নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তুরস্কের আংকারায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং মহান শহীদ দিবস-২০১৯ উদযাপন করা হলো। বৃহস্পতিবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এর প্রথম প্রহরে তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. আল্লামা সিদ্দীকী’র নেতৃত্বে দুতাবাসের কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দ জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন।
দূতাবাস মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এসময় দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।
বাণী পাঠের পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং শহিদ দিবস ও ভাষা শহিদদের নিয়ে বিভিন্ন স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষে শহিদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেলে আঙ্কারাস্থ আতাকোস হোটেল মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং শহিদ দিবস-২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি হিসেবে সরকারিভাবে তুরস্ক সফররত সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবঃ) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
সম্মানিত অতিথিবৃন্দ শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশের অভ্যুদয়, ২১-এর চেতনা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমানে দ্রুত এগিয়ে চলা বাংলাদেশের কথা বিবৃত করেন।
এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে আংকারায় নিযুক্ত ২৩টি দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক, সামরিক উপদেষ্টা, তুরস্কের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজ ও সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিসহ তুরস্কে বসবাসরত বাংলাদেশী প্রবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া তুরস্কের ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর (উপাচার্য) উপস্থিত থেকে এ অনুষ্ঠানকে অলংকৃত করেন।
রাষ্ট্রদূত এম, আল্লামা সিদ্দীকী তাঁর স্বাগত বক্তব্যের শুরুতেই ঢাকার চকবাজারে ২০ ফেব্রুয়ারি রাত্রে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং অনুষ্ঠানে আগত সকল অতিথিবৃন্দ রাষ্ট্রদূতের আহ্বানে তাঁদের রূহের মাগফিরাত কামরা করেন।
রাষ্ট্রদূত ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নেতৃত্বগুণে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ দীর্ঘ এ পথ-পরিক্রমায় বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, ২১শে ফেব্রুয়ারির চেতনা শুধু বাঙালি সংস্কৃতিরই নয় বিশ্বের বৈচিত্রপূর্ণ সংস্কৃতি রক্ষার এক অবিনাশী চেতনা। তাই ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দান করে।
বাংলাদেশ এবং তুরস্কের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং ভাষা আন্দোলনের উপর নির্মিত একটি সংক্ষিপ্ত প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সাংস্কৃতিক পর্বে বাংলাদেশ, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, আফগানিস্তান, চীন, থাইল্যান্ড, ইউক্রেন দূতাবাস সহ তুরস্কের দু’টি সাংস্কৃতিক সংগঠন তাঁদের নিজ নিজ ভাষায় অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের চিরাচরিত খাবার পরিবেশনার ভিতর দিয়ে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি টানা হয়।