১৫৭ জন আরোহী নিয়ে আদ্দিস আবাবা থেকে নাইরোবি যাওয়ার পথে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। উড্ডয়নের মাত্র ছয় মিনিটের মাথায় বিধ্বস্ত বিমানটির পাইলট-ক্রুসহ কেউই বেঁচে নেই। নিহতদের মধ্যে ৩৩ দেশের নাগরিক রয়েছেন।
রবিবার সকালে আদ্দিস আবাবার বোল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৮ জন ক্রুসহ ১৫৭ আরোহী নিয়ে বিমানটি কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির উদ্দেশে যাত্রা করেছিল।
দেশটির সরকারি ওই বিমানসংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বোয়িং-৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমানটি বোল বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩৮ মিনিটে উড্ডয়ন করে। ছয় মিনিট পর ৮টা ৪৪ মিনিটে বিমানটির সঙ্গে রাডারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আদ্দিস আবাবা থেকে ৬২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বদিকের বিশোফতু শহরের কাছে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, বিশোফতু শহরের আশ-পাশে উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিমানটিতে ১৪৯ জন আরোহী এবং আটজন ক্রু ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কী কারণে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে সে ব্যাপারে এখনো কোনো পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যায়নি।
দেশটির সরকারি সম্প্রচার মাধ্যমকে বিমান সংস্থাটির মুখপাত্র বলেছেন, ইথিওপিয়া এয়ারলাইন্সের বিধ্বস্ত বিমানটির ১৪৯ আরোহী ও আট ক্রুর সবাই মারা গেছেন।
সরকার ও ইথিওপিয়ার জনগণের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় টুইটারের মাধ্যমে জানিয়েছেন, আজ সকালে কেনিয়ার নাইরোবিতে নিয়মিত নির্ধারিত ফ্লাইটে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস বোয়িং ৭৩৭ এ তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে এমন পরিবারের প্রতি তাদের গভীরতম সমবেদনা জানায়।
আফ্রিকা মহাদেশের বিমান সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ বিমান সংস্থা হিসেবে মনে করা হয় ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সকে। গত বছর এই এয়ারলাইন্স বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় এক কোটি যাত্রী পরিবহন করে।
ইথিওপিয়ার এই বিমানের প্রস্তুতকারী সংস্থা বোয়িং বলছে, তারা অত্যন্ত নিবিড়ভাবে বিমান বিধ্বস্তের এ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে। মাত্র দুই বছর আগে নতুন বোয়িং-৭৩৭ ম্যাক্স ৮ তৈরি করা হয়। এর পরে ইথিওপিয়া এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হয় ২০১৮ সালে। তবে একই মডেলের অপর একটি ইন্দোনেশীয় বিমান পাঁচ মাস আগে বিধ্বস্ত হয়। ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের ওই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ১৯০ জনের প্রাণহানি ঘটে।
আফ্রিকার অনেকগুলো এলাকায় ইথিওপীয় এয়ারলাইন্সের বিমানগুলো যাতায়াত করে থাকে। বিবিসির ভাষ্য অনুযায়ী, আফ্রিকা মহাদেশে এ এয়ারলাইন্সের বিমান বেশ জনপ্রিয়। নিরাপত্তার দিক থেকে এগুলোর বেশ ভালো সুনাম রয়েছে। অবশ্য, ২০১০ সালে কোম্পানিটির একটি বিমান বৈরুত থেকে যাত্রা করার পর পরই ভূমধ্যসাগরে বিধ্বস্ত হয়েছিল। ওই ঘটনায় বিমানের ৯০ আরোহীর প্রাণহানি হয়।
এর আগে ১৯৯৬ সালের নভেম্বরে আদ্দিস আবাবা থেকে নাইরোবি যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছির ইথিওপীয় এয়ারলাইন্সের একটি বিমান। ওই বিমানের জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় একটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এরপরও বিমানটি জরুরিভাবে পানিতে অবতরণের প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন পাইলট। তবে শেষ পর্যন্ত বিমানটি ভারত মহাসাগরে একটি প্রবাল প্রাচীরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে বিমানে থাকা ১৭৫ আরোহীর মধ্যে ১২৩ জন প্রাণ হারায়।