Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ময়লার স্তূপে ৩৩ নবজাতক, বরখাস্ত হচ্ছেন গাইনি বিভাগের প্রধান

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৫:৩৭ PM
আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৫:৩৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাস্টবিন থেকে ৩৩টি অপরিণত নবজাতকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. খুরশিদ জাহান এবং ওই বিভাগের ওয়ার্ডের ইনচার্জ নার্স জোসনা বেগমকে সাময়িক বরখাস্তের আবেদন স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি বৈঠকে বসে। বৈঠক চলে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত। বৈঠক থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটিতে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. জহিরুল হককে প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ডা.ফয়জুল বাসার এবং ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. ইমতিয়াজ উদ্দিন।

বৈঠকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম বাকির হোসেন, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মাকসুমুল হক, উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম বাকির হোসেন জানান, ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. খুরশিদ জাহান এবং ওই বিভাগের ওয়ার্ড ইনচার্জ নার্স জোসনা বেগম ছাড়াও অন্য কারও বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, বৈঠক শেষে ডা. খুরশিদ জাহান এবং ওই বিভাগের ওয়ার্ড ইনচার্জ নার্স জোসনা বেগমকে সাময়িক বরখাস্তের আবেদন স্বাস্থ্য অধিদফতরে ফ্যাক্স যোগে পাঠানো হয়েছে। আবেদনটি অধিদফতর থেকে মন্ত্রণালয়ে যাবে। এরপরই তাদের বরখাস্ত আদেশ কার্যকর হবে।

এদিকে সোমবার রাতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এ ঘটনা জানতে পেরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। পরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম বাকির হোসেনকে ফোনে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের ডাস্টবিন থেকে ৩৩ নবজাতকের মরদেহ ও মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাওয়া যায়। যার অধিকাংশই ছিল বোতলজাত। রাত পৌনে ১০টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহগুলোর সুরতহাল শুরু করে।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতালে জন্ম নেয়া অপরিণত শিশুর মরদেহ কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য মেডিসিনের মাধ্যমে বোতলে ভরে রাখা হয়। ১৫/২০ বছর পূর্বে অপরিণত এসব শিশুর মরদেহ সংরক্ষণ করা হয়। ওই বোতলগুলো গাইনি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত ছিল। তাছাড়া বোতলে থাকা মেডিসিনের মেয়াদও শেষপর্যায়ে থাকায় তা মাটিচাপা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ওয়ার্ড বয়রা কোনো কিছু না বলে হাসপাতালের পেছনে ডাস্টবিনে স্তূপ করে ফেলে রাখে। পরবর্তীতে টোকাইরা সেখান থেকে অপরিণত শিশুর মরদেহ ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের করে নিয়ে যায়। সোমবার রাত ৮টার দিকে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের লোকজন হাসপাতালের ময়লা অপসারণ করতে গেলে জরুরি বিভাগ সংলগ্ন পানির ট্যাঙ্কের নিচ থেকে অপরিণত শিশু এবং মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পায়।

এদিকে ডাস্টবিন থেকে ৩৩ নবজাতকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় কোতয়ালী মডেল থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার রাতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী মো. মিজান বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।

কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছে এসআই মো.সাইদুলকে। দ্রুত তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

Bootstrap Image Preview