Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিদায় বেলায় পাহাড়ের দেশে

ছাফওয়ান উল্লাহ, নোবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১২:৫৭ PM
আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১২:৫৭ PM

bdmorning Image Preview


‘ভ্রমণ শেষে নিজ বাড়িতে ফেরার আগ পর্যন্ত কেউ বুঝতে পারে না ভ্রমণ কত সুন্দর ছিল।’ লিন ইউতাং এর এই উক্তিটি আসলেই সত্যি। ভ্রমণের সময়ে কত বেশী আনন্দ করেছি, তখন কিন্তু সেটা অতটা টের পাইনি। বাসায় ফিরে যখন ভ্রমণের স্মৃতিগুলো রোমন্থন করতে লাগলাম, এখন বুঝতে পারছি ভ্রমণের মজা আর সৌন্দর্য কতটা  উপভোগ্য ছিল।

রবিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্ত্বর থেকে বাস ছেড়ে যায় সাজেকের উদ্দ্যেশ্যে। সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে গিয়ে পৌঁছাই খাগড়াছড়ি শহরে। সকালে হালকা নাস্তা করেই সেখান থেকে চাঁদের গাড়িতে করে সোজা সাজেকের উদ্দ্যেশ্যে গাড়ি চাড়ল। পথেই গাড়ি থামিয়ে হাজাছড়ি ঝর্ণায় গেলাম। কিছুক্ষণ অবস্থান করে ব্যক্তিগত আর গ্রুফ ছবি তুলে আবার চাঁদের গাড়িতে। শুরু হলো অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন পর্ব। রাস্তা একদিকে আঁকাবাঁকা অন্যদিকে উঁচুনিচু। এরিমধ্যে গাড়ি চলা। একেকসময় মনে হয় এই বুঝি পড়ে যাচ্ছি। জীবনের শেষপর্ব বুঝি এখানেই শেষ। মনের গহিনে যেমনি নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আশংকা কাজ করছে তেমনি আবার সীমাহীন আনন্দও পাচ্ছি।

লাও জু বলেছিলেন "একজন ভালো ভ্রমণকারীর কোনো নিদিষ্ট পরিকল্পনা এবং গন্তব্যে পৌছানোর উদ্দেশ্যও থাকে না।" তবে আমরা ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছিলাম কিন্তু গন্তব্যে পৌছানোর উদ্দেশ্য আমাদেরও ছিল না। মাস খানেক আগে থেকেই আমাদের ভ্রমণের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। কয়েকটি স্বার্থহীন প্রাণীর নিঃস্বার্থ ত্যাগ আর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবশেষে ভ্রমণটি রূপায়িত হল।

রাস্তার পাশেই বিশাল বিশাল খন্দকগুলো একদিকে ভয় দেখাচ্ছে, অন্যদিকে মনোমুগ্ধকারী বিভিন্ন প্রজাতির আকর্ষণীয় গাছপালা আর উপরিভাগে বহমান রংধনুর মত দেখতে আকাশের বিশালতা ভয় কাটিয়ে দিচ্ছে। পথ যতই এগুচ্ছে ততই মনে হচ্ছে রাস্তা, গাছ, কূপ, পাহাড় আর আকাশের সাথে আমি খেলে যাচ্ছি। একসময় আমরা উপরে উঠে যাই, মনে হয় আকাশকে ধরে ফেলছি আর বিশাল বিশাল গাছপালাগুলো আমাদের অনেকখানি নিছে অবস্থান করছে। আবার যখন গাড়িটি শাঁ করে নিছে নেমে যায় আর কলিজা বের হওয়ার উপক্রম হয়, তখন মনে হয় আকাশকে হাতের নাগালে পেয়েও বুঝি ধরতে পারলামনা, গাছগুলো আমাদের থেকে অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে।

নানানরকম ভাবনা ভাবতে ভাবতে চলে এলাম সাজেকে। উঠি আগেই বুকিং দেয়া 'ফ্যারাডাইজ সাজেক' হোটেলে। দুপুরের খাবার খেয়ে চাঁদের গাড়িতে করেই কংলাক পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা। গাড়িতে করে কংলাক পাহাড়ের দিকে যাচ্ছি আর ভাবছি কিছুক্ষণের মধ্যেই এভারেস্ট জয় করতেছি আমরা। রাস্তাটি এতটা ভয়ংকর ছিল। গাড়ি গিয়ে থামল কংলাক পাহাড়ের পাদদেশে। সবাই হেটে হেটে পাহাড়ের উপরে উঠে পৃথিবীর আশ্চর্যজনক বৈশিষ্ট্য উপভোগ আর সেল্পিবাজি করে আবার হোটেলে ফেরা। ফেরার পথেই হেলিপেডে নেমে সূর্যাস্ত দেখা। সন্ধ্যার পর হোটেলে। রাতে মজমাস্তি। সকালে আবার হেলিপেডে সূর্যোদয় দেখা।

পাঁচ তারিখ সকালে নাস্তা করে বেশকিছু সুখস্মৃতি নিয়ে চাঁদের গাড়িতে উঠি। পাহাড়ের অন্দরমহলের উঁচুনিচু আঁকাবাঁকা রাস্তা আর অপরিচিত সুন্দর সুন্দর গাছপালা দেখতে দেখতেই গন্তব্যে যাত্রা।

আমরা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৩য় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা হারিয়ে গিয়েছিলাম পাহাড়ের দেশে, ঘুরে এলাম নতুন কিছু যায়গা, জমা হল নতুন কিছু অভিজ্ঞতা।

মনশ্চক্ষুকে বলছি, যদি আরও কিছু সময় থাকতে পারতাম সীমান্তের ধারে অবস্থিত রাঙ্গামাটির ছোট্ট এই পল্লিপরিবেশে। ওই কল্পনা করতে করতেই অল্পক্ষণের মধ্যেই শেষ হয়ে গেল সাজেকের পর্ব। তবে মনেতে এঁকে রেখেছি কখনো যদি সময় পাই আসব আবার এই পল্লিজীবনে। লুটিয়ে নেব তার সবটুকুনি।

Bootstrap Image Preview