সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে বিপুল ও বিলাসবহুল আয়োজনের মাধ্যমে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান। এতে টলোমলো অর্থনীতি ও রিজার্ভশূন্য ইসলামাবাদ যে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল, তা খুব একটা ফলাও করে প্রকাশ পায়নি।
পাকিস্তানি আকাশে যুবরাজের বিমান ঢোকার পরেই সেটির নিরাপত্তায় দুই পাশে সামরিক বিমানের বহর দিয়ে ঘিরে ছিল। রাজকীয় গাড়িবহরের শোভাযাত্রা ও অনুষ্ঠানাদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা সরাসরি সম্প্রচার করে দেশটির টেলিভিশন চ্যানেল।
এতে দুই দেশের মধ্যে দুই হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি ও সমঝোতা সই হয়েছে। ইসলামাবাদের কাছে এখন দুই মাসের আমদানি করার মতো বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আছে।
দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ছে, পাশাপাশি ঋণের আকারও ক্রমাগত ঢাউস হচ্ছে।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে পাকিস্তানের ঋণসহায়তার দেরদরবার ধীরগতিতে এগোচ্ছে। কাজেই বিদেশি বিনিয়োগের জন্য মুখিয়েই ছিল পারমাণবিক শক্তিধর দেশটি।
যুবরাজকে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক নিশান-ই-পাকিস্তানে ভূষিত করেছেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এ ছাড়া মোহাম্মদ বিন সালমানকে স্বর্ণের ধাতু-আবৃত সাবমেশিন গান উপহার দিয়েছেন সিনেটের প্রধান।
ইমরান খান বলেন, সই হওয়া সমঝোতাগুলো দুই দেশের সম্পর্কের বৃদ্ধির প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটি কেবল শুরু।
এদিকে গত বছর সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বৈশ্বিক চাপ ও ক্ষোভের মুখে সৌদি আরবের বিপদের বন্ধুর দরকার ছিল।
পাকিস্তান সন্দেহাতীতভাবে যুবরাজকে অতিবিগলিত শ্রদ্ধা জানিয়েছে। কিন্তু কর্মকর্তারা বলছেন, দুই দেশের এ চুক্তিগুলো অর্থনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
খাশোগি হত্যাকাণ্ডে যুবরাজের ভূমিকা অস্বীকার করা হলেও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সৌদির সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি সই নিয়ে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের বলেন, এটি কোনো দাতব্য না, বিনিয়োগ। এতে দুপক্ষই লাভবান হবে।
রূপকল্প-২০৩০ কৌশল অনুসারে অপরিশোধিত তেল ও উন্নয়ন প্রকল্পের বাইরেও সৌদি আরব তার বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনতে যাচ্ছে।
সৌদি-পাকিস্তানের মধ্যে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় চুক্তিটি সই হয়েছে রোববার। এতে বেলুচিস্তানের গাওধার বিমানবন্দরে এক হাজার কোটি ডলারের পরিশোধনাগার স্থাপন করবে সৌদি কোম্পানি আরামকো। যাতে প্রায় পাঁচ বছর সময় লাগবে।
এ ছাড়া ছোট ছোট চুক্তির মধ্যে রয়েছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস প্ল্যান্ট, বিকল্প জ্বালানি প্রকল্প, খাদ্য ও কৃষি খাতের বিনিয়োগ, যা দ্রুতই ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, আমি পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতে বিশ্বাস রাখি। দেশটির ভালো করার বিপুল সুযোগ রয়েছে।
বেশ কিছু বিনিয়োগ নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। কিন্তু চীন-পাকিস্তানের অর্থনৈতিক করিডরের পর এটিই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।
আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি ও গবেষণা করেন জাহিদ হুসেইন। তিনি বলেন, সৌদি যুবরাজের এ সফরের মজার বিষয়টি হচ্ছে- দুই দেশের সম্পর্ক নতুনমাত্রায় চলে গেছে। কৌশলগত সামরিক সম্পর্ক থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সহযোগিতা- এটি নতুনমাত্রা দিয়েছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে চীনই থেকে যাচ্ছে। কিন্তু সৌদি আরব সেখানে সম্পূরক হিসেবে কাজ করবে।