Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অপারেশন থিয়েটারে রোগী রেখে নিরবতা পালন! দেশপ্রেম না বাড়াবাড়ি?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৮:১৫ PM
আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৮:১৫ PM

bdmorning Image Preview


অক্সিজেন মাস্ক নাকে অপারেশন থিয়েটারে শুয়ে আছেন রোগী। পথ দুর্ঘটনায় হাড় ভেঙেছে চোয়ালের। বোন প্লেটিং করা হবে। কিন্তু অস্ত্রোপাচারে হাত লাগানোর আগে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে পড়লেন চিকিৎসক, অ্যানাস্থেটিস্ট, নার্সসহ অপারেশ থিয়েটারের সব কর্মী।

বেশির ভাগের হাত সামনে ঝোলানো, জড়ো করা। মাথা নোয়ালেন সকলে। নীরবতা পালন করলেন এক মিনিট। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় নিহত জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। তার পরে শুরু হল অস্ত্রোপচার।

কেউ বলছেন দেশভক্তি। কেউ বলছেন বাড়াবাড়ি। ‘আদিখ্যেতা’ বলতেও ছাড়ছেন না অনেকে। সব মিলিয়ে ভারতের ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজে শনিবারের এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন তুমুল বিতর্ক।

প্রশ্ন উঠেছে, গোটা দেশের মানুষ শোক জানাচ্ছেন নানাভাবে। কিন্তু সীমান্তে বা স্পর্শকাতর এলাকায় মোতায়েন জওয়ানেরা কি দেশরক্ষার দায়িত্ব ভুলে পলকের জন্যও মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন শোকে? চিকিৎসকের পেশাও তো তেমন! যেখানে রোগীর মরা-বাঁচা তাদের হাতে। প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান। তাদের কি এটা করা সাজে!

কেন নয়? ফোনে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন ওই অপারেশন থিয়েটারের অন্যতম চিকিৎসক মানিক সাহা। এরপর বললেন, ‘‘ফুটবল মাঠে যদি ফুটবলাররা নিহত জওয়ানদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন, বিধায়ক-মন্ত্রীরা যদি বিধানসভায় কাজ শুরুর আগে তা করতে পারেন— তবে একজন সার্জন হয়ে আমি তা করলে অন্যায়ের কী আছে? শ্রদ্ধাটাই আসল।’’

আরও জানালেন, কিছুক্ষণ আগে তিনিও একটি ফুটবল মাঠে ছিলেন। সেখানে খেলা শুরুর হবার আগে ফুটবল সামনে রেখে সবাই শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন।

মানিকবাবু জানতে চান, ‘‘আমরা তো সার্জন, শোক পালন কোথায় করব? রাস্তায় নয় নিশ্চয়ই!’’ কিন্তু রোগী যে তখন ওটি-র বেডে?

মানিকবাবুর জবাব, ‘‘শোকপালন করেছি অপারেশন শুরুর আগে। রোগীকে অ্যানেস্থশিয়া করে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো হয়েছিল। রোগীর প্রতি আমরা যথেষ্ট যত্নবান ছিলাম। তিনি স্বাভাবিক ছিলেন।’’

ইন্ডিয়া ম্যাডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সভাপতি শঙ্কর রায়ও দোষের কিছু দেখছেন না। বলেছেন, ‘‘মানুষ কত নেগেটিভ প্রচার চালায়! এত জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। দেশপ্রেমিক হিসেবে তাঁদের প্রতি সকলেরই সহানুভুতি থাকা উচিত। এই পরিস্থিতিতে এমন বিতর্ক তৈরি করা বা প্রশ্ন তোলাটাই লজ্জার।’’ নিজে তিনি ছবিটি দেখেননি।

এমনও বলেন, ‘‘কত রকম কারচুপি করেও ছবি দেওয়া যায় আজকাল!’’ পরে চিকিৎসক নিজেই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মুখ খোলায় এ নিয়ে আর সন্দেহের অবকাশ থাকেনি।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, সফল অস্ত্রোপচারের পরে ওই রোগী এখন ভাল আছেন। আগামীকাল তার ছুটি হতে পারে। রোগী বা তার আত্মীয়রা কেউ কোনও অভিযোগ করেননি বিষয়টি নিয়ে। শুধু সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আনন্দবাজার পত্রিকা।

Bootstrap Image Preview