Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মুক্তিযোদ্ধা কন্যার সংগ্রামী জীবন 

পাভেল সামাদ, বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০১৯, ০৯:৪৫ AM
আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯, ০৯:৪৫ AM

bdmorning Image Preview


বোধের পর থেকেই অভাব-অনটনের সাথে পরিচয় তার। পড়ালেখার প্রচণ্ড ইচ্ছে থাকলেও অর্থাভাবে থেমে যায় তার সে ইচ্ছেটাও। মনে জেদ চেপে বসে কিছু একটা করার। কিছু একটা করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নিজেকেও স্বাবলম্বী করে তোলার।

সেই জেদ থেকেই নবম শ্রেণীতে লেখাপড়ার বিরতি টেনে নেমে যান দর্জির কাজে। টানা সাত বছর কাজ করেন অন্যের দোকানে। তারপর কিছু টাকা নিয়ে নিয়ে নেমে পড়ে দর্জি ব্যবসায়। বিশ্বনাথের অভিজাত মার্কেট আল-হেরা শপিং সিটিতে খুলে বসেন দর্জির দোকান। চার বছর ধরে চালিয়ে আসা এই ব্যবসার আয় দিয়েই এখন একা টেনে নিচ্ছেন নিজের পরিবার।

শুধু তাই নয়, তার এ দোকানে কর্মসংস্থান হয়েছে আরও ৯ জন বেকার ছেলে ও মেয়ের। মনের জেদে ঘুরে দাড়ানো এই নারীর নাম লাজি আক্তার মীম। দেশের এক সূর্যসন্তান উপজেলা মন্ডলকাপন গ্রামে বসবাস করা বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আরশ আলীর মেয়ে তিনি। মীম বর্তমানে সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর বিশ্বনাথ উপজেলা শাখার সদস্য।

কথা হলে লাজি আক্তার মীম জানান, আমার আব্বা একজন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু আমাদের নিজেদের কোনো নিজস্ব জায়গা ও বাড়ি-ঘর নেই। আপাতত ভাড়া বাসায়ই থাকি আমরা। আমার আব্বা যে ভাতা পান তা দিয়ে ঠিকমত তার চিকিৎসাই চালানো যায় না। তিনি দীর্ঘদিন ধরে যক্ষা রোগে আক্রান্ত। আমার বড় বোন স্বামী পরিত্যক্তা।

দ্বিতীয় যে বোন আমার তিনিও দর্জির কাজ করে সংসার চালাতেন। কিন্তু তার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আমরা চরম বিপাকে পড়ে যাই। আমি তখন দক্ষিণ বিশ্বনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। বিয়ে হয়ে যাওয়া বোনের কাছ থেকে দর্জির কাজ আগেই থেকে শিখে নেয়ায় লেখাপড়ার ইতি টেনে আমি বিশ্বনাথের আল-হেরা শপিং সিটির একটি দোকানে কাজ নিয়ে সংসারের হাল ধরি।

বর্তমানের একই মার্কেটের তৃতীয় তলায় আমার 'নিউ লেডিস ফ্যাশন টেইলার্স' নামে আমার নিজস্ব দোকান আছে। এই দোকান থেকে প্রতি মাসে আনুমানিক ৩০ হাজার টাকার মত আয় হয়। যা দিয়ে আমার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত খরচাপাতি চলে।

তিনি আরও বলেন, যখন অন্যের দোকানে কাজ করি, তখন কাজের ফাঁকে লেখাপড়া করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হই। পরে দক্ষিণ বিশ্বনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হই।

তবে, অর্থাভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া সম্ভব হয়নি। আমি সবসময়ই নিজের পায়ে দাড়াতে চেষ্টা করেছি। কারো উপর নির্ভরশীল হতে চাইনি। যে কারণে এখন নিজেকে সফল মনে করি। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা হলেও সরকার তাকে এখনও কোনো নিজস্ব জায়গা ও বাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়নি।

তবে, আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আমার ব্যবসার টাকা থেকে নিজেদের জন্যে একখণ্ড জায়গা ও একটি বাড়ি করার। 


 

Bootstrap Image Preview