Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শুভপুর সেতু ভেঙ্গে পড়ার আশংকা

ইমাম হোসেন, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৬:১৮ PM
আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৬:১৮ PM

bdmorning Image Preview


১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা যে ব্রিজটি ভেঙ্গে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন সেটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঐহিতাসিক শুভপুর ব্রিজ। স্বাধীনতার পরও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশের একমাত্র সড়ক ছিলো বর্তমান পুরাতন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক।

ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলা ও চট্টগ্রামের মীরসরাই, রামগড় ও খাগড়াছড়ির মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী এই ব্রিজ দিয়েই তৎকালীন সময়ে সারাদেশের সাথে চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত এই ব্রিজের দখল নিয়েই ১৯৭১ সালে দফায় দফায় পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এই ব্রিজ অতিক্রম করে চট্টগ্রামে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য মুক্তিযোদ্ধারা যেমন ব্রিজটি ধ্বংসের চেষ্টা চালায় তেমনি, ব্রিজটি রক্ষা ও দখলে রাখার জন্য পাক হানাদার বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতি বিজড়িত মীরসরাই ও ছাগলনাইয়া উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে ফেনী নদীর উপর অবস্থিত দীর্ঘ দিন সংস্কারবিহীন অবস্থায় থাকায় ৬৬ বছরের পুরোনো শুভপুর সেতু ক্রমেই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। যে কোনো মুহুর্তে এটি ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। ফলে যেকোনো মুহুর্তেই ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা।

জানা যায়, ১৯৫২ সালের দিকে আরসিসি স্লাবের ওপর বেইলি ট্রাস দিয়ে ফেনী নদীর ওপর ১২৯ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয়। পরে নদীর প্রশস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৬৮ সালে সেতুটি আরও ২৪৯ মিটার সম্প্রসারণ করায় এর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৩৭৪ মিটারে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শুভপুর সেতুর কাছেই বালু উত্তোলন করছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। আর এতেই ব্রিজের মূল পিলারগুলোর নিচে থেকে মাটি সরে গেছে। ফলে সেতুটির পশ্চিমাংশ যেকোনো সময়ে ধসে পড়তে পারে। তাছাড়া প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় এর পাটাতনের ঢালাই নষ্ট হয়ে গেছে।

লোহার রেলিং ও নাট-বল্টু খুলে চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এখন ছোট যানবাহন পার হলেও এটি কাঁপতে থাকে। দুর্ঘটনা এড়াতে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে সড়ক বিভাগ। ব্রিজের সম্মুখে খুঁটি গেঁথে রাখায় বাস অথবা পণ্য বোঝাই ট্রাক এ সেতু অতিক্রম করতে পারে না।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় সেতুটির একদিকে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেতুর ১০ নং পিলারে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এটিকে সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিলে চট্টগ্রাম অংশে হানাদার বাহিনীরা ঢুকতে পারেনি। এখনো সেতুর বিভিন্ন স্থানে গোলা-বারুদের চিহ্ন পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।

নিয়মিত এই ব্রিজ দিয়ে যাতায়াতকারী বারইয়ারহাট পৌরসভার আনোয়ার এগ্রো সত্ত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যবসায়ের কাজে প্রায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ব্রিজ দিয়ে যাতায়ত করতে হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় সম্মুখ যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এবং ‘কলমিলতা’ সহ বহু বাংলা ছায়াছবি ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছায়াছবির শুটিং স্পট হিসেবে শুভপুর ব্রিজ ব্যবহৃত হয়েছে। ব্রিজটি বয়সের ভারে রোগাক্রান্ত হওয়ায় কেউ এর খবর রাখে না।

বালাইনাশক কোম্পানী ম্যাকডোলান্ড এর মার্কেটিং অফিসার আলা উদ্দিন বলেন, এ সেতুকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধাদের নানা স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এটি সংস্কার করলে সেই স্মৃতি রক্ষা পাবে।

তিনি আরো জানান, মহিপাল-বারইয়ারহাট সংযোগ সড়কটি ১৯৮৩ সালে পুর্ণাঙ্গভাবে চালু হওয়ার পর থেকে রাস্তা সংস্কারের কাজের বাজেট বেশিরভাগ নতুন সড়কে হয়ে থাকে। তাই পুরাতন সড়কের ঐহিতাসিক এই ব্রিজটির দিকে কারো নজর নেই।

এই ব্রিজটি নিয়ে সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বর্তমান সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার নিজের মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি রয়েছে এই ব্রিজে। আমি চেষ্টা করছি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শুভপুর ব্রিজটি পুনঃনির্মাণ অথবা সংরক্ষণ করে বিকল্প সেতু নির্মাণ করার কথা ভাবছি । আমি মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে প্রস্তাবনাও দিয়েছি।

ফেনীর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৗশলী মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন জানান, শুভপুর সেতুটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাশে আরেকটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সয়েল টেস্টও সম্পন্ন হয়েছে।

স্থানীয় করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, আমি সংশ্লিষ্ট সড়ক ও জনপথের কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার জানিয়েছি ব্রিজটি মেরামতের জন্য। ব্রিজের এখন যে অবস্থা তাতে করে যেকোনো মুহুর্তে ভেঙে নদীতে পড়বে। কিন্তু তারপরও কেউ উদ্যোগ নিচ্ছে না।

 

Bootstrap Image Preview