ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের মৃত আহম্মদ আলী খানের পুত্র মোখলেছুর রহমান খান ও তারই ভাতিজা মুরাদ খানের ড্রাগন ফল চাষ দেখে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লাভজনক এই ড্রাগন চাষে মেতে উঠেছেন চাচা-ভাতিজা। নান্দাইলে তারাই প্রথম আমোদপুর গ্রামের নিজ বাড়ির সামনে ৪০ শতাংশ জমির উপর ১ হাজার ৫৬টি ড্রাগন চারা রোপন করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চার ইঞ্চি স্কয়ার ৬ ফুটের কংক্রিট-সিমেন্টের পিলারের চারদিক ঘিরে ৪টি করে চারা রোপন করে ২৫৬টি পিলারের মাধ্যমে এই বাগান তৈরী করা হয়েছে। দীর্ঘ দিনের টেকসই মাচা হিসাবে বাশের পরিবর্তে গাড়ীর পুরাতন টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিদিনই ড্রাগন বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকে মোখলেছুর রহমান খানের ভাই বাবুল খান। ড্রাগন অন্যান্য উদ্ভিদরাজির মতই খাদ্য সংগ্রহ করে তদোপরি বেশি কিছু নয় প্রাকৃতিক জৈব সার ও কৃত্রিম সার ব্যবহার করা যায়।
তিনি জানান, মোখলেছুর রহমান প্রথমে এই ফল চাষকে সৌখিন হিসেবে ধরে নিলেও পরে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের চিন্তা করে ব্যাপক চারা রোপন করেন। প্রতিটি চারা একশত টাকা থেকে দেড়শত টাকায় ক্রয় করে তা রোপন করেছেন।
তবে উচু জায়গায় চাষ করলে ভালো হয়, কারণ একটি ড্রাগন গাছ প্রায় ৩০/৩৫ বছর ধরে ফলন দিয়ে থাকে। চারা রোপনের দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যেই গাছে ফল দেখা দেয়। বছরে একবার মাত্র ফলন হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি গাছে ফুল দেখা দেয়। তবে সেই ফুল রাতে ফুটে, আবার বৃষ্টি হলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
জুলাই-আগস্ট মাস হচ্ছে এই ফল মৌসুম। প্রতি মৌসুমে প্রতিটি গাছ ২০/৩০টি ফল দেয়। প্রতি পিলারের ৪টি গাছ থেকে ২০/৩০ কেজি ফল সংগ্রহ করা যায়। এই ড্রাগন ফল অনেকটা বিল-ঝিলের শাপলার ভেটের মতো দেখতে হয়। তবে অনেকটা লাল রঙের। এই ফল খুব সুস্বাদু তবে ঔষধী গুণও রয়েছে। বাজারে এর ভালো দাম রয়েছে। প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।
চারা উৎপাদন ও ফল রপ্তানীর বিষয়ে মুরাদ খান বলেন, গাছের কান্ড থেকেই এর চারা সহজেই রোপন করা যায়। বিদেশে এই ফলের বেশ চাহিদা আছে। বাংলাদেশি টাকায় ১৪’শ থেকে ১৫’শ টাকা কেজি দরে এই ফল বিদেশে বিক্রি হয়।
মোখলেছুর রহমান খান জানান, ড্রাগন চাষ ব্যয়বহুল হলেও লাভজনক। প্রথম এক-দেড় বছর লাভের মুখ দেখা যায়না। তবে ড্রাগন ফল চাষের পাশাপাশি বাগানে অন্যান্য বীরুৎ জাতীয় গুল্ম শস্যাদিও চাষ করা যায়।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে আমার ৫০/৬০ হাজার টাকা খরচ হলেও এখন লাভজনক অবস্থায় আছি। নান্দাইলের বিভিন্ন জায়গা থেকে অন্যান্যরা এর চাষ দেখতে এবং এই ফল ও চারা ক্রয় করতে আসে। আশা করি ড্রাগন চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিসার নাসির উদ্দিন জানান, কৃষকদের মাঝে এরকম নতুন নতুন ফসল চাষাবাদে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা তাদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দিয়ে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে চাই।