আমার বাবা দোকানে কাজ করছিলেন। শুনছেন, আগুন লেগেছে। তা দেখতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। কাঁদতে কাঁদতে এ কথা বলছিলেন পুরান ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত আলী হোসাইনের (৭৫) ছেলে মাহফুজ।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাহফুজ বলেন, চকবাজারে তাঁর বাবার লেডিস ব্যাগের কারখানা আছে। তিনি ৪০ বছর ধরে চকবাজারে ব্যবসা করেন। বাবার ওপর পরিবারের সবাই নির্ভরশীল।
মাহফুজ বলেন, চকবাজারে আগুন লাগার পরই বাবার মোবাইলে ফোন দেই। বাবা বলেন, এখানে সমস্যা নেই। আগুনে কী হয়েছে তা দেখতে গিয়ে তিনি পুড়ে যান। সারারাত মোবাইলে ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে সকালে এক পুলিশ সদস্য ফোন ধরে বলেন, নিহত ব্যক্তি আপনার কে হয়? তখন ছেলে পরিচয় দেওয়ার পর আমরা জানতে পারি বাবা পুড়ে মারা গেছেন।
মাহফুজ বলেন, বাবা এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আছেন। এখন নাকি লাশ দিবে না। লাশ দিলে আমরা গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে নিয়ে যাব দাফনের জন্য।
নিহত আলী হোসাইনের ভাইয়ের স্ত্রী মনোয়ারা বলেন, ‘বড় ভাই অনেক ভালো মানুষ। আল্লাহ এভাবে তাঁকে নিয়ে যাবে তা কল্পনাও করি নাই।’
আলী হোসাইনের কারখানার এক কর্মচারী জানান, আলী হোসাইনের দোকানে কোনো ক্ষতি হয় নাই। তিনি দোকান থেকে কী হয়েছে তা দেখতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মারা যান। খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন তিনি।
এদিকে, রাজধানীর চকবাজারে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ড তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে গঠন করা ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বুধবার রাত ১০টার পর রাজধানীর চকবাজার এলাকার নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুরিহাট্টা মসজিদ গলির রাজ্জাক ভবনে আগুন লাগে। রাত ১টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে আগুন ভয়াবহ আকারে আশপাশের ৫টি বিল্ডিংয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩২টি ইউনিট রাত ৩টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুন লেগে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে। পুড়ে যাওয়া লাশগুলো শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের সন্ধানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভিড় করেছেন স্বজনরা।