পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ তথ্য জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পুরান ঢাকার চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে আহতদের দেখতে গিয়ে কাদের বলেন, ‘যেটা হয়ে গেছে এবং যারা চলে গেছে, ক্ষয়ক্ষতি যা হয়ে গেছে সেটা তো আর ফেরত পাওয়া যাবে না। এখন ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সেটা আরও আগে করা উচিত ছিল, করা হয়নি, চেষ্ট ছিল। কিন্তু এটা এমন একটা ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি এলাকা, এখানের কেমিক্যাল গোডাউনগুলো আবার ভেতরে ভেতরে এসে জায়গা নিয়ে ফেলেছে। এটা একটু মনিটরিং করলে হয় তো এড়ানো যেত।’
তিনি বলেন, ‘যেটা ভুল এটা সংশোধন করে নতুন করে পথ চালার বিকল্প কিন্তু নেই। এখন প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব কেমিক্যাল গোডাউনগুলো সরিয়ে নেয়ার জন্য। মেয়র এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন, শুরু করেছেন। প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনে বলেছেন।’
আওয়ামী লীগের এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আশা করি মেয়র সাহেব কালবিলম্ব না করে পদক্ষেপ নেবেন। এখানে যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবার পরিজনের অনেকে সামর্থবান ব্যক্তি, টাকা পয়সা দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে না। তারপরও এ ব্যাপারে সরকার মানবিক, আর্থিক সাহায্য পুনর্বাসন এ ব্যাপারে যা যা করণীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নিয়েছেন।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘কোন কেমিক্যাল ক্ষতিকর কোনটা না সেটা মেয়র দেখবেন, ঝুঁকিপূর্ণ বা ক্ষতিকর কেমিক্যাল আছে বা অন্যান্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল সেটা বিশেষজ্ঞরা জানেন, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে কোনো প্রকার বিলম্ব করা যাবে না।’
সিলিন্ডার ব্যবহারের বিষয়ে সরকারের কোনো নির্দেশনা আছে কি না- জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সিলিন্ডারের ব্যাপারে আমার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পরামর্শ দিয়েছি, বিআরটিএকে একটা সমাধানে পৌঁছার জন্য। আমি এটাও বলেছি, সিলিন্ডার যেহেতু এত বিপজ্জনক অবস্থানে পৌঁছেছে সুতরাং এ সিলিন্ডার ব্যবহার না করাই ভালো। কাজেই এ সিলিন্ডার বন্ধ করার ব্যাপারে সচিবকে পরামর্শ দিয়েছি। এটা আমার মনে হয় অচিরেই একটা ব্যবস্থা হবে।’
সিলিন্ডার বন্ধ হলে এর কোনো বিকল্প থাকছে কি না- জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বিকল্প নিয়েই আমি ভাবতে বলেছি। বন্ধ করে বিকল্প কী করা যায়, সেটার একটা প্রপোজাল নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলেছি। বিকল্প কী হবে সেটাও ভাবতে বলেছি।’
দর্শনার্থীদের ভিড় না করার পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি একটা অনুরোধ করব, যারা বার্ন ইউনিটে ভর্তি অছেন, এখানে যদি দর্শনার্থী বাড়তে থাকে, তাহলে রোগীর জন্য খারাপ হবে। ডাক্তাররা বার বার বলছে আপনজনকে বাঁচাতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। দর্শনার্থী বাড়ানো যাবে না।’
কেমিক্যাল থেকে আগুন ছড়ায়নি শিল্পমন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমি পত্রপত্রিকার যা দেখেছি তিনি সেখানে বলেছেন, এখানে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত সিলিন্ডার থেকে। তিনি বলেননি যে কেমিক্যালের কারণে আগুন ছড়ায়নি। এ কথা তিনি বলেননি। তিনি বলেছেন, সিলিন্ডার থেকে সূত্রপাত।’
সরকার এ দুর্ঘটনার দায় এড়াতে পারে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুর কাদের বলেন, ‘সরকার নাকে তেল দিয়ে ঘুমায় না, সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু কিছু গোডাউন সরিয়ে নিয়েছে। পরবর্তীতে গোপনে এসে অনেকে জেঁকে বসেছে। এটার ক্লোজ মনিটরিংটা হলে হয়তোবা এমনটা হতো না, সেটা ঠিক আছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন দায় দায়িত্ব; কোনো কিছু দেশে ঘটলেই যেহেতু সরকার ক্ষমতায় আছে, দায় তো সরকার এড়াতে পারবে না। এটা তো সত্য কথা। কিন্তু জনসাধারণ যারা এ ব্যবসায় জড়িত, তাদেরও সচেতনতার দরকার। কারণ তাদের এখানে জীবিকার চেয়ে জীবনের ঝুঁকি বেশি। সেখানে সচেতনতাও একটা ব্যাপার ছিল, সতর্কতার ব্যাপার ছিল।’