চার বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মাকে ফিরে পেয়ে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের ঘটনা ঘটেছে নওগাঁর সাপাহার উপজেলায়।
সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার দিঘীর হাট এলাকায় এই দৃশ্যের ঘটনাটি ঘটে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুন মাসের দিকে দিঘীর হাট বাজার এলাকায় অচেনা মস্তিস্ক বিকৃত এক বৃদ্ধার আগমন ঘটে। দীর্ঘ সাত-আট মাস ধরে ওই বৃদ্ধা বাজার এলাকার বিভিন্ন দোকান ঘরের ছাউনির নিচে রাত কাটিয়ে দিনের বেলায় যেখানে সেখানে খাবারের সন্ধ্যানে বেরিয়ে পড়তো। আবার রাতের বেলায় সে বাজার এলাকায় এসে রাত্রি যাপন করতো।
মাঝে মধ্যে বাজার এলাকার আরিফ ফটোস্ট্যাট দোকান মালিক মো: রমজান আলী ওই বৃদ্ধার খোঁজ খবর নিতো। বৃদ্ধা বেশি কথা না বলায় দীর্ঘ দিনের খোঁজ খবরের সাথে সাথে রমজান আলী ওই বৃদ্ধার নিকট থেকে বিভিন্ন সময়ে তার নাম, কখনো তার গ্রামের নামসহ তার ঠিকানা খোঁজার চেষ্টা করতো।
অবশেষে গত রবিবার বিকেলে সে তার পূর্ণ ঠিকানা সংগ্রহ করে এবং পরবর্তীতে নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানায় মোবাইলে যোগাযোগ করে বৃদ্ধার দেওয়া ঠিকানা খুঁজে পান। এরপর থানার মাধ্যমে তিনি ওই বৃদ্ধার ছেলের সাথে কথা বলতে সক্ষম হন।
পরে মায়ের খবর পেয়ে বৃদ্ধার ছেলে তাৎক্ষণিক নওগাঁর সাপাহারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সোমবার সকালে তিনি সাপাহারে পৌঁছে দিঘীর হাট এলাকায় গিয়ে বৃদ্ধার সামনে দাঁড়ালে মা-ছেলের মধ্যে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এসময় উপস্থিত দর্শক হতবাক হয়ে যায় বৃদ্ধা ও তার ছেলের মায়া-মমতা দেখে। তারা একে অপরের সাথে দীর্ঘক্ষণ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
পাগল বৃদ্ধার ছেলে সোহেল রানা (২৮) জানান, বিগত সাত বছর পূর্বে তার মায়ের মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটে। সে সময় তার মা নিজের সন্তান মরিয়ম (৬) নামের এক মেয়ে ও আব্দুল কাদের (৩) নামে এক ছেলেকে সাথে নিয়ে বাড়ি হতে বের হয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল।
অনেক খোঁজা-খুঁজির প্রায় তিন বছর পর ভারতের আসাম রাজ্য থেকে সোহেল রানা তার মাকে উদ্ধার করতে পারলেও বোন মরিয়ম ও ভাই কাদেরকে হারিয়ে ফেলে। তারপর থেকে তারা আজও নিখোঁজ রয়েছে। ভারত থেকে উদ্ধারের মাত্র কয়েক মাস পর তার মা আমিনা বেগম আবারো বাড়ি থেকে সকলের অজান্তে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এরপর ছেলে সোহেল রানা ও তার পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজা-খুঁজি করে মাকে আর ফিরে না পেয়ে তাকে ফিরে পাওয়ার আসা ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে বসেই ছিল।
হঠাৎ দীর্ঘ চার বছর পরে নওগাঁ জেলার সাপাহার হতে তার মায়ের বর্ণনাসহ মোবাইল ফোন পেয়ে আর স্থির থাকতে পারেনি, সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে গেছেন নওগাঁর সাপাহার উপজেলার দিঘীর হাট এলাকায়। আর এখানে এসে ঠিক খুঁজেও পেয়েছেন তার গর্ভধারিণী মাকে। সোহেল রানা তার মাকে খুঁজে পেয়ে ধন্য হয়েছেন সে আর তার মাকে হারিয়ে যেতে দেবেনা বলে জানান এই প্রতিবেদককে।
পাগল বৃদ্ধা মহিলাও তার ছেলেকে ফিরে পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত ছিল। সে কখন যাবে তার নিজ গন্তব্যে পাগল অবস্থায় নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় এলো-মেলোভাবে বলছিলেন বৃদ্ধা আমিনা বেগম। মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধা মহিলা লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার টামটা গ্রামের মোঃ শামসুল হক এর স্ত্রী। নিজের আরেক দুই সন্তানকে হারিয়ে বর্তমানে এক ছেলে সোহেল রানা ও স্বামী শামসুল হক রয়েছে তার পরিবারে। সোমবার দুপুর দেড়টার সময় তারা দিঘীর হাট এলাকা থেকে রাজশাহীর বাসে উঠে নিজ গন্তব্যে রওয়া হন।