Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

টার্কির ডিম-বাচ্চা-মাংসের দাম কম, বড় ধরনের লোকসানের মুখে খামারিরা

সৌরভ অধিকারী শুভ, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০২:১৩ PM
আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০২:১৩ PM

bdmorning Image Preview


বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছে বগুড়ার শেরপুরের টার্কি খামারিরা। বাচ্চার দাম কমে যাওয়া, খাদ্যের দাম বেশি এবং বড় ধরনের রোগবালাইয়ের আক্রমনে মড়ক লাগাসহ বহুবিধ সমস্যার কবলে পড়ে নিজ নিজ উদ্যোগে গড়ে উঠা প্রায় ৫ শতাধিক খামারের মধ্যে ইতিমধ্যেই বেশির ভাগ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। খাবারের দাম বেশি, ডিম ও বাচ্চার দাম কম এবং মাংসের চাহিদা তুলনামূলক না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারিদের। ফলে ধ্বংসের পথে এই টার্কি শিল্প।

সরেজমিনে, উপজেলার শালফা, বথুয়াবাড়ী, হামছায়াপুর, শেরুয়া, শৈল্যাপাড়া, ছোনকা, শুভগাছা, মহিপুর, চক কল্যানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় অনেক খামার এখন বন্ধ আছে। খামারিরা হতাশ হয়ে পড়েছে। খামারীদের পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কিছু কিছু খামারি অন্য প্রজাতির মুরগি পালন করছে।

খামারীরা জানান, ৪ মাস আগে একদিন বয়সের টার্কির বাচ্চা বিক্রয় হতো ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। এখন সেই বাচ্চার দাম হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। আবার কিছু সময়ও বাচ্চার দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বিক্রয় করছেন বলে জানান তারা।

খামারীরা আরও জানান,  ৪০ থেকে ৪৫টি টার্কি মুরগি সপ্তাহে ডিম দিয়ে থাকে ৯০ থেকে ১০০টি কিন্তু খরচ হয় ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা, কিন্তু বাচ্চার দাম না থাকায় খামারিকে লোকসান গুনতে হয় ১৫ শত থেকে ২ হাজার টাকা।

বহুজাতিক কোম্পানীর উৎপাদিত একদিন বয়সের মুরগীর বাচ্চার দাম বৃদ্ধি পেলেও টার্কির একদিনের বাচ্চার দাম বৃদ্ধি না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে খামারিরা। এমন অবস্থা যদি থাকে তাহলে টার্কি খামার বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে মনে করেন খামারিরা। 

তাদের অভিযোগ, একটি চক্র এই বাচ্চা ও ডিম নিয়ে সিন্ডিকেট করে কম দামে ক্রয় করে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেশি দামে বিক্রয় করছে। এতে খামারিরা লোকসান গুনলেও লাভবান হচ্চে ওই চক্রটি।

টার্কি খামারি যোবায়ের হোসেন বলেন, নানা সংকটের মধ্য দিয়ে একজন খামারীকে দিন পার করতে হয়। ভাইরাসজনিত রোগ-ব্যাধির জন্য খামারীকে ২৪ ঘণ্টাই সজাগ থাকতে হয়। এ যেন এক যুদ্ধ ক্ষেত্র। অধিকাংশ খামারী এই যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে। তারপরও যে দু'একজন জয়ী হয়েছেন কিন্তু বাচ্চা ও ডিমের দাম না থাকায় তারও এখন লোকসানের ভয়ে আছেন।

খামারি হাবিবুর, সোহাগ ও ফারুক বলেন, ভাইরাসজনিত রোগে আমাদের খামারের মুরগিসহ অনেকগুলো খামারের মুরগি মারা গেছে। যে সমস্ত খামারগুলোর টার্কি মুরগি মারা গেছে তারা নতুন করে বাচ্চা উঠাবে কিন্তু বাজারে খাবারের দাম বেশি, ডিম ও বাচ্চার দাম কম ও মাংসের চাহিদা তেমন একটা না থাকায় সাহস পাচ্ছে না। খামারীদের এখন পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

টার্কি শিল্প রক্ষায় খামারিরা বলেন, আমরা বারবার সরকারের কাছে দাবি করছি আমরা খামারীরা দেশের মাংস ও ডিমের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। আমরা মনে করি, দেশের টার্কি খামারিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে ডিম, মাংসের চাহিদা ও বিদেশে রপ্তানি করলে এ শিল্প বেঁচে থাকবে।

শেরপুর উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মোঃ রায়হান বলেন, প্রায় ২০০ খামারি এই টার্কি শিল্পের সঙ্গে জরিত। বহুজাতিক কোম্পানীর উৎপাদিত একদিন বয়সের মুরগীর বাচ্চার দাম বৃদ্ধি পেলেও টার্কির একদিনের বাচ্চার দাম বৃদ্ধি না পাওয়ায় লোকসান গুনছে খামারি। একটি চক্র এই বাচ্চা ও ডিম নিয়ে সিন্ডিকেট করে কম দামে ক্রয় করে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেশি দামে বিক্রয় করছে। এতে খামারিরা লোকশান গুনলেও লাভবান হচ্চে ওই চক্রটি। অচিরেই এই সকল সমস্যার সমাধান হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

 

Bootstrap Image Preview