Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ মঙ্গলবার, মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

সব পুড়ে ছাই, রইল শুধু ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৬:৫৭ PM
আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:৫০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আশপাশের ঘর বাড়ি, ফ্যাক্টরি সব কিছু পুড়ে গেলেও অক্ষত আছে চুড়িহাট্টা শাহী জামে মসজিদ। মসজিদটি দেখছে আসছে কৌতূহলী মানুষ। কেউ কেউ বলছে, ‘এ মহান আল্লাহর অপার রহস্য।’ তেমনিভাবে রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজার এলাকার চুড়িহাট্টা মোড়ে গিয়ে একটু বাঁ দিকে ঘুরলেই চোখে পড়ল রাজমনি হোটেল। পুরান ঢাকার জনপ্রিয় খাবারের হোটেলটি গতকাল রাতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়ে ছাই। পুড়ে গেছে দোকানারের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সাটারও।

তবে হোটেলে প্রবেশদ্বারের উপরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স.)’ লেখা সংবলিত লেখাংশটুকু ঠিকই অবিকল অবস্থায় রয়ছে। আরবি ও বাংলা ভাষায় লেখা পবিত্র কালেমার প্রতি দৃষ্টি পড়ছে এলাকাবাসী সকলেরই।

আজ বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুরো এলাকাটি যেন এক মৃত্যুপুরীর আকার ধারণ করেছে। আগুনে পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন বহন করছে এলাকার দালানকোটাসহ দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। মালামালসহ সব জিনিসপত্রই পুড়ে ছাই।

রাজমনি হোটেলর সামনে গিয়ে দেখা যায়, দোকানের সামনের সাটার পুড়ে গেছে। দোকানের হাড়িপাতিলসহ আসবাবপত্রও পুড়ে গেছে। কালি ও কেমিক্যালের ধোঁয়ার চিহ্ন হোটেলের দেওয়ালে দেওয়ালে।

হোটেলের মালিক ও বয়-বেয়ারাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা কেউ বলতে পারছে না। তবে জয়নাল আবেদীন বাবুল নামে এক ব্যক্তি চা খাওয়ার জন্য গতকাল রাত ১০টা ২১ মিনিটে চা খেতে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি তাঁর মেয়ে নাসরিন আক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। এর এক মিনিট পরই হোটেলটির সামনে থেকে বিকট  শব্দ শুনতে পান নাসরিন।

নাসরিন আক্তার বলেন, ‘আব্বুর সাথে কথা বলার এক মিনিট পর ১০টা ২২ মিনিটে একটি বিকট শব্দ শুনতে পাই। এর পর পরই আব্বুর মোবাইলে ফোন করি। কিন্তু রিং হয় ফোন রিসিভ হয় না। ১০ টা ২৫ মিনেটের পর মোবাইলটি বন্ধ হয়ে যায়। আব্বুর মুখের আওয়াজ আর পাইনি। সেই থেকেই আব্বুকে খোঁজার চেষ্টা করছি।’

রাজমনি হোটেলের সামনে গিয়ে দেখা যায়, হোটেলটির দুইপাশেই রাস্তার ওপরে কেমিক্যালের পুড়ে যাওয়া ড্রামগুলো পড়ে আছে। এলাকাবাসী জানান, এখানে কয়েকটি ভবনের নিচতলাকে কেমিক্যালের গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করতেন ব্যবসায়ীরা। আগুন লাগার সঙ্গেই সঙ্গেই কেমিক্যালের কারণে তা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে।

চকবাজারের নন্দকুমার সড়কের চুড়িহাট্টায় বুধবার রাতে এই শাহী মসজিদের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তেই আগুন লাগে জামাল কমিউনিটি সেন্টারে। আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের চারতলা ওয়াহিদ ম্যানশনে। ভবনটির প্রথম দুইতলায় প্রসাধন সামগ্রী, প্লাস্টিকের দানা ও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদাম থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরো চারটি ভবনে। রাজমনিসহ আশেপাশের কয়েকটি খাবারের হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডারেরও বিস্ফোরণ ঘটে। পুড়ে যায় সড়কে থাকা একটি প্রাইভেটকারসহ কয়েকটি যানবাহন। এ সময় পুড়ে যাওয়া কয়েকটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এ আগুনের লেলিহান শিখায় মসজিদের চারপাশের ৩০০ হাত এলাকার সব বাড়ি, দোকান ও অন্যান্য স্থাপনা পুড়ে ছাই। কঙ্কাল হয়ে দাঁড়িয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়ার সাক্ষ্য দিচ্ছে সুউচ্চ ভবনগুলোও। এর মধ্যে ব্যতিক্রম শুধু চুড়িহাট্টা জামে মসজিদ। জনমনে গভীর বিস্ময় জাগিয়ে মসজিদটি অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

স্থানীয়রা বলছেন, চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আবাসিক ভবনটিতে কেমিক্যাল গোডাউন থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

অপরদিকে পুরান ঢাকার চকবাজারে ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৭৮ জনের মধ্যে ৪১ মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন নারী, দুই শিশু ও ৩৭ জন পুরুষ।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ হাজার করে টাকা নিহতের পরিবারের সঙ্গে দিয়ে দেওয়ার ঘোষণা এর আগেই দেওয়া হয়েছে। তবে এই টাকার খবর জানেন না মরদেহ গ্রহণকারী স্বজনদের অনেকে। টাকা নিতে আগ্রহীও নন তারা।

এ বিষয়ে স্বজন বলেন, টাকার ব্যাপারে আমাদের কোনো দাবি নেই। দ্রুত মরদেহ দিয়ে দিলেই হবে।

এদিকে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সরকারি যে নির্দেশনা দেওয়া আছে সে অনুসারেই আমরা কাজ করছি। নিয়ম বহির্ভূত কোনো কাজ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমরাও চেষ্টা করছি দ্রুত মরদেহ হস্তান্তর করতে।

Bootstrap Image Preview