ভুয়া খবর ও তথ্য প্রকাশের ঘটনায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তদন্ত কমিটি। এতে ফেসবুককে ডিজিটাল গুণ্ডা আখ্যা দিয়ে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। তাই অবিলaম্বে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ এমপিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুক এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন ট্রেন যা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাদের আচরণ ডিজিটাল গুণ্ডার মতো। তারা নিজেদের সব আইনের ঊর্ধ্বে মনে করছে। এমনকি তারা পার্লামেন্টকেও বিভ্রান্ত করেছে। তারা ভুয়া খবর ও তথ্যের ব্যাপারে যে বিবৃতি দিয়েছে তাও সত্য নয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ব্রিটিশ এমপিদেরও অবমাননা করেছেন। তাই অবশ্যই ফেসবুককে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে।
সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ঘটনায় ফেসবুকের ভূমিকা খতিয়ে দেখে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তদন্ত কমিটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক অসন্তোষ সৃষ্টিতে ফেসবুককে ব্যবহার করার অভিযোগ আছে। প্রতিষ্ঠানটি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর ঘৃণা সৃষ্টিতে বিভিন্ন উসকানিমূলক পোস্ট ও ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এসব পোস্ট সরাতে দেরি করে। ফলে তীব্র নিন্দার মুখে প্রতিষ্ঠানটি এ বিষয়ে ক্ষমা চেয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী শীর্ষ কয়েকজন জেনারেলের অ্যাকাউন্ট ও সেনাঘনিষ্ঠ পেজ মুছে ফেলে। কিন্তু তার পরও ফেসবুক রাখাইনে ঘটে যাওয়া রোহিঙ্গা গণহত্যার দায় এড়াতে পারে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
এ ছাড়া গত বছর শ্রীলংকায় ঘটে যাওয়া বৌদ্ধ-মুসলিম দাঙ্গার সময়ও ফেসবুকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ওঠে। এ ক্ষেত্রেও শুধু ক্ষমা চেয়ে প্রতিষ্ঠানটি দায় সেরেছে। শুধু তাই নয় ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্রিটিশ রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের অনলাইন কোম্পানি ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বহু মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির সঙ্গেও ফেসবুক জড়িত বলে প্রমাণ হয়েছে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রতিবেদনে ফেসবুককে নিয়ন্ত্রণ করতে ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে একটি নীতিমালা থাকতে হবে এবং এটি তদারকি করতে স্বাধীন কমিটিও গঠন করতে হবে। এদিকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তদন্ত প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে ফেসবুক। এর মাধ্যমে ফেসবুককে আরও বেশি যথাযথ ও নির্ভুল করা সম্ভব হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।