Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ মঙ্গলবার, মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

সাঘাটায় ব্রহ্মপুত্র চরে ফসলের বিপ্লব, নদী হারাচ্ছে আপন রূপ

মোস্তাফিজুর রহামান, সাঘাটা (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩ মার্চ ২০১৯, ০১:১২ PM
আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৯, ০১:৩৫ PM

bdmorning Image Preview


সাঘাটার ব্রহ্মপুত্র চরের কৃষকেরা রবি ফসলের বিপ্লব ঘটিয়েছেন। ক্রমশ তারা পাল্টে দিচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদীর চিত্র। নদী হারাচ্ছে তার বৈশিষ্ট্য। শুষ্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রর বুকে জেগে উঠা চরের অস্তিত্ব স্বাভাবিক মনে হলেও তা এখন ভিন্নরূপ ধারন করেছে। খরস্রোতে ব্রহ্মপুত্র এখন যেন মরা খাল। ইতিমধ্যেই নদীতে জেগে উঠা অনেক চরের বিস্তৃতি বৃদ্ধির পাশাপাশি তা স্থায়ী চরে পরিণত হয়েছে। এক সময় ব্রহ্মপুত্র ছিল এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখের কারণ। আর এখন সেই নদীর বালু চরে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে কৃষক তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত রংপুর অঞ্চল অতিরিক্ত পরিচালক শাহ আলম সম্প্রতি চরগুলো ঘুরে কৃষকদের এসব ক্ষেত দেখে বলেন, মূল ভূখণ্ডের জমির চেয়ে এসব চরের জমির ফসলের ফলন অনেক বেশী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চরের জমিতে কৃষকরা এমন ফসল ফলাবে কল্পনা করা যায় না। এখনও যে সব জমি পরিত্যক্ত রয়েছে সেগুলো চাষের আওতায় আনা হলে এসব চরে ভুট্টা ও গম চাষে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, সাঘাটা উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে ওঠা চরে আমন ও বোরো ধানের আবাদ না হলেও রবি ফসলের চাষ করে বাম্পার ফলন পাচ্ছে কৃষক। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে এই চরগুলোতে বন্যার পানি না ওঠায় চরবাসি সেখানে স্থায়ী বসতি গড়েছে। কিছুদিন আগে যেখানে ছিল জনবসতিহীন দুর্গম চর, এখন সেখানে বসেছে প্রাণের মেলা। এখন দেখা মেলে চোখ ধাঁধাঁনো বর্ণিল সবুজ ফসলের সরব উপস্থিতি। নাব্যতা সংকট প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্রের এখন বেহাল দশাই কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

এক সময়ের ধু ধু সাদা বালুচরগুলোতে পলিমাটির স্তর পড়ে এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। বৈদ্যুতিক সেচ ব্যবস্থা না থাকলেও স্যালো মেশিন বা অগভীর নলকুপের সাহায্যে জমিতে পানি সেচ দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেই বালুচরে ভুট্রা, গম, জব, চিনা, কাউন, কালোজিরা, কুমড়া, লাউ, টমেটো, মুলা, আলু, পালংশাক, লালশাক, বেগুন, পিয়াজ, মরিচ, শসা, শিম, করলা, গাজর, ধনিয়া বিভিন্ন শাকসবজি সহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসলের বিপ্লব ঘটিয়েছে কৃষকরা।

এদিকে নদীর বুকে চর জেগে ওঠায় ব্রহ্মপুত্রর এখন বেশ কয়েকটি চ্যানেলে প্রবাহিত হচ্ছে। শীর্ণ আর স্রোতহীন শান্ত এ নদী দেখে ব্রহ্মপুত্রর রূপ কল্পনা করা কঠিন। যে রাক্ষুসী ব্রহ্মপুত্রর কড়াল গ্রাসে মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি, বসতভিটা ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল। সেই নদীর বুকে জেগে উঠা চরগুলোতে বসাতি গড়ে তুলে নতুন উদ্যমে চরে ফসল ফলানো শুরু করেছে এক সময়ের নিঃস্ব কৃষকরা। বিভিন্ন ফসলে ফসলে ভরে গেছে সমস্ত চর।

গাড়ামারা চরের কৃষক নুরুল ইসলাম জানালেন, তিনি গত বছর এক একর জমি থেকে ১২০ মণ ভুট্টা ঘরে তুলেছেন। এবার তিনি ওই জমিতে আরো বাম্পার ফলনের আশা করছেন। প্রায় ৩০ বছর আগে তাদের পূর্ব পুরুষদের ভেঙ্গে যাওয়া জমিতে নতুন উদ্যমে চাষ শুরু করেছেন কৃষক আব্দুল জোব্বার। তিনি জানালেন প্রথম দিকে তারা চরের জমিতে শুধু কালাই, চিনা, কাউন, বাদাম, তিলের চাষ করলেও এখন রীতিমতো ভুট্টা, গমের আবাদ করছেন। আর এ থেকে অনেক অর্থ আয় করছেন এখন তাদের কোন অভাব নেই।

সাঘাটা উপজেলার এ চরগুলোর পূর্বে জামালপুর জেলার ইসলামপুর ও দক্ষিণে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার সীমানা জুড়ে জেগে উঠেছে এসব চর। কিন্তু জেগে ওঠা এই সকল জমির সঠিক কোন পরিসংখ্যান কিংবা তথ্য স্থানীয় কৃষি দপ্তরগুলোতে নেই। এমনকি এসমস্ত জমির ভোগ দখলকারীরাও জানে না তাদের জমি গুলোর সঠিক পরিমাপ ও সীমানা কোথায়।

পাতিলবাড়ী চরের কৃষক পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি জড়ানো জমির আইলে বসে থাকা মনির হোসেন (৫৫) জানালেন, কৈশর বয়সে এই সব জমি ব্রহ্মপুত্রতে বিলিন হয়েছিল। বিলিন হওয়া জমিগুলো আবারো জেগে উঠে আবাদি জমিতে পরিণত হতে পারে তা তিনি কখনো ভাবেননি।

Bootstrap Image Preview