Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পরিবারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন নারী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০১৯, ০৩:৩৩ PM
আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯, ০৩:৪৬ PM

bdmorning Image Preview
প্রতিকৃতি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত


নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে ইথারে-পাথারে নানা ধরনের কথাবার্তা উড়ে বেড়াচ্ছে। ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস পালিত হচ্ছে দেশে দেশে। নারীর প্রতি মনোভাব পরিবর্তন, নর-নারীর মধ্যে সমতা আনায়নসহ নানা ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে-ঘাটে আন্দোলন-সংগ্রাম, সভা-সমাবেশ চলছে শতাব্দি থেকে সহস্রাব্দ ধরে। কিন্তু কার্যত নারীর প্রতি আমাদের অনেকের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়নি।

নারীকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করার চিন্তাও হয়তো অনেকে ভুলে যান। কেউ কেউ আছেন মুখে নারী অধিকার নিয়ে সামনের কাতারে নেতৃত্ব দেন অথচ বাস্তব জীবনে নারীকে আনন্দদায়ক প্রাণী ছাড়া আর কিছুই ভাবেনি, করেনি।

কত মুখোশ পড়া ভদ্রলোক সমাজে ঘুরে বেড়ায় তা বাছতে গেলে বহু বিখ্যাত-প্রখ্যাত ব্যক্তির চরিত্রের চাদর খসে পড়বে। বিপাকে পড়বে কেউ কেউ।

আমি সাধারণ মানুষ। নর-নারী উভয়কে মানুষ হিসেবেই সারা জীবন মূল্যায়ন করে এসেছি। কখনো কোন নারীর গায়ে আঘাত বা প্রতিঘাত করার চিন্তাও জাগেনি। তবে যারা আঘাত করেছে এমন বন্ধুও কিন্তু আমার আছে বা ছিল।

নারীকে নারী হিসেবে দেখলে অনেক কিছুই সামনে চলে আসে। প্রথমত নারীকে মনে করা হয় পুরুষের শয্যাসঙ্গী। কত যুক্তি-চুক্তির কথা বলে অনেকে যে, সৃষ্টিকর্তা আদম আ.র দেহের বাম পাজর থেকে হাওয়া নামীয় নারীকে তৈরি করেছিলেন মনোরঞ্জনের জন্য। এ কথা ও চিন্তাটি সম্পূর্ণ ভুল। কেননা আদম আ.কে যখন হাওয়া আ. এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো তখন বলা হলো 'সে (হাওয়া আ.) তোমার শরীরের একটি অংশ। তোমার জীবনসঙ্গী যার কাছে তুমি প্রশান্তি পাবে।' প্রশান্তির জন্য জীবনসঙ্গী আর শয্যাসঙ্গী কিন্তু বিস্তর ফারাক।

নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, নারীকে নরের মতোই ক্ষমতা দাও। এক শ্রেণি বলছে নারীর ক্ষমতায়ন ধর্মীয় দৃষ্টিতে নেই। বিষয়টিও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মতো। কেননা নারীর ক্ষমতায়নে কোন ধর্মীয় নিষেধ নেই। অল্প কিছু বিষয় ছাড়া। যেগুলো কখনো নারীর ক্ষমতায়নে বাধা হতে পারে না। যেমন ধরুন নারী কি সিদ্ধান্ত নিবে, কি কাজ করবে, পড়ালেখা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা, যুদ্ধনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ইত্যাদি।

পরিবারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি সবসময় নারীই নেন নর নন। আদম আ. থেকে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মাদ সা. পর্যন্ত যতো মহামানব এসেছেন তারা যে সংকটে পড়েছেন তার সমাধানের বিষয়টি কিন্তু নিজের স্ত্রীদের কাছে উত্থাপন করতেন। সমাধান বেশির ভাগ সেখান থেকেই হতো। যেমন ধরুন যখন জিবরিল আ. এসে মুহাম্মাদ সা. নবুওয়াতের কথা জানালেন তখন তিনি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে স্ত্রী খাদিজা রা. কাছে এসে বললে তিনি অভয় দিয়ে বলেছিলেন 'আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করেন না, এতিমকে সহায়তা করেন অতএব আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই। আপনি সত্যিই নবী'।

এবার আসা যাক সাধারণ পরিবারে। প্রতিটি পরিবারে যে সমস্যার উদ্ভব হয় সেটির চূড়ান্ত মীমাংসার সিদ্ধান্তটি কিন্তু নারীরাই দেন। ধরুন কোন পরিবারের সাথে আপনি ঝগড়ায় জড়ালেন আপনার মা বা নানী, দাদি এসে বললো বাদ দাও। মিলেমিশে থাক ঝগড়া ভালো না। অমনি কিন্তু ঝগড়া বাদ দিয়ে সন্ধি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবাই।

তবে সব জায়গা যে এক ধনের মনোভাব তৈরি হয় সেটি কিন্তু না। প্রাচীন বহু ইতিহাস আছে যেখানে নারীকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়নি। দেয়া হয়নি তার অধিকার। আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে মা, বোন, স্ত্রী কিংবা সন্তান। বানানো হতো সামাজিক সম্পদ। সেখান থেকে তুলে আনতে যুগে যুগে মহামানবদের আগমন ছিল।

নারী দিবসের কারণ হচ্ছে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

আমার শিক্ষক সজীব সরকার বাংলাদেশে নারীদের সম্মানে নারী দিবসে তাদের জন্যে একদিনের ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টির সাথে সহমত প্রকাশ করে বলতে চাই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে বাড়িয়ে ১০ মাস করা হোক। সাথে সাথে তাদের বেতন-ভাতা, পদায়ন অব্যাহত রাখা হোক।

লেখক: হেড অব নিউজ; বিডিমর্নিং
৮ মার্চ-২০১৯, বিকাল ৩টা ৩০মিনিট।

Bootstrap Image Preview