Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে সংকট বাড়বে জনজীবনে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০১৯, ১১:৫৬ AM
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯, ১১:৫৬ AM

bdmorning Image Preview


জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে জনজীবনে সংকট বাড়ছে। গ্যাসের দাম বাড়লে পরিবহন, বিদ্যুৎ ও পণ্য উৎপাদনসহ সকল খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। যার প্রভাব জনগণের ঘাড়ে চেপে বসবে। এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। গতকাল সকালে টিসিবি ভবনের দোতলায় যখন গ্যাসের দাম বৃদ্ধির শুনানি চলছিল, তখন নিচে মূল ফটকের সামনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির শুনানি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। তারা বলেন, কোনোভাবেই গ্যাসের দাম বাড়ানো যাবে না। কারণ, সব কোম্পানি লাভ করছে। এখানে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না। দাম বাড়ালে শিল্প-কারখানা অচল হয়ে যাবে। পরিবহন খাতে অরাজকতা দেখা দেবে। সার্বিক অর্থনীতিতে অশনিসংকেত দেখা দেবে। গ্যাসের দাম বাড়ালে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে গণফোরাম।

শুনানিতে মনোয়ার ইসলাম বলেন, বিতরণ কোম্পানি যা চায়, সেই হারে কখনোই দাম বৃদ্ধি করা হয় না। চাওয়ার তুলনায় অনেক কম বৃদ্ধি করা হয়। দাম না বাড়ালে বিতরণ কোম্পানি অসন্তুষ্ট হয়। আবার দাম বৃদ্ধি পেলে ভোক্তারা ভালো চোখে দেখে না। কমিশনের কাছে করা ২০০৯ সাল এবং এর পরবর্তী আবেদন ও মূল্যবৃদ্ধির শতকরা হার তুলে ধরে চেয়ারম্যান বলেন, ২০০৯ সালে বিতরণ কোম্পানিগুলোর ৬৫ দশমিক ৯২ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেড়েছিল ১১ শতাংশ। এখানে পর্যায়ক্রমে ২০১৫ সালে ৪০ দশমিক ৭৯ শতাংশ দাম বৃদ্ধির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ শতাংশ, ২০০৭ সালে ৯৫ শতাংশের বিপরীতে ১১ শতাংশ দাম বাড়ে। এর পর ২০১৮ সালে ৭৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধির আবেদনে কোনো দাম বাড়েনি। এবার বিতরণ কোম্পানিগুলো সংশোধিত প্রস্তাবে ১০২ শতাংশ দাম বৃদ্ধির আবেদন করেছে। তবে এতটা দাম বৃদ্ধি পাবে না জানিয়ে মনোয়ার ইসলাম বলেন, আইনের মধ্যে থেকেই যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করবে কমিশন।

পেট্রোবাংলার পরিচালক হারুন উর রশীদ বলেন, ৫০ কোটি এলএনজি আমদানি করায় নয় মাসে নয় হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। তিনি বলেন, মুনাফা নয়; নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করতে চাই, আপনারাও চান। সে কারণে আমদানি করতে হচ্ছে। আর আমদানি করতে হলে দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই। দেশীয় তেল-গ্যাস আহরণে সেভাবে কাজ না হওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, দক্ষ লোকবলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সাগরে তেল-গ্যাস আহরণে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা নেই। বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে চাইলেও বাংলাদেশের মডেল পিএসসির দাম আকর্ষণীয় নয়। সে কারণে সংশোধনীতে দাম আকর্ষণীয় করা হচ্ছে।

সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভারশন ওয়ার্কস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর ভূইয়া বলেন, ৩২ টাকা থেকে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে সিএনজির দাম ৪৮ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এর প্রভাব কী হতে পারে, কেউ ভাবছেন না। এই ঢাকায় একসময় কালো ধোঁয়ায় থাকা যেত না। সে কারণে সিএনজিতে যাওয়া হয়। পরিবেশ দূষণের বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার।

উল্লেখ্য, গতকাল কর্ণফুলী ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তাদের প্রস্তাবে আবাসিকে এক চুলার বর্তমান দর ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৩৫০ টাকা, দুই চুলা ৮০০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৪৪০ টাকা এবং প্রি-পেইড মিটারে ৯ দশমিক ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ দশমিক ৪১ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যুতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম তিন দশমিক ১৬ থেকে বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৭৪ টাকা, সিএনজিতে ৩২ থেকে বাড়িয়ে ৪৮ দশমিক ১০ টাকা, সার উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার ২ দশমিক ৭১ থেকে বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৪৪ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯ দশমিক ৬২ থেকে বাড়িয়ে ১৮ দশমিক শূন্য ৪ টাকা, শিল্পে ৭ দশমিক ৭৬ থেকে বাড়িয়ে ২৪ দশমিক শূন্য ৫ টাকা এবং বাণিজ্যিকে ১৭ দশমিক শূন্য ৪ টাকার পরিবর্তে ২৪ দশমিক শূন্য ৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে তারা বিতরণ চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

দুই গ্যাস কোম্পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বিষয়ে বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটির পক্ষে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রতিদিন গড়ে ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি বিবেচনায় গ্যাসের গড় সরবরাহ ব্যয় দাঁড়ায় প্রতি ঘনমিটার ৭ টাকা ৯২ পয়সা। অন্যদিকে, প্রতিদিন গড়ে ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ বিবেচনায় গ্যাসের সরবরাহ ব্যয় দাঁড়ায় প্রতি ঘনমিটারে ১১ টাকা ৭৭ পয়সা। অন্যদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ বিবেচনায় গ্যাসের গড় সরবরাহ ব্যয় প্রতি ঘনমিটারে ১২ টাকা ৪৩ পয়সা হবে।

Bootstrap Image Preview