Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘আজ যা হইছে তার জন্য নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারব না, সরি মা’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ মার্চ ২০১৯, ১০:১১ PM
আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯, ১০:১১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


‘নামাজ পড়তে আয়, নামাজ পড়লে মন ভালো হয়, কষ্ট দূর হয়।’ প্রতিউত্তরে ফাতেমা বলেন, ‘কষ্ট নারে... কাল না আমার ওই কাজগুলো করা ঠিক হয়নি...ভালো তো বাসি রবিউলরে.... এখন নিজের কাছে নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে।’

গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে প্রিয় বান্ধবী রোকেয়া সুলতানার সঙ্গে ফেসবুকের চ্যাট বক্সে শেষ কথা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ফাতেমার।

এর আগে গত বৃহষ্পতিবার রাততে ‘লীল প্রজাপতি’ নামের নিজ ফেসবুকে লিখেছিলেন ‘মানুষের জীবনে তার সবচেয়ে কাছের মানুষ হলো মা। আর মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে অন্যায় কাজ করলে তো ফল ভোগ করতে হবে। হয়তো সেইগুলোই ভোগ করছি। আজ যা হইছে তার জন্য নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারব না। কোনো কিছু হওয়ার আগেই সমাধানটা করে দিয়ে যাব। সব সমাধান হবে। সরি! মা। আই লাভ ইউ মা।’

এর পর শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর পল্লবীর-১১ নম্বর সেকশনের বাউনিয়াবাধ ই- ব্লকের ১১/২৩ নম্বরে মামার বাসা থেকে ১৮ বছর বয়সী ওই তরুণীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে তার স্বজনরা।

আজ শনিবার ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

ফাতেমার ঘনিষ্ট বান্ধবী বঙ্গবন্ধু কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রী মৌসুমী সুলতানা রোকেয়া বলেন, ‘এবার মেয়র নির্বাচনে মিরপুর এলাকায় সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার সময় আক্তার নামের এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় ফাতেমার। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত বৃহষ্পতিবার তারা বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়েছিল। পার্কে তাদের মধ্যে শারীরিক সর্ম্পক হয়েছিল বলে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমার বাসায় এসে জানিয়েছিল ফাতেমা। এ সময় ফাতেমা মোবাইল ফোনে আক্তারকে ধরিয়ে দেয় আমাকে। তখন আক্তার বলেছিল ওর (ফাতেমা) মাথা খারাপ, খালি বিয়ের কথা বলে। যোগাযোগ রাখা যেতে পারে, কিন্তু ফাতেমাকে বিয়ে করতে পারব না। তাহলে সর্ম্পক করেছিলেন কেন, শারীরিক সর্ম্পক করেছিলেন কেন? জানতে চাইলে সেলফোনের লাইন কেটে দিয়েছিলেন আক্তার। এরপর বিমর্ষ মনে বাসায় ফিরে গিয়ে ফেসবুকে তার মাকে উদ্দেশ্য করে শেষ স্ট্যাটাস দেয় ফাতেমা।’

পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল ওয়াদুদ জানান, ফাতেমার তিন মাস বয়সে বাবা হাবিবুর রহমান তাদের ছেড়ে যান। জীবিকার তাগিদে প্রায় ছয় বছর আগে ফাতেমার মা মমতাজ বেগম কুয়েতে যান। মা-বাবা না থাকায় বড় ভাই মামুন হোসেনের সঙ্গে বাউনিয়াবাধ ই ব্লকে মামার বাসায় থাকতেন ফাতেমা।

আবদুল ওয়াদুদ আরও জানান, ফাতেমাকে বাসায় রেখে গতকাল দুপুর ২টার দিকে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যায় পরিবারের অন্যরা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঘরে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ফাতেমার ভাই মামুন টিনের বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখেন, টিনের চালের লোহার অ্যাংগেলের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে আছেন ফাতেমা। কৌশলে দরজার ছিটকিনি খুলে অচেতন অবস্থায় ফাতেমাকে স্থানীয় আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যায় তার স্বজনরা। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে খবর পেয়ে ওই কলেজ শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, কলেজছাত্রী ফাতেমা আত্মহত্যা করেছেন। তবে এ ধরনের ঘটনায় প্ররোচনার বিষয়টি থাকতে পারে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে কীভাবে ওই তরুণী মারা গেলেন তা জানা যাবে। তদন্তে এই মৃত্যুর পেছনে কেউ দায়ী হলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’

Bootstrap Image Preview