Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মর্যাদাহানীর দুঃখের পদত্যাগে কার লাভ, কার ক্ষতি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ মার্চ ২০১৯, ০৬:১৭ PM
আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯, ০২:০০ PM

bdmorning Image Preview
পদত্যাগপত্র নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে যাচ্ছেন ড. মিজানুর রহমান।ছবি: সংগৃহীত


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষের পদ থেকে মর্যাদাহানীর অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেছেন ড. মিজানুর রহমান। যিনি ইতিপূর্বে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। গতকাল শুক্রবার টেলিভিশন ও অনলাইন এবং আজ প্রিন্ট গণমাধ্যমগুলো এই সংবাদটি গুরুত্বের সাথে প্রচার ও প্রকাশ করেছে।

লিমনের উপর র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ান (র‍্যাব)র গুলির ঘটনায় লড়াই করার কারণে ড. মিজান 'মানুষ মিজান' নামে রাষ্ট্রে পরিচিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান থাকাকালে। শুক্রবার নিজের অধিকার আদায় করতে গিয়ে অপমানে পদত্যাগ করেছেন!

গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ড. মিজানের ছেলে জুমআর নামাজে জায়নামাজ বিছাতে গিয়ে এক ছাত্রনেতার সাথে তার কথা-কাটাকাটি হয়। ফলে ড. মিজানের ছেলেকে মেরে চশমা ভেঙে ফেলে। বিষয়টি জানতে তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা ড. মিজানের সাথে খারাপ আচরণ করে কার্যালয়ে ২ ঘণ্টা আটক রেখে পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে। আর ড. মিজান নিজের সম্মান বাঁচাতে 'মর্যাদাহানীর দুঃখে' পদত্যাগ করেন।

প্রশ্ন হচ্ছে মসজিদে একজন অপর জনের সাথে পায়ের সাথে পা, কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে এটাই ধর্মীয় রীতি। অনেক সময় সিজদা দিতে গিয়ে পেছনের সেজদারত ব্যক্তির মাথায় পা লেগে যেতে পারে স্থান স্বল্পতার কারণে। এই নিয়ে ইস্যু বানালে কীভাবে চলবে?

ঢাবির শিক্ষক মণ্ডলীর মধ্যে ড. মিজানকে দেশবাসী ভিন্নভাবে চেনে-জানে। তার স্পষ্ট কথাবার্তা জাতিকে অনুপ্রাণিত করতো। মানুষের অধিকার আদায়ে তার প্রচেষ্টা ছিল ইতিবাচক যদিও তিনি তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারণে সার্বিকভাবে সফল হতে পারেননি। সেই মানবাধিকার আদায়ে লড়াকু মানুষ, মিজানকে পদত্যাগের ঘটনা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হলো।

ডাকসুর হল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এমন ছাত্রের দাপটে তাকে পেছনে ফিরে যেতে হলো!

বিষয়টি আমাদেরকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। আহত করেছে। দুঃখিত করেছে। ব্যথিত করেছে। কোন শিক্ষকমণ্ডলীও তার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেননি যখন তাকে ঘণ্টা দুই বন্দি করে রাখা হয়। এসেছেন ঢাবি চাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ। অন্তত শিক্ষকের সম্মান বাঁচাতে অপর ক'জন শিক্ষক আসতেই পারতেন। আসেননি। কারণ তাদের তো পদত্যাগ দাবি করেনি?

আমাদের দেশে এটা স্বাভাবিক বিষয় একজন অপর জনকে পছন্দ না হলে তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করেন। মিথ্যা কথা প্রচার করেন। এটি মসজিদ, মন্দিরসহ নানা প্রার্থনাগৃহে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, মাঠে-ঘাটে, বাজারে-দোকানে। এটি খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ যারা অযথা নানা অভিযোগ আনে তাদের চরিত্র সকল স্থানেই এক ধরনের ক. অহংকারী, খ. স্বার্থবাদী, গ. বেয়াদব, ঘ. মর্যাদা-ব্যক্তিত্বহীন, ঙ. অন্যকে হেয়কারী অর্থাৎ এই চরিত্রের লোকগুলোই সাধারণত অন্যকে মর্যাদাহানীর বিষয়ে মিছিল, বিক্ষোভ, অভিযোগের কুৎসা রটনায় অগ্রগামী।

ড. মিজানের ছেলে নাকি রায়হান নামের এক ছাত্রকে 'দুই টাকার ছাত্র' বলে তাচ্ছিল্য করেন? ফলে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে হল সংসদের ভিপি পদপ্রার্থী শাহরিয়ার সিদ্দিক, হল প্রাধ্যক্ষের ছেলে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীকে দুই টাকার ছাত্র বলেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ করতে হবে। তাদের দাবির সঙ্গে আমি একমত বলে সহমত প্রকাশ করে। একটি টেলিভিশনের ফুটেজে বিষয়টি দেখলাম ছাত্ররা কি অবস্থা করছে? এটা প্রতিবাদের ভাষা নাকি আগে থেকে ঝাল মেটানোর একটি ইস্যু?

কে দুই টাকার ছাত্র আর কে ২ কোটি টাকার ছাত্র এটা কোন কথা? একজন দুই টাকার ছাত্র বললেই সে দুই টাকার ছাত্র হয়ে গেল? মসজিদে গিয়ে যদি রাগ বা অহংকার নিয়ন্ত্রণই করতে পারলেন না তবে ইবাদতের দরকার কি আছে?

আর ড. মিজান মর্যাদাহানীর দুঃখে পদত্যাগ করে নিজের মর্যাদা বাঁচালেন? না এটি বাঁচানো নয়। কারণ অসৎ লোকদেরই বিজয় হলো। বরং যারা অভিযোগ করেছেন যাকে নিয়ে, উভয়কে এক সাথে বসিয়ে প্রকৃত ঘটনাটি খোঁজে বের করার প্রয়োজন ছিল আর এটাই নিয়ম। আমাদের দেশে এটিই চিরাচরিত হয়ে আসছে। কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির উপর অভিযোগ করলেন আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন তাদেরকে এক সাথে না করে পৃথকভাবে বসে পাঁচ কথা শুনিয়ে দেন। এতে করে নিজের সম্মান বাঁচাতে অনেক সময় সে কাজ রেখে চলে যায় অভিমানে। এতে করে সকলেরই ক্ষতি। আর এটি কোন সমাধানও নয়। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে আর যিনি অভিযোগ করছেন উভয়কে প্রথমে আলাদা ও পরে এক সাথে বসে বিষয়টি সুরাহা করা প্রয়োজন। অভিযুক্ত হলে পদত্যাগ করবে বা তাকে সেই দায়িত্ব-কর্তব্য থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একদিন মন্ত্রিপরিষদের মিটিং চলছে। এমন সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুনতে পেলেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা উপাচার্য, ডিন, বিভাগীয় প্রধান, প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষদের ৬ ঘণ্টা যাবত আটকে রেখেছে যুদ্ধকালীন সময়ের জন্য তাদেরকে ক্লাসে অটো-প্রমোশন দিতে হবে এই দাবিতে। বিষয়টি শুনেই বঙ্গবন্ধু নিজে এসে সেই তাদেরকে উদ্ধার করে শিক্ষার্থীদের ধমক দিয়ে বলেছিলেন 'আমি ছাত্র রাজনীতি করেছি কিন্তু কখনো এমন অসদাচারণ করিনি'-এইচ টি ইমাম 'বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১-১৯৭৫' বইয়ে স্মৃতিচারণ।

এই মর্যাদাহানীর পদত্যাগে কার লাভ, কার ক্ষতি হলো ঢাবি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আরো বিশ্লেষণ করবে। এমনই যাচ্ছে তাই সিদ্ধান্ত কোন কল্যাণ বয়ে আনে না। আশা করি প্রকৃত ঘটনাটি খোঁজে বের করবে, নয়তো ড. মিজানের পদত্যাগ জাতিকে দগ্ধ করবে!

লেখক: হেড অব নিউজ; বিডিমর্নিং
৯ মার্চ-২০১৯, সন্ধ্যা ৬টা ১৫মিনিট।

ই-মেইল: [email protected]

Bootstrap Image Preview