উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় পটুয়াখালীর সাগরপাড়ের মানুষের কেটে গেছে জলোচ্ছ্বাসসহ সাগরের অব্যাহত ভাঙ্গন আতঙ্ক। কিন্তু কাজের শুরুতেই বেড়িবাঁধের স্লোপে মাটির বদলে লোনা পানি মিশ্রিত বালু দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে ভাঙ্গন থেকে বেড়িবাঁধ রক্ষাসহ মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার এমন কাজে ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষ এখন রয়েছেন উৎকন্ঠায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানা যায়, জেলার কলাপাড়া উপজেলার ৪৮ নম্বর পোল্ডারে সাগরঘেঁষা লতাচাপলী, ধুলাসার, কুয়াকাটা পৌর এলাকার ৩৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পুনরাকৃতিকরণের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। কুয়াকাটার ভাঙন রোধসহ পর্যটন নগরীকে পর্যটকের কাছে আকর্ষনীয় করতে এবং মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় এমন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ করছে চায়নার চংচিং ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন (সিকো)। কৃষিকাজের সুবিধার্থে প্রকল্পের আওতায় তিনটি স্লুইস মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। নতুন করে নির্মিত হচ্ছে আরও ৮টি স্লুইস। আশাখালী পয়েন্টের স্লুইস নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। শেষের পথে ফাঁসিপাড়া স্লুইসের নির্মাণ কাজ।
সাড়ে ২৪ ফুট উচ্চতায় হচ্ছে ২২ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ। পর্যটকের বসার জন্য সিসি ব্লক প্লেসিং করে বেঞ্চি করা হবে। এসব কাজ ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানায়, বাঁধের নিচের স্লোপ থেকে টপ পর্যন্ত শুকনো মাটি দিয়ে কাজ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু রাতের আধাঁরে লেম্বুর চর এলাকায় জোমাদ্দার বাড়ির কাছে প্রায় ৫০০ মিটার বাঁধে বালু দেয়া হয়। স্থানীয় একটি চক্রের হোতা প্রকল্পের মাটি সরবারকারী মোশাররফ মোল্লা বাঁধের নিচের দিকের স্লোপে বালু দিয়ে ভরাট করে দেয়।
স্থানীয়রা বাধাঁ দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। একদিন পরে বালু অপসারণের কথা বলে ফের কাজ শুরু হয়। বালি অপসারণে বাধ্য হয়। এসময় গণমাধ্যমকর্মীরা ছবি তুলতে গেলে তাদেরও বাঁধা প্রদান করা হয়।
স্থানীয় আলী হোসেন জোমাদ্দার জানান, পশ্চিম খাজুরা এলাকায় বাঁধের প্রায় ৪৫০ ফুট দীর্ঘ, ১০ ফুট প্রস্থ বাঁধের স্লোপে বালু দিয়ে ভরাট করা হয়। রাত ৩টায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় সুবিধাভোগী চক্র এ নির্মাণ কাজ করে।
কৃষক মিলন ও জসিম জানান, বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে আসলে তারা বাঁধা দেয়। এ নিয়ে কুয়াকাটা পৌর মেয়র বারেক মোল্লার ভাই মোশাররফ মোল্লার সাথে তাদের বাকবিতন্ডা হলে ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করেন তারা।
এ বিষয়ে জানার জন্য মোশারফ মোল্লার মুঠোফোনে (০১৭৯৫১২৫৭০৩) বেশ কয়েকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ করেন নি।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিকো’র পোল্ডার ম্যানেজার মি. জাং এবং দোভাষী জহির জানান, তাদের অগোচরে এ কাজ করা হয়েছে। ঢেউয়ের ঝাপটা ঠেকানোর জন্য বালু ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রকল্পের পরামর্শক পাউবোর সাবেক প্রধান প্রকৌশলী দিদারুল আলম জানান, বালু দিয়ে ঢেউয়ের ঝাপটা ঠেকানোর কাজ করা হয়েছে। এমন অভিযোগ সঠিক নয়। তবে মোশাররফ মোল্লা কে? কেন তিনি এলাকাবাসীকে ধমকেছেন? এ নিয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি এ পরামর্শক।