রোহিঙ্গাদের বাংলা শেখানোয় স্থানীয়দের ক্ষোভ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের ২৩টি (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) বিদ্যালয়ে বাংলা শিক্ষা দিচ্ছে এনজিও সংস্থা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ‘কোডেক’। এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিলেও প্রশাসনের কোন খবর নেই। যার ফলে এনজিও সংস্থা দেশের মাটিতে বিদেশী নাগরিকদের বাংলা শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে সচেতন মহলের অভিযোগ। রোহিঙ্গাদের বাংলা শিক্ষা দেওয়ার খবরে স্থানীয় শিক্ষিত সমাজের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং এ বিষয়ে দ্রুত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উখিয়ার কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে, ‘কোডেক’ পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করে দেখা যায় রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে তাদের ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এতে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আর ৬ষ্ট থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও চলছে নিয়মিত পাঠদান। এসব বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান দেওয়া জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গার পাশাপাশি স্থানীয় ছেলে-মেয়েদের। তবে অভিযোগ উঠেছে, এসব বিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যবই হিসেবে দেওয়া হয়েছে বাংলা কারিকূলামের সরকারি বিভিন্ন পাঠ্য বইগুলো।

১ম থেকে ৫ম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ের ব্যাপারে বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকের নিকট জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, শিক্ষা অফিস থেকে তারা বইগুলো সংগ্রহ রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী বিতরণ করেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ‘কোডেক’ এর শিক্ষা প্রকল্পের প্রজেক্ট কো-অডিনেটর মোঃ জাহেদ বলেন, কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পরিচালিত ‘কোডেক’ এর ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়াও ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যালয় রয়েছে ৩টি। এসব বিদ্যালয়ে কোন প্রকার বাংলা কারিকূলামে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না। তবে আরআরআরসি দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গা ছেলে-মেয়েদের। পাঠ্যবইয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অফিসে চায়ের দাওয়াত দিয়ে ফোন কেটে দেন।

এদিকে এনটিআরসি একটি প্রতিনিধিদল ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পদিরর্শন করে মিয়ানমারের শিক্ষার্থীদের বাংলা পড়ানোর কোন সুযোগ নেই সাব জানিয়ে দেন। এছাড়াও মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের কোন পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না বলে জানান।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার ধর জানান, রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে রোহিঙ্গা ছেলে-মেয়েদের বাংলা শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে একটি অনুমতিপত্র ছিল, তার প্রেক্ষিতে আমরা সরকারি পাঠ্যবই সরবরাহ দিয়েছি রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে কর্মরত ‘কোডেক’ নামের একটি এনজিও সংস্থাকে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে একটু সময় দিতে হবে আমাকে যেহেতু নতুন কোন পরিপত্র আছে কিনা দেখতে হবে।

রোহিঙ্গা ছেলে-মেয়েদের বাংলা শিক্ষয় শিক্ষিত করে গড়ে তুলার ব্যাপারে কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের ক্যাম্প ইনচার্জ মোঃ রেজাউল করিম বলেন, এক সময় রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে বাংলা শিক্ষা দেওয়ার হতো, পরবর্তী বন্ধের করে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি। তবে এটিতো আর একদিনে সম্ভব নয়, পর্যায়ক্রমে করতে হবে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, রেজিস্টার্ড বা আনরেজিস্টার্ড কোন ক্যাম্পে রোহিঙ্গা ছেলে-মেয়েদের বাংলা কারিকূলামে শিক্ষা দেওয়া সম্পূর্ণ যাবে না। আমি নির্বাচনী ট্রেনিং ঢাকায় থাকার কারণে কোডেকের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারিনি। দু’এক দিনের মধ্যে ঢাকা ফিরে সরেজমিন তদন্ত পূর্বক ওই এনজিও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।