Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

মরা খাল হয়ে বুক ভরা বালিতে স্মৃতি বহন করছে নওগাঁর 'পুনর্ভবা নদী'

গোলাপ খন্দকার, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০১৯, ১০:০০ AM
আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯, ১০:০০ AM

bdmorning Image Preview


দীর্ঘসময় ধরে পুনঃখনন না হওয়ায় পলি ভরে নাব্যতা হারাচ্ছে পুনর্ভবা নদী। চৈত্র মাস আসতেই এবার নওগাঁর সাপাহার উপজেলার সীমান্তবর্তী এক কালের খর স্রোত পুনর্ভবা নদীর পানি শুকিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। নৌকা চলার মতো পানিটুকুও নেই নদীতে, নৌকা বেধে বাড়ি গিয়ে বসে আছেন মাঝিরা, বেকার হয়ে পড়েছে জেলেরা, সেচের অভাবে মাথায় হাত কৃষকের।

নদীবক্ষ এখন দিনে এলাকার কৃষকের ফসলের মাঠ, বালক-বালিকাদের খেলার মাঠ ও রাতের আঁধারে চোরাকারবারীদের গবাদিপশুসহ হরেক রকম চোরাই পণ্য পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এক সময় সারা বছর পানিতে পরিপূর্ণ থাকা নদীটি এখন শুধুই স্মৃতি আর মরা খাল হয়ে বুক ভরা বালি নিয়ে তার স্মৃতি বহন করে চলেছে মাত্র।

জানা গেছে, নদীটি ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ও মালদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বামন গোলা ও তপন থানার করদহ ও বটতলী এবং লক্ষ্মী নারায়ণ গ্রামের কোল ঘেঁষে বাংলাদেশের সাপাহার উপজেলার পাতাড়ী, হাঁড়িপাল, আদাতলা, কলমুডাঙ্গা ও পোরশা উপজেলার দুয়ারপাল উপজেলা সদর নিতপুরের কোল ঘেঁষে গোমস্থাপুর হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দা নদীতে মিলিত হয়েছে।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, এককালে বার মাসই বহমান ছিল এই পুনর্ভবা নদী। ব্রিটিশ ও পাকিস্থান শাসনামলে এলাকার সকল রাস্তাঘাটগুলো অবহেলিত অবস্থায় থাকায় সে সময়ে এই নদীই ছিল বিভিন্ন শহরের সঙ্গে যোগাযোগের এক মাত্র পথ। নদীর বুক চিরে ছোট বড় হরেক রকম নৌকা দিয়ে মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করে থাকত। এমন কি নদীতে বিয়ের বরযাত্রীদের নৌকার বহরও চোখে পড়ত। এসময় এ নদীতে চলত মাল বোঝাই ছোট বড় নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। নৌকায় করে মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল ধান, গমসহ বিভিন্ন পণ্য বহন করত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর হাটে। অনেকেই বিভিন্ন কাজে এ পথে নৌকাযোগে রহনপুরে গিয়ে ট্রেনযোগে রাজশাহী, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে থাকত।

সে সময় পাতাড়ীর কাবলীর ঘাটসহ বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে নৌকা ভিড়তো। অতীতে এলাকায় কোন গভীর, অগভীর নলকূপ না থাকায় ঠাঁঠা বরেন্দ্র এলাকায় এ নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে এলাকার মানুষ শত শত একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করত।

বর্তমানে দেশের শহর বন্দরসহ গ্রামাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এই নদীর উজানে ভারতীয় অংশে ভারত সরকার বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রসস্থ হওয়ায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে নদীর শাসনব্যবস্থা, নদীও হারিয়ে ফেলেছে তার নাব্যতা।

এখন অতি সহজে মানুষ বাস, ট্রাকযোগে স্বল্প সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে। সহজেই তারা তাদের বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করতে পারছে। এখন নদীপথের প্রয়োজন অনেকটাই ফুরিয়ে গেছে। ফলে সীমান্ত এলাকার এই পুনর্ভবা নদীটি হারিয়ে ফেলেছে তার অতীত ঐতিহ্য। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির তোড় ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীটি তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পেলেও চৈত্র মাস আসতে না আসতেই নদীটি মরা খালে পরিণত হয়। বুক ভরা বালি নিয়ে শুধুই স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। খরা মৌসুমে হঠাৎ কেউ দেখলে মনেই হবে না, এটি একটি প্রবহবান নদী।

র্তমানে সীমান্ত ঘেঁষা পুনর্ভবা এই নদীটি ড্রেজিং ব্যবস্থায় সংস্কার করে তার নাব্যতাকে ফিরিয়ে আনলে নদীটি ফিরে পেত তার পূর্ণ যৌবন। সেই সঙ্গে কৃষি কাজে ব্যবহার হতো তার পানি। উপকৃত হতো নদীপাড়ের হাজার হাজার মানুষ। বর্তমানে নদীটির উত্তরে দেশের অভ্যন্তওে উৎপত্তিস্থল উত্তর পাতাড়ী গ্রাম থেকে দক্ষিণে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ১২০ মিটার দেশের অভ্যন্তরে নদীর পূর্ব পাড়ে ব্লক বসিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ হয়েছে। নদীর পাশাপাশি পানি নেই খালে বিলে। খনন করা হলে পানি থাকবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। বাঁধ নির্মাণের পর সীমান্ত এলাকার অবহেলিত জনপদের উন্নয়নে এলাকাবাসী নদীটি সংস্কারের জন্য সরকারের সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন। 

নদী বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কল্যাণ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার নদী বান্ধব সরকার। নদী রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী কাজ করে চলেছে তারই ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসকও কাজ করে চলেছে। আমরা জেলা ও উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির নিয়মিত সভায় নদীর ড্রেজিং পুনঃখনন এর কর্মপরিকল্পনা করেছি এগুলো আমরা উধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট পাঠিয়ে দ্রুত নদীর পুনঃখনন কাজ করে নদীর যৌবন ফিরিয়ে এনে কৃষক, জেলে, মাঝি ও এলাকাবাসীর সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো।

Bootstrap Image Preview