বিয়ের পরে স্বামী বা স্ত্রীর অন্য কোনো নারী বা পুরুষের সাথে যে প্রেমের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেটিই আমরা পরকীয়ার সম্পর্ক হিসেবে জানি। একটি সাজানো গোছানো সুন্দর বিবাহবন্ধনে মারাত্মক বিষের মত কাজ করে পরকীয়ার অবৈধ সম্পর্ক। পরকীয়ার সম্পর্ক অনেক কারণেই গড়ে উঠতে পারে।স্বামী/স্ত্রীর একে ওপরের প্রতি ভালোবাসা না থাকা, পারিপার্শ্বিক অনেক কারণ এমনকি শুধুমাত্র জীবনে একটু আনন্দ নিয়ে আসার কারনেও অনেকে পরকীয়ার মত অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে? বিবাহ বন্ধনের মতো পবিত্র একটি বন্ধনেও আমরা নিয়ে আসছি পরকীয়ার মতো অপবিত্র একটি সম্পর্ক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজের অসুস্থ বিনোদন, নিজ রুচি ও যোগ্যতার সঙ্গে জীবনসঙ্গীর মিল খুঁজে না পাওয়া, স্ত্রীকে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া, বিয়ের আগে-পরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ম্যারেজ বা ফ্যামিলি কাউন্সিলিং না নেওয়া, স্বামীর অর্থনৈতিক সংকট ও স্ত্রীর উচ্চাভিলাসের কারণেই নর-নারী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছে। জরিপ বলছে, শহরাঞ্চলে ৮ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে ৭ শতাংশ বিবাহিত পুরুষই বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত। আর নারীদের মধ্যে গড়ে ০.৩ শতাংশ এ ধরনের সম্পর্কে জড়িত। এদের মধ্যে পুরুষরা তাদের মেয়ে বান্ধবী (৩২ শতাংশ) এবং আত্মীয়দের (১৫%) সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়াচ্ছে। আর যেসব পুরুষ বিয়ের আগেই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন তাদের বিয়ের পর পরকীয়ায় জড়ানোর প্রবণতা বেশি থাকে।
আবার ঢাকা সিটি করপোরেশনে তালাক নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে আগের চেয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ। তারা আরও জানান, যেসব দম্পতি আমাদের কাছে তালাকের জন্য আবেদন করেন এদের মধ্যে শতকরা ১০ ভাগ স্বামী-স্ত্রী নিজেদের সম্পর্ক ভাঙার কারণ হিসেবে পরকীয়াকে দায়ী করেন। বাংলাদেশের যুবসমাজের ওপর আচরণগত বেইজ লাইন সার্ভেতে উল্লেখ করা হয় যে দেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে ষাটের দশকের তুলনায় বর্তমানে বিবাহ বহির্ভূত ও বিবাহপূর্বক অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার হার তিনগুণ বেশি। বর্তমানে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৩ জনই অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। সমাজবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন,এই অবস্থা চলতে থাকলে পাশ্চাত্যের মতো বাংলাদেশেও পারিবারিক সম্পর্কগুলোতে ভাঙন ধরবে। তবে এই অবস্থা রোধ করতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতাবিষয়ক শিক্ষা প্রদান এবং গণমাধ্যমে সুষ্ঠু প্রচারযোগ্য অনুষ্ঠান প্রচার ও পারিবারিক মূল্যবোধ তৈরির ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নিতে হবে।