Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বেঁচে যাওয়া মুসল্লিদের মুখে মসজিদে হামলার পুরো বর্ণনা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০১৯, ০৬:০৮ PM
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯, ০৬:০৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় বন্দুকধারীদের গুলিতে ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিন বাংলাদেশিও রয়েছেন। এছাড়া গুলিবিদ্ধ ৪৮ জন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর এ হামলায় যার বাঁচতে পেরেছেন তারা সৌভাগ্যবান। বেঁচে ফেরা লোকরা মিডিয়ার কাছে বর্ণনা দিয়েছে ভয়াবহ ওই হত্যাকাণ্ডের।

রক্তাক্ত শরীর নিয়ে মসজিদ থেকে বের হওয়া এক মুসুল্লী স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, আমি দেখেছি কাছ থেকে এক জনের বুকে গুলি করেছে বন্দুকধারী। আহত ওই ব্যক্তির নাম জানা যায়নি। তাকে দ্রুত চিকৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছে, অন্তত ২০ মিনিট ধরে চলেছে গোলাগুলি। আহত হয়েছে অন্তত ৬০ জন। টিভিএনজেড চ্যানেলকে তিনি বলেন, ‘আমি ভাবছিলাম কখন বন্দুকধারীর গুলি শেষ হবে। এটির জন্যই অপেক্ষা ও মনে মনে প্রার্থনা করছিলাম। হে আল্লাহ, দ্রুত তার গুলি যেন শেষ হয়ে যায়’।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, প্রথম মসজিদের পুরুষদের নামাজ ঘরে হামলা চালানোর পর মহিলাদের নামাজ ঘরের দিকে যায় বন্দুকধারী। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সে এক পাশে এসে গুলি চালিয়ে অন্যপাশে(মহিলা কক্ষ) যায় এবং তাদের ওপর গুলি চালায়। একজন মহিলা নিহত হয়েছেন বলে শুনেছি।

ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমার ভাইও ছিলো মসজিদে। জানিনা তার কী অবস্থা হয়েছে।

মসজিদের এক কোনে লুকিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন আরেক মুসুল্লি। তিনি জানান, অনেকে জানালা ভেঙে পালাতে চেষ্টা করেছেন। রেডিও নিউজিল্যান্ডকে তিনি বলেন, ‘হামলাকারী ঢুকেই গুলি চালাতে শুরু করে। যখনই মনে করেছে কেউ জীবিত আছে, সাথে সাথে তার ওপর গুলি চালাতে চেষ্টা করেছে। সে চেয়েছে মসজিদে উপস্থিত প্রত্যেকের মৃত্যু নিশ্চিত করতে।’

হামলা থেকে প্রাণে রক্ষা পাওয়া আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে জীবন বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করছিলো মুসুল্লিরা। আর হামলাকারী ক্রমাগত গুলি ছুড়ে যাচ্ছিলো। হামলাকারীর বন্দুকের গুলি শেষ হওয়ার জন্য দোয়া করছিলেন বলে জানান ওই প্রত্যক্ষদর্শী।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে আল নূর মসজিদে প্রতিদিনের মতো আজও নামায আদায় করতে মসজিদে গিয়েছিলেন আনোয়ার আলসালেহ। ছোট একটি কক্ষে যখন তিনি ওজু করছিলেন তখন হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পান। তার ওই ঘরের পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছিলেন বন্দুকধারী। তখন তিনি নিজেকে আড়াল করেন। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জন মারা গেলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি।

নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম দ্য প্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের নাগরিক আনোয়ার আলসালেহ ১৯৯৬ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডে বসবাস করছেন।

আজ মসজিদ হামলার সময় ওজুর কক্ষ থেকেই মুঠোফোনে স্থানীয় পুলিশের কাছে একাধিকারবার ফোন করেন। কিন্তু তার ফোন কেউ ধরেনি। টানা গুলিবর্ষণের সময় তিনি অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করেন। ফোনে তিনি জানান, মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় অনেকজন নিহত হয়েছেন।

এ সময় বন্দুকধারীর একটি কথা কানে আসে আনোয়ারের। বন্দুকধারী বলতে থাকেন, ‘আমি আজ মুসলিমদের মারতে এসেছি।’

আনোয়ার বলেন, ঘটনা শুরুর প্রায় ২০ মিনিট পর পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। তখন তিনি মসজিদের ভেতর অনেকগুলো লাশ পড়ে থাকতে দেখেন, তাদের মধ্যে নারি ও শিশুর লাশও ছিল।

ভালোভাবে থাকার জন্যই ১৯৯৬ সালে পাকিস্তান থেকে নিউল্যান্ডে যান আনোয়ার আলসালেহ। এরপর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের মানুষরা খুব ভালো। এখানে আমার অনেক বন্ধু রয়েছে।’

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘তিনি (বন্দুকধারী) ভিতরে ঢুকলেন এবং মসজিদের সবাইকে শ্যুট করা শুরু করলেন। তিনি আরও জানান, কমপক্ষে ৫০ বার গুলি ছুঁড়েছেন তিনি। তার সঙ্গে একাধিক ম্যাগজিন ছিলো। কয়েকশ রাউন্ড হতে পারে।

হামলাকারীর কাছে একটি বড় বন্দুক ও কয়েকশ রাউন্ড গুলি ছিলো। তিনি গায়ে মিলিটারিদের মতো পোশাক পরে ছিলেন বলে জানিয়েছেন হামলার সময় আটকে পড়া এক ব্যক্তি।

তিনি আরও জানান, হামলাকারী মাথায় হেলমেট থাকায় তার সম্পূর্ণ চেহারা দেখতে পারেননি তিনি। হাতের রক্ত কাপড় দিয়ে আটকে তিনি আরও জানান, হামলার সময় মসজিদের একটি গ্লাস হাত দিয়ে ভেঙ্গে তিনি পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। এ সময় গ্লাসের সঙ্গে লেগে তার হাত কেটে যায়।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করতে গিয়ে ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, ‘আমার জানালা ও দরজার গ্লাস ভেঙ্গে সবাইকে বের করতে হয়েছিলো। আমরা চেষ্টা করছিলাম, যেভাবেই হোক সবাইকে এই এলাকা থেকে দৌড়ে দূরে পাঠানোর। কিন্তু আমরা সবার জন্য দরজা খুলতে পারিনি।’

ফরিদ আহমেদ নামের আরেক ভাগ্যবান মুসুল্লি হুইল চেয়ারে গিয়েছিলেন নামাজ পড়তে। তিনি জানান, তার স্ত্রী বেঁচে আছে কি না সেটি নিশ্চত নন। ফরিদ টিভিএনজেড চ্যানেলকে বলেন, ‘আমি মসজিদের বারান্দায় ছিলাম। দেখলাম একজন ভেতর থেকে দৌড়ে আসছে। কিন্তু আসার পথে তাকে পেছন থেকে গুলি করা হয়। সেখানেই মারা যায় সে। তিনি বলেন, ‘ তিনি বলেন, আমি বারান্দায় থাকার কারণে দেখতে পাইনি কে গুলি চালিয়েছে। লোকরা দৌড়ে আসতে শুরু করে, অনেকের গায়ে রক্ত। বুঝতে পারলাম পরিস্থিতি ভয়াবহ। তাই দ্রুত বের হওয়া দরকার। আমি কোন মতে মসজিদের পেছন দিকে যেখানে আমার গাড়ি পার্ক করা ছিল সেখানে বের হয়ে গাড়ির পেছনে লুকিয়ে পড়ি। সেখান থেকে একের পর এক গুলির শব্দ শুনতে থাকি। কান্না আর আর্তনাদ ভেসে আসতে থাকে মসজিদের ভেতর থেকে।’

তিনি বলেন, আমি ভাগ্যবান যে হামলাকারী পেছন দিকে আসেনি। আমি দেখেছি মেঝেতে শত শত গুলির খোসা পড়ে আছে’।

আল নুর মসজিদের পর দ্বিতীয় যে মসজিদটিতে হামলা হয়েছে সেটির নাম লিনউড মসজিদ। সেই মসজিদ থেকে বেঁচে ফেরা মুসুল্লিরা বলছেন, মটরসাইকেল চালকের হেলমেট পরে বন্দুকধারী এসেই গুলি চালাতে শুরু করে। ভেতরে অন্তত একশ জন মুসুল্লি ছিলো।

স্টাফ ডট কম নামের একটি সংবাদ মাধ্যমকে প্রত্যক্ষদর্শী সাইয়েদ আহমেদ বলেন, গুলি চালানোর সময় লোকটি চিৎকার করে কিছু বলছিলো। তিনি বলেন, তার দুই বন্ধুসহ অন্তত ৮ জন নিহত হয়েছে ওই মসজিদে।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে শুক্রবারের বন্দুক হামলার পর বেঁচে যাওয়া আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তার বর্ণনায় উঠে এসেছে লোমহর্ষক সেই হামলার বর্ণনা। ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালের বাইরে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খালেদ আল-নোবানি নামের ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হামলার সময় সে গালিগালাজ করছিল, গান বাজাচ্ছিল এবং কয়েকজন বন্ধুকেও ফোন করেছিল।

তিনি জানান, গুলিতে তার এক বন্ধু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং তার তিন সন্তান সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নোবানির বর্ণানুযায়ী, দুটি বন্দুক নিয়ে আল নুর মসজিদে প্রবেশ করে সবাইকে গুলি করতে শুরু করে হামলাকারী।

তিনি বলেন, ওই সন্ত্রাসী সেখানে সম্ভবত দুই মিনিট দাঁড়িয়েছিল। তারপর সে শিশু, বৃদ্ধসহ সবাইকেই গুলি করতে শুরু করে। প্রথমে সে মসজিদের মূল ফটকে গুলি চালায়। পরে করিডোরে থাকা দু'জনকে এবং তারপর সবাইকে। আমি মসজিদের একটি দরজা থেকে বেরিয়ে গিয়ে মূল ফটকটা ভেঙে বন্ধুদের সহায়তায় আমার বাচ্চাদেরকে নিরাপদে সরিয়ে নিই।

নোবানি আরো জানান, হামলাকারীর কাছ থেকে একজন বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেছিল। বন্দুক কেড়ে নিতে একজন তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সে সরাসরি তাকে গুলি করে দেয়।

এই ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন আল-নোবানির এক বন্ধু এবং তার পাঁচ বছরের মেয়ে। তবে, পুলিশের ভূমিকায় কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আল-নোবানি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পুলিশ আসতে ২০ মিনিট সময় নিয়েছে। অথচ আমরা শহরের একেবারে মাঝখানে ছিলাম।’’ পথে কোনও ট্র্যাফিক জটিলতা না থাকায় পুলিশ আসতে সর্বোচ্চ দু'মিনিট নিতে পারত বলে মনে করেন তিনি।

এই ঘটনায় ইতোমধ্যে তার দুই বন্ধু মারা গেছেন। নিহত ওই সিরীয় শরণার্থীর পরিবারে রয়েছেন এক স্ত্রী এবং চার সন্তান। এছাড়া, হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১০জন ‘কাছের বন্ধু’।

নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় সময় শুক্রবার দেড়টার দিকে মসজিদে হামলার ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভও করেন অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা ২৮ বছর বয়সী ওই শ্বেতাঙ্গ হামলাকারী। ক্রাইস্টচার্চে ভিডিওটি অনলাইনে না ছড়াতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছে পুলিশ।

দেশটির পুলিশ কমিশনার মাইক পুশ বলেছেন, এই ঘটনায় চারজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে একজন নারী রয়েছে। তবে আরো একজন বন্দুকধারী ‘সক্রিয়’ থাকতে পারে বলে সতর্ক করেছে পুলিশ।

আটক হামলাকারীদের একজন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বলে নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। এছাড়া পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বের হতে এবং রাস্তায় নামতে নিষেধ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত স্কুলও বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে, ডানেডিনে সন্ত্রাসীরা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে শহরটিও ঘিরে রেখেছে পুলিশ। এছাড়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ক্রইস্টচার্চে সকল ধরণের বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ।

গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, অকল্যান্ডের ব্রিটমোর্ট ট্রান্সপোর্ট সেন্টার রেলস্টেশনে দুইটি পরিত্যক্ত ব্যাগ পাওয়া যায়। পুলিশ ও বোমা নিস্ক্রিয়কারী দল দ্রুতই ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরবর্তীতে ‘নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ’ ঘটিয়ে বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয় বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এছাড়া নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ক্রাইস্টচার্চ শহর কর্তৃপক্ষ। এর আগে, ডানেডিন-ক্রাইস্টচার্চ বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ডানেডিনে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা রয়েছে এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ।

কথা ছিল, সংবাদ সম্মেলনটা শেষ করে জুমা আদায় করতে ঠিক দেড়টা নাগাদ পার্শ্ববর্তী আল নুর মসজিদে যাবেন বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনটা দীর্ঘায়িত হয়েছিল বেলা ১টা ৪০ পর্যন্ত। হয়তো সেটাই রক্ষা করেছে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলকে।

সংবাদ সম্মেলন শেষ করেই জুমা ধরতে বাসে উঠেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। বাসটি পৌঁছে গিয়েছিল যথাসময়েই। টিম টাইগারের সদস্যরা তখন মসজিদের সামনে পৌঁছেও গিয়েছিলেন। মসজিদে প্রবেশ করবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে মসজিদের ভিতর থেকে মধ্য বয়সের এক নারী রক্তাক্ত অবস্থায় টলোমলো পায়ে বেরিয়ে এসে রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান। তামিমরা তখনো বুঝতে পারেননি, আসলে কী ঘটছে ভিতরে। এরপরই ভেসে আসে সতর্কবাণী। একজন চিৎকার করে বলে ওঠেন, মসজিদের ভিতর গুলি চলছে।

অবস্থা দেখে তামিম, তাইজুল, মিরাজরা দ্রুত হেঁটে এসে বাসে উঠে পড়েন। এ সময় পুলিশ ওই রাস্তা বন্ধ করে দেয়। ফলে বেশ কিছুক্ষণ বাসেই বসে থাকতে হয় তামিম, মুশফিকদের। তবে গুলির শব্দ ও আতঙ্কে তারা অনেকটা সময় বাসের ভেতর মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। এ ভাবে বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর নিরাপদে মাঠে ফিরে আসেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলন অনেক ক্রিকেটারের কাছেই একটি অস্বস্তিকর একটি বিষয়। বিশেষ করে দল হারতে থাকলে অস্বস্তি আরো বাড়িয়ে তোলে এসব অনুষ্ঠান। ফলে অনেকে এসব সংবাদ সম্মেলন এড়িয়ে যেতে পারলে বা তাড়াতাড়ি তা শেষ করে দিয়ে আসতে পারলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। কিন্তু শুক্রবার এ ঘটনার পর তামিমদের কাছে ওই সংবাদ সম্মেলনটি অনেক নিশ্চয়ই অনেক মধুর বলে মনে হচ্ছে। কারণ ওই সংবাদ সম্মেলন না থাকলে হয়তো তারা আরো আগেই মসজিদে পৌঁছে যেতেন। এমনকি ঠিক সময়মতো শেষ হলেও হয়তো হামলার মুখে পড়তে হতো বাংলাদেশ টিমকে।

দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুক্রবার সকালে লিটন দাস ও নাঈম হাসান ছাড়া দলের সবাই ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলে ওভাল মাঠে অনুশীলনে করেন। সেখান থেকেই আল নুর মসজিদে যাচ্ছিলেন জুমার নামাজে যোগ দিতে। এ দিনের হামলার পরই টুইট করেন তামিম ইকবাল। এ ঘটনাকে ‘ভয়ের অভিজ্ঞতা’ বলে উল্লেখ করে তিনি লেখেন, পুরো দলই বন্দুকধারীর হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছে। সবাই আমাদের জন্য প্রার্থনা করবেন।

চোখের সামনে এমন ঘটনা দেখে কেঁদে ফেলেন দলের অন্যতম সদস্য মুশফিকুর রহিম। মাঠে ফিরেও আতঙ্ক কাটছিল না তাঁর। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মুখপাত্র জালাল ইউনুস জানিয়েছেন, দলের বেশির ভাগ সদস্য মসজিদে যাওয়ার জন্য বাসে ছিলেন। মসজিদে ঢোকার মুহূর্তে হামলার ঘটনাটি ঘটে। আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন।

Bootstrap Image Preview