফরিদপুরের সমরিতা জেনারেল হাসপাতালে। এখানকার সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. ফজলুল হক শোভন অপারেশন করে পেট থেকে গজ ব্যান্ডেজ বের করেছেন। বলেছেন, ভেতরে নাড়িতে পচন ধরেছে, আল্লাহকে ডাকো।

সোফিয়ার ভাগ্নে আবুল হোসেন জানান, খালাকে ফেরত পাব কি-না তা জানি না। তবে ওই চিকিৎসকের বিচার চাই , যাতে এমন যন্ত্রণা আর কাউকে ভোগ করতে না হয়।

এই ব্যাপারে সোফিয়ার পেট থেকে গজ ব্যান্ডেজ বের করা চিকিৎসক মো. ফজলুল হক শোভন বলেন, রোগীটিকে যখন আনা হয় তখনই তার পেট থেকে পুঁজ আর বিকট দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। ৬ মাস আগে রোগীর সিজার করা হয়েছিল মাদারীপুরের নিরাময় ক্লিনিকে। পরে আবারও সেলাই ওপেন করা হয়েছিল, ওরা নাকি বলেছিল পেটে টিউমারের কথা। কিন্তু আমরা টিউমার জাতীয় কিছু পাইনি।

তিনি বলেন, রোগীর স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিই। অস্ত্রোপচারে পেটের ভেতর থেকে বড় একটি দলা (অপারেশনের সময় ব্যবহৃত গজ-ব্যান্ডেজ) বের করেছি। রোগীর অবস্থা এখন খুবই ক্রিটিক্যাল। অন্তত তিন দিন না যাওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না।

Bootstrap Image Preview