Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ মঙ্গলবার, মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

চকবাজারে আবারও বিস্ফোরণ, ছুটে গেছে ফায়ার সার্ভিস

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৪:৪৭ PM
আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৫:২৫ PM

bdmorning Image Preview
পুনরায় বিস্ফোরণস্থলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি


গতকাল রাতে রাজধানীর চকবাজারের রাজ্জাক ভবনে এক বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় ৭৮ জন মানুষ দগ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। আগুন লাগার পরে উদ্ধার অভিযানও সমাপ্ত করেছেন উদ্ধার অভিযান দল কিন্তু সেই দুর্ঘটনা স্থলে আজ আনুমানিক বিকেল ৪ টা ২৫ মিনিটে আবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে ।

ঠিক আগুন কিনা বলা যাচ্ছেনা। ঘটনাস্থলের কাছেও ঘেষা যাচ্ছেনা। তবে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সক্রীয় হয়ে উঠেছেন, পানি দিচ্ছেন ভেতরে।

এবারের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে আগের দুর্ঘটনাস্থল রাজ্জাক ভবনের ঠিক ২০ থেকে ২২ গজ আগে। ঠিক কি কারণে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তা ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারেন নাই।

উল্লেখ্য, উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণার পরেও পুলিশের আইজিপি বলেছেন এই অগ্নীকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

প্রসঙ্গত, চকবাজারের নন্দকুমার সড়কের চুড়িহাট্টায় বুধবার রাতে এই শাহী মসজিদের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তেই আগুন লাগে জামাল কমিউনিটি সেন্টারে। আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের চারতলা ওয়াহিদ ম্যানশনে। ভবনটির প্রথম দুইতলায় প্রসাধন সামগ্রী, প্লাস্টিকের দানা ও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদাম থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরো চারটি ভবনে। পাশের কয়েকটি খাবারের হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডারেরও বিস্ফোরণ ঘটে। পুড়ে যায় সড়কে থাকা একটি প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি যানবাহন। এ সময় পুড়ে যাওয়া কয়েকটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। রাজধানীর প্রায় সবকটা ইউনিট কাজ করে আগুন নেভাতে। খুবই ঘন বসতি এবং রাস্তা সরু হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত লাশের সংখ্যা ৭৫ ছাড়িয়েছে। ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, রিকশাভ্যান, রাসায়নিক, দাহ্য পদার্থ, বডি স্প্রে, বোতল, পাউডার, প্লাস্টিকের দানা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ভস্মীভূত হওয়া ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে আরও একটি দুর্ঘটনা।

প্লাস্টিকের দানার ব্যবসায়ী সাবির বলেন, মসজিদের সামনে এখানে দুটি প্রাইভেটকার ছিল, আরেকটা পাউডারের গাড়ি ভুল পাশে দাঁড় করানো ছিল, এসময় একটা রিকশা মসজিদের সামনে যাওয়ার পর সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে।রিকশাতে একটা শিশু ছিল। সবাই মারা গেছেন।

নাছির আহমেদ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, রিকশায় এক নারী তার সন্তানকে রক্ষার জন্য আকুতি করছিলেন। ইচ্ছা করলে তিনি নিজে বাঁচতে পারতেন। কিন্তু সন্তানকে বুকে নিয়ে মৃত্যুকে বেঁচে নিয়েছেন তিনি।

এদিকে নিম্নমানের সিলিন্ডার দিয়ে কীভাবে ব্যবসা করার অনুমতি পায় তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন কেউ কেউ।

এছাড়াও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে মুদি দোকান। ছাইয়ের মধ্যে পড়ে আছে নুরানি কায়দা। কালো বর্ণের গোটা গোটা আরবি হরফগুলো ধ্বংসাবশেষের মধ্যে একমাত্র রক্ষা পাওয়া বস্তু।

যে ভবনটি থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত, তার কাছের একটি বাড়িতে থাকেন শিল্পী আকতার। তিনি বলেন, রাতে ১টা গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বের হয়েছিলাম। তখন দেখি কালো ধোঁয়ায় সব ছেয়ে গেছে। ক্ষিপ্র আগুন ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে।

প্রত্যক্ষদর্শী আনোয়ার বলেন, পাশের কমিউনিটি সেন্টারে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান ছিল। একটা গাড়ি সেখানে এসে থামলে সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে ওপরে উঠে যায় সেটি। একেবারে হলিউডের চলচ্চিত্রের গাড়ি ধ্বংসের দৃশ্যের মতো।

মসজিদের পাশেই মদিনা ফার্মেসি। সেখানে ওষুধ কিনতে এসেছিলেন ৪৩ বছর বয়সী আয়শা বেগম। কিন্তু আর প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারেননি। তার ভাইয়ের ছেলে রাতুল বলেন, তিনি রাতের বেলায় ওষুধ কিনতে বের হন। পরে আর তার খোঁজ পাইনি। সকালে খবর পেলাম ৪৮ নম্বর সিরিয়ালে তার মরদেহ। দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে তার।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন জানান, ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে থাকবে। তারা ঘটনাস্থল দেখভাল করবে এবং সিটি করপোরেশনের কর্মীদের সঙ্গে মিলে আবর্জনার স্তূপ সরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

স্থানীয়রা বলছেন, চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আবাসিক ভবনটিতে কেমিক্যাল গোডাউন থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

অপরদিকে পুরান ঢাকার চকবাজারে ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৭০ জনের মধ্যে ৪১ মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন নারী, দুই শিশু ও ৩৭ জন পুরুষ।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ হাজার করে টাকা নিহতের পরিবারের সঙ্গে দিয়ে দেওয়ার ঘোষণা এর আগেই দেওয়া হয়েছে। তবে এই টাকার খবর জানেন না মরদেহ গ্রহণকারী স্বজনদের অনেকে। টাকা নিতে আগ্রহীও নন তারা।

এ বিষয়ে স্বজন বলেন, টাকার ব্যাপারে আমাদের কোনো দাবি নেই। দ্রুত মরদেহ দিয়ে দিলেই হবে।

এদিকে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সরকারি যে নির্দেশনা দেওয়া আছে সে অনুসারেই আমরা কাজ করছি। নিয়ম বহির্ভূত কোনো কাজ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমরাও চেষ্টা করছি দ্রুত মরদেহ হস্তান্তর করতে।

Bootstrap Image Preview