স্পা ও বডি ম্যাসাজ সেন্টারের আড়ালে দেহ ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন ভুয়া সিআইডি বানিয়ে আলোচিত চাকরিচ্যুত করা আফরিন শিমু (২৪)। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৩ নম্বর সেক্টরের রেইনবো ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি স্পা ও বডি মেসেজ সেন্টার থেকে তাকে গ্রেফতার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। এসময় আরও ৬ নারীসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
অন্যান্যরা হলেন, কথা মনি (২২), তনু আক্তার (২৪), নিলি খানম (২৪), ঝর্না আক্তার ওরফে টুম্পা (২৬), সীমা (২৮) সুভ্রা চামা (২৪) ও অজ্ঞাত এক যুবক।
এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুশফিকুর রহমান জানান, ‘উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টর থেকে স্পা ও বডি মেসেজের আড়ালে দেহ ব্যবসার অভিযোগে সাত নারীসহ আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে থানায় দিয়ে এসেছি। বাকিটা থানার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবেন।
অভিযানের নেতৃত্বদানকারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইয়াদুর রহমান বলেন, ‘আমাকে পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম স্যার ওই খানে কি হয়েছে তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠান। পরে আমি সেখোনে গিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ দেখতে পেয়ে আট জনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসি। তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা সিনিয়র স্যারেরাই ভালো জানেন’।
এ ব্যাপারে থানায় পরিদর্শক (অপারেশন) আলমগীর গাজীর বলেন, ‘আমি ছুটিতে রয়েছি। তাই গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা জানা নেই। গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জেনে আমি তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে এসেছিলাম। তাকে টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কশিনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল জানান, ‘অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাদি প্রয়োজন। কিন্তু বাদী না থাকায় তাদেরকে আদালতে পাঠানো হবে। আদালত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।’
পুলিশ বাদি হয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তারা সেচ্ছায় এ কাজে এসছে, তাদেরকে কেউ জোর করে নিয়ে আসে নি। তাই তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেন নি।’
ভ্রাম্যমাণ আদালতে পাঠানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি উত্তরায় এসেছি প্রায় এক বছর হয়। আমি থাকা কালীন সময়ে এসব অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে কখনো কোন মামলা দিয়েছি বলে শুনেছেন। সবাইকে আদালতে পাঠিয়েছি আদালত ব্যবস্থা নিয়েছে। এদেরকেও আদালতে পাঠানো হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মবর্তা জানান, স্পা ও দেহ বডি মেসেজ সেন্টারটির মালিক আফরিন শিমু। সে খুলনা জেলার সোনাভাঙ্গা থানাধীন বয়রা এলাকার আছাদুজ্জামানের মেয়ে। দীর্ঘ দি যাবত উত্তরার বিভিন্ন স্থানে দাপটের সাথে স্পার নামে দেহ ব্যবসা করে আসছিল। এছাড়াও সে নিজেকে এমপি ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিতে এসব অসামাজিক কাজ চালিয়ে আসছিল।
পুলিশের এই সূত্রটি আরো জানান, গত দেড় বছর পূর্বে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন জসিম উদ্দিন কাঁজাবারের পাশের তার একটি স্পা সেন্টার ছিল। সেখানে তিনি একই কার্যকলাপ করত। এতে বাধা দিয়েছিলেন উত্তরা পশ্চিম থানার সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মানিক ঘোষ। পরে তার আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) পোস্টিং হলে তাকে কৌশলে সেখানে ডেকে নিয়ে যায় শিমু। অত:পর তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে এনে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় তাকে ব্যধ্যতামূলক অবসরে পাঠান এপিবিএন এর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
অপরদিকে থানা পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, পুলিশের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুত করার ঘটনার পর থেকে পুলিশের মাঝে আতঙ্কের নাম শিমু। ফলে গ্রেফতার হওয়া আট জনের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নিয়েও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন থানা পুলিশের কর্মকর্তারা।